ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘সেমিতে খেলার ভাল সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের’

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৯ জুন ২০১৯

‘সেমিতে খেলার ভাল সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের’

রুমেল খান ॥ বাবা আব্দুর রাজ্জাক সোনা মিয়া ছিলেন খ্যাতনামা হকি খেলোয়াড়। তারই সুযোগ্য সন্তান রাসেল মাহমুদ জিমি। গত ৫ মে জাতীয় হকি দলের তারকা এই খেলোয়াড় ৩২-এ পা দিলেন। শুনলে অবাক হবেন নিজের বয়সের অর্ধেক সময়ই অর্থাৎ ১৬ বছর ধরেই তিনি সুনাম-দাপটের সঙ্গে খেলছেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে। ১৯৯৮ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছিলেন জিমি। এই প্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। যিনি এখন ইংল্যান্ডে, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে মাঠ মাতাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে। সাকিব প্রসঙ্গে সেন্টার ফরোয়ার্ড জিমি বলেন, ‘বিকেএসপিতে সাকিব আমার তিন ব্যাচ জুনিয়র ছিল। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ও যেভাবে খেলছে তাতে আমি মোটেই অবাক হইনি। কেননা সাকিব তো আজকের খেলোয়াড় না, এখন থেকেই তো এমন খেলে না, বহুবছর ধরেই এ রকম পারফর্মেন্স করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে প্রায়ই সাকিবকে নিয়ে মিডিয়া এবং ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই যেমন বিশ্বকাপ খেলতে যাবার আগে ও যে অফিসিয়াল ফটোশূটে অংশ নিল না এটা নিয়ে অনেকেই আজেবাজে কথা বলেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ছবি তোলাটাই কি মুখ্য, না ভাল খেলাটাই আসল? সাকিব কি ভাল খেলছে না? যতদূর জানি ও এখনই টুর্নামেন্টের টপ রান স্কোরার হয়ে গেছে। যেভাবে খেলে যাচ্ছে সেটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে ও-ই যে প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর সেই যোগ্যতা তার অবশ্যই আছে।’ মায়ের অলঙ্কার বিক্রির টাকায় বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া জিমি এবার বিশ্বকাপের বেশিরভাগ খেলাই দেখতে পারেননি। কারণটাও অবশ্য জানান জনকণ্ঠকে, ‘আমি এমনিতেই ক্রিকেটটা একটু কম দেখি। ফুটবলটাই বেশি দেখি। তার ওপর এখন আছি জাতীয় দলের ক্যাম্পে। আগামী ১৫ জুলাই থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান ইনডোর হকি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যাব। এবারের বিশ্বকাপের খেলাগুলো বলতে গেলে দেখিইনি! তবে বাংলাদেশ দলের কিছু খেলা অল্প অল্প করে দেখেছি।’ ক্যাম্পে খেলা দেখার সময় জিমির সঙ্গে ছিলেন তার সতীর্থরা। এ প্রসঙ্গে বিকেএসপিতে থাকা অবস্থাতেই ২০০৩ সালে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া জিমি বলেন, ‘টিমমেটদের সঙ্গে বসে বাংলাদেশের কিছু খেলার অংশবিশেষ দেখেছি। খেলা দেখার সময় বেশ হৈচৈ করেছি। আড্ডা দিয়েছি। ভালই মজা হয়েছে।’ সব খেলা না দেখলেও বাংলাদেশ দলের সব আপডেট খবর ঠিকই রাখার চেষ্টা করেছেন জিমি। যে দুই ম্যাচে তারা হেরেছিল সে প্রসঙ্গে তার ক্ষোভমিশ্রিত প্রতিক্রিয়া, ‘বাংলাদেশ দুটি ম্যাচে হারায় ফেসবুকে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিছু ক্রিকেটারের তীব্র নেতিবাচক সমালোচনা হয়েছে যা আমার মোটেও ভাল লাগেনি। সবার বোঝা উচিত খেলোয়াড়রা একটা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে। কেউই ইচ্ছে করে খারাপ খেলে না। আমরা করি কি, ভাল খেললে উৎসাহ দেই, আবার খারাপ খেললে