ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোঃ সেলিম আদ্-দীন ;###;প্রধান শিক্ষক;###;শিকড় আইডিয়াল স্কুল;###;১২২, মনেশ্বর রোড, ঝিগাতলা, ঢাকা।;###;মোবাইল: ০১৯১৪২০৪২৯৩

জেএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১৯ জুন ২০১৯

জেএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিকড় একাডেমির পক্ষ থেকে তোমাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। কবিতার প্রশ্ন উত্তর করার জন্য কবিতাটির চরণ যত বেশি বিশ্লেষণ করে কবির মনোভাব ও বক্তব্য আয়ত্তে আনতে পারবে, মানসম্মত উত্তর লিখা তত সহজ হবে। এক কথায়, মানসম্মত উত্তর লিখে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তিতে কবিতার চরণ বিশ্লেষণ করে আয়ত্তে আনার বিকল্প নেই। বিশেষ করে সৃজনশীল প্রশ্নের ‘খ’ নম্বরের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের যথাযথ উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে কবিতার প্রত্যেকটি চরণের ব্যাখ্যা ভালভাবে শিখতে হবে। আজ তোমাদের জন্য ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার চরণ বিশ্লেষণ করা হলো, যা তোমাদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক হবে। আবার আসিব ফিরে -জীবনানন্দ দাশ কবিতার চরণ বিশ্লেষণ ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়’ প্রকৃতির নিয়মে কবিকে একদিন এ ধরিত্রীর আঁচল ছিন্ন করে চিরতরে বিদায় নিতে হবে। কবি মনে করেন, যখন তার মৃত্যু হবে তখনও দেশের সঙ্গে তার মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি আবার তার প্রিয় ধানসিঁড়ি নদীর তীরে ফিরে আসবেন। অপরূপ এই বাংলাকে কবি খুব ভালবাসেন। ধানসিঁড়ি নদীটিও তার খুব প্রিয়। মৃত্যুর পরও তিনি এদেশের সৌন্দর্য ভুলতে পারবেন না। তাই মায়া আর ভালবাসার টানে তিনি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে এই বাংলায় আবার ফিরে আসার ব্যাকুল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে, মৃত্যুর পরে হয়তো মানুষ হয়ে কবি ফিরে আসতে পারবেন না। কবি কল্পনা করেছেন মৃত্যুর পর হয়তোবা শঙ্খচিল ও শালিক পাখির বেশে আবার তার প্রিয় বাংলায় ফিরে আসবেন। শঙ্খচিল এক ধরনের সাদা চিল। হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কবি ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখেছেন। কবি নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশকে নবান্নের দেশ বলেছেন। নবান্ন অর্থ নতুন ভাত। কার্তিক মাসে ঘরে নতুন ধান তুলে কৃষকরা নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠে। কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়, কার্তিক মাসের শেষ থেকেই এ দেশের গ্রাম অঞ্চলে বেশ কুয়াশা পড়ে। কবি কাঁঠাল গাছের ছায়ায় কুয়াশার বুকে ভেসে আসতে চেয়েছেন বাংলার শীতল পরশ মাখানো প্রকৃতিকে আলিঙ্গন করার জন্য। হয়তো বা হাঁস হব- কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, কবি কল্পনা করেছেন বাংলার কোন কিশোরীর প্রিয় হাঁস হয়ে ফিরে আসবেন। হাঁসের লাল পায়ে কিশোরী আদর করে নিজের ঘুঙুর পরিয়ে দিয়েছে। ঘুঙুর হলো নূপুর। মেয়েদের পায়ের অলঙ্কার। সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে, কবি হাঁস হয়ে আবার বাংলায় ফিরে আসার স্বপ্ন বুনেছেন। জলে ভেসে আছে কলমি লতা। তার সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে বেগুনী রঙের কলমি ফুল। কলমির হালকা গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে