ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নদী রক্ষায় মেগা প্রকল্প

প্রকাশিত: ১০:০৬, ২০ জুন ২০১৯

নদী রক্ষায় মেগা প্রকল্প

সমুদ্র হক ॥ উত্তরবঙ্গের নাব্য হারানো চার নদীতে জোয়ার এনে নদীমুখী বহুমুখী উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে ২ হাজার ২শ’৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মেগা প্রকল্পটি ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়ে দ্রুত বাস্তবায়নে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রথমে নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং তারপর তীর সংরক্ষণ করা হবে। চলতি মাসের (জুন) মধ্যেই তীর সংরক্ষণের টেন্ডার আহ্বান করা হবে। নদী ড্রেজিংয়ের বিষয়টি জটিল হওয়ায় আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হবে জুলাই মাসে। সব কিছু ঠিক থাকলে দরপত্র আহ্বানের দুই মাসের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে। এমনটিই আশাবাদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)। সেই হিসেবে আগামী সেপ্টেম্বরেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়ে চার বছরের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির নাম ‘বাঙালী-করতোয়া-ফুলজোড়-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং পুনর্খনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প।’ বগুড়াকে কেন্দ্রবিন্দু করে উত্তরে গাইবান্ধা ও দক্ষিণে সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে বয়ে যাওয়া ২শ’ ১৭ কিলোমিটরের মৃতপ্রায় নদীগুলোর নাব্য ফিরিয়ে গভীরতা ও স্রোতধারা বাড়ানো হবে। বাঙালী, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগর নদী পূর্বাবস্থার ( জোয়ারের নদী) ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং পুনর্খননের পর নদীর প্রবাহ ধরে রাখতে তীর সংরক্ষণ করা হবে। এভাবে চারটি নদীর জোয়ারের উত্তালে সংযুক্ত বড় নদী যমুনার স্রোতধারা বেড়ে আরও অন্তত পাঁচটি নদী পূর্বের ধারা ফিরে পাবে। নদীগুলো যে ধারা হারিয়েছে। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নদী যমুনা ও শাখা নদীগুলো কখনও প্রাকৃতিক কখনও মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগের ফেরে পড়তে হচ্ছে। ভাঙন, বালিয়ারি, মৎস্য আধার রুদ্ধসহ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে কখনও বসতভিটা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চর পড়ে নৌপথ বন্ধ হচ্ছে। কৃষক, জেলে পরিবার, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বালু ও পলি জমে নদীগুলোর তলদেশ উঁচু হয়ে অল্প বর্ষায় তীরে পানি উঠে ছড়িয়ে পড়ে বন্যা অবস্থার সৃষ্টি করছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। হারাচ্ছে মৎস্য সম্পদ। উজানের নদী যমুনা বগুড়ার সোনাতলা সারিয়াকান্দি ও ধুনটের ওপর দিয়ে বয়ে ভাটির দিকে গেছে। পানি বিজ্ঞানীগণ এই নদীর স্রোতধারা ও গতিপথ আজও বুঝে উঠতে পারেন না। সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। নদীর তীর রক্ষায় হার্ড পয়েন্ট রিভেটমেন্টসহ শক্ত কাঠামো নির্মিত হয়েছে। এতে চিরস্থায়ী কোন বন্দোবস্ত গড়ে তোলা যায়নি। এই অবস্থায় যমুনার শাখা নদীগুলোকে খনন ও তীর রক্ষা করে ভর বছর নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ও গতিপথ ঠিক রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি ও এলাই নদীর মিলনস্থলে বাঙালী নদীর উৎপত্তি। বাঙালী উত্তর থেকে দক্ষিণে বগুড়ার সোনাতলা সারিয়াকান্দি ধুনট উপজেলার মধ্যে বয়ে শেরপুরের খানপুরে করতোয়া নদীতে মিশেছে। এরপর সিরাজগঞ্জের নলকায় গিয়ে ফুলজোড় নাম ধারণ করে শাহজাদপুর উপজেলার দক্ষিণে বাঘাবাড়িতে হুরাসাগর নদীত মিশে হুরাসাগর নাম নিয়েই যমুনায় মিশে। এই চার নদী মৃতপ্রায় হওয়ায় যমুনার স্রোতধারার ব্যত্যয় ঘটেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যমুনার স্রোতধারা ও গভীরতা প্রমত্তায় উপনীত হয়ে উৎপত্তি স্থলের প্রশস্ততা ৯০ মিটার থেকে একশ’ মিটার এবং শেষ প্রান্তে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ মিটারের মধ্যে থাকবে। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথের মধ্যে গাইবান্ধা সীমানায় ২৪ কিলোমিটার, বগুড়া সীমানায় ৯৯ কিলোমিটার, সিরাজগঞ্জে ৯৪ কিলোমিটার অংশ ড্রেজিং করা হবে। এর সঙ্গে ভাঙনপ্রবণ চিহ্নিত বগুড়ার ৩২টি পয়েন্টে প্রায় ২০ কিলোমিটার, সিরাজগঞ্জের ২২টি পয়েন্টে ১৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার অংশে সিসি ব্লক দিয়ে তীর সংরক্ষণ করা হবে। তিনি জানান, ড্রেজিং কাজটি কঠিন। অভিজ্ঞ ঠিকাদারদের দ্বারা এই কাজ করা হবে। যাতে শত বছরের টেকসই হয়। ড্রেজিংয়ে সময় লাগবে দুই বছর। তারপর তীর সংরক্ষণ করতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। মোট চার বছরে মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়ে উত্তরবঙ্গের তিন জেলার সঙ্গে আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে। বিশেষ করে বন্যানিয়ন্ত্রণ করে কৃষি ভূমির ফসল রক্ষা, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়িয়ে ভূস্তর নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাছের আধার ঠিক রাখা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা যাবে। একই সঙ্গে যে নৌরুটগুলো বন্ধ ছিল সেগুলো ফের চালুু হয়ে নদী কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ধারা সৃষ্টি হবে। আরেক সূত্র জানান, সরকার দীর্ঘমেয়াদী যে ব দ্বীপ (ডেল্টা) প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে এর চার নদী রক্ষা প্রকল্প পরবর্তী সময়ে ডেল্টার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
×