ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেক্সিকোর ওপর কেন এই মার্কিন শুল্ক

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৯ জুন ২০১৯

মেক্সিকোর ওপর কেন এই মার্কিন শুল্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩০ মে ঘোষণা করেছেন যে ১০ জুন থেকে মেক্সিকোর সকল পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। এই শুল্ক পরবর্তী প্রতিমাসে ৫ শতাংশ হারে বাড়তে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না অক্টোবর মাসে তা ২৫ শতাংশে পৌঁছায়। ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের খবরটি বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেদ মেক্সিকোর মুদ্রা পেসোর দামে ধস নামে। মেক্সিকোর একটি প্রতিনিধিদল সমস্যা সমাধঅনের খোঁজে ওয়াশিংটনে ছুটে যায়। বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাডর সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্পকে খোলা চিঠি দেন এবং তাতে স্বাক্ষরের আগে ‘আপনার বন্ধু’ শব্দ দুটি উল্লেখ করেন। ট্রাম্পের ঐ ঘোষণায় মেক্সিকোর এমন প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক। ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পিছনে তার মেক্সিকো বিরোধিতা যথেষ্ট কাজে দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন মেক্সিকো এমন এক জায়গা সেখানে আমেরিকার সব ভাল চাকরি গুলি চলে যায় এবং সেখান থেকে সব খারাপ অভিবাসী চলে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১৫ শতাংশ পণ্য মেক্সিকোয় রফতানি হয়। অন্যদিকে মেক্সিকোর ৮০ শতাংশ রফতানি পণ্য যায় আমেরিকায়। তবে যে ইস্যুটি ট্রাম্পের এই কঠোর পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করেছে তাহলো যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে মধ্য আমেরিকার অভিবাসীদের সংখ্যার নাটকীয় বৃদ্ধি। মে মাসে আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তে দৈনিক ৪৩০০ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছিল। অথচ ২ বছর আগে প্রতি সপ্তাহে অনুরূপ সংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করা হতো। মধ্য আমেরিকা থেকে লোকজন আমেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছে এটা মোটেও মেক্সিকোর দোষ নয়। যারা পাড়ি জমাচ্ছে তাদের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হন্ডুরাস, এল সালভাদর এবং বিশেষ করে গুয়াতেমালায় খরা, দারিদ্র্য ও সহিংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্যই করছে। এই তিনটি দেশের বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে ট্রাম্প গত মার্চ মাসেই মার্কিন সাহায্য বন্ধ করে দেন। কিন্তু মেক্সিকোর বিরুদ্ধে কেন এই ব্যবস্থা? ট্রাম্পের যুক্তি হলো এই লোকগুলি মেক্সিকো দিয়েই আসছে অতি স্বাচ্ছন্দ্যে। মেক্সিকো এই লোক পাচার বন্ধে তেমন কিছুই করছে না। পেসোর মূল্যমান পড়ে যাওয়ায় ৫ শতাংশ শুল্কের আঘাত অতটা গায়ে লাগার কথা নয়। তবে শুল্ক ২৫ শতাংশ হলে মেক্সিকোর ৩৫ হাজার কোটি ডলারের রফতানির ওপর মারাত্মক আঘাত আসবে। দেশটির অর্থনীতি ইতোমধ্যে চাপের মুখে রয়েছে। জিডিপি এ বছরের প্রথম তিন মাসে কমে গেছে। সেটা আরও হ্রাস পেলে কর খাতে রাজস্ব আয় মার খাবে এবং প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাডারের উচ্চাভিলাসী ব্যয়ের অঙ্গীকারগুলি রক্ষা করা যাবে না। তাই অবাক হবার কিছু নেই যে মেক্সিকো আলোচনায় বসতে উদগ্রীব। দেশটির পররাষ্ট্র সচিব এবরার্ড আমেরিকায় গিয়ে ভবিষ্যতে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কঠোরতর করার এবং আগামী ১২ মাসে ২৫ কোটি ডলার ব্যয় করে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেবেন। তবে শুধু সেই প্রতিশ্রুতিতে ট্রাম্পের মন ভিজবে বলে মনে করার কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র চায় মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলে আমেরিকার সঙ্গে দেশটির সংযোগকারী ২শ’ কিলোমিটার চওড়া সঙ্কীর্ণ ভূখ- দিয়ে লোকজন যাতে আমেরিকায় না যায় সেজন্য সেখানে টহল আরও জোরদার করা হোক। মেক্সিকোর অনেকে মনে করে যে তাদের দেশটি ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন প্রচারাভিযানের শিকার। ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য পেন্টাগন থেকে অর্থ এই খাতে ব্যয় করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই চেষ্টা প্রতিহত করতে মামলাও করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৩ জুন এক বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। নির্বাচনী বছরটিতে ট্রাম্প যদি দেয়াল নির্মাণ করেন তাহলে তার সমর্থকরা নিঃসন্দেহে আনন্দিত হবেন। তিনি তখন এমনও বলতে পারেন যে দেয়াল নির্মাণের জন্য মেক্সিকোর কাছ থেকে সরাসরি খরচ আদায় করতে না পারলেও শুল্কের মাধ্যমে ঐ দেশটির কাছ থেকে খরচ তুলে নেয়া হচ্ছে। তবে বাস্তব অবস্থা হলো মার্কিন করদাতাদের কাছ থেকেই আসলে দেয়াল নির্মানের খরচ আদায় করা হবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×