কবি হাঁস হয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেবেন। আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালবেসে; বাংলাদেশের প্রকৃতির সবকিছুকে কবি খুব ভালবাসেন। এখানকার নদী, মাঠ, খেতকে তিনি এতই ভালবাসেন যে, সেই ভালবাসার টানে আবার ফিরে আসতে চান। জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলায় এ সবুজ করুণ ডাঙায়, নদীমাতৃক বাংলাদেশকে কবি জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা বলেছেন। নদীর অঙ্গে জল ভরা থাকে। তাই কবি নদীকে জলাঙ্গী বলেছেন। কবি বাংলার নদীকে ভালবাসেন। ডাঙাকেও ভালবাসেন। ডাঙা হলো শুকনো জায়গা, যা সবুজে আবৃত। আবার কখনও কখনও মানুষের বেদনার শরিক হয়ে তা করুণ। সারা বাংলায় অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল ছড়িয়ে আছে। এগুলোর ঢেউয়ের আঘাতে তীর ভাঙে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। বাংলার এই করুণ ডাঙায় দুঃখী মানুষের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য কবি জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেসে এদেশে ফিরে আসবেন। হয়ত দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে বাংলার প্রত্যেকটি জিনিসকে কবি হৃদয় দিয়ে ভালবাসেন। সুদর্শন এক ধরনের গোবরে পোকা। সন্ধ্যা বেলায় বাতাসে উড়ে বেড়ানো সুদর্শনের রূপ নিয়ে কবি বাংলায় ফিরে আসবেন। হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে লক্ষ্মীপেঁচা সুলক্ষণযুক্ত পেঁচা। কবি কল্পনা করেছেন একদিন হয়তো লক্ষ্মীপেঁচার রূপ নিয়ে ফিরে আসবেন তাঁর প্রিয় বাংলায়। তখন শিমুলের ডালে যে লক্ষ্মীপেঁচা ডাকবে তা আসলে লক্ষ্মীপেঁচা নয়। লক্ষ্মীপেঁচার রূপ ধরে কবির নিজের ফিরে আসা। হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে বাংলার প্রত্যেকটা দৃশ্যই কবির খুব ভাল লাগে। উঠানের ঘাসে শিশু খইয়ের ধান ছড়িয়ে ফেলছে, এ দৃশ্যও কবির কাছে অনেক আবেদনময়। কবি এই রূপেই আবার ফিরে আসতে চেয়েছেন। রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে/ ডিঙা বায় রূপসা খুলনা শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত একটি নদীর নাম। এ নামে ঝালকাঠি জেলায়ও একটি ছোট নদী আছে। কবি রূপসা নদীর ঘোলা জলে ছেঁড়া পাল উড়িয়ে ডিঙি বাওয়া কিশোর হয়ে বাংলায় আবার ফিরে আসার কল্পনা করেছেন। রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে/দেখিবে ধবল বক সন্ধ্যার দিকে অস্তমিত সূর্যের রঙিন আলোয় আকাশে ছড়ানো মেঘগুলোও রঙিন হয়ে যায়। দিনের শেষে সাদা বকের দল সেই রাঙা মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে বা বাসায় ফিরে আসছে। কবি কল্পনা করেছেন এই বকের দলের মাঝেও কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে। বাংলার সব অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এই বাংলার রূপসৌন্দর্যে কবি জীবনানন্দ দাশ মুগ্ধ। প্রিয় জন্মভূমির তুচ্ছ বিষয়গুলো তার দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি শঙ্খচিল, ভোরের কাক, হাঁস, লক্ষ্মীপেঁচা, সুদর্শন হয়ে বাংলার বুকে বারবার ফিরে আসতে চান এবং বাংলার রূপ- সৌন্দর্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চান। মৃত্যুর পর আবার ফিরে এসে কবি এ সবের মাঝেই নিজের অস্তিত্ব ফিরে পেতে চান। *পরবর্তী সংখ্যায় আবার আসিব ফিরে কবিতার সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনী প্রশ্নোত্তর থাকবে।*
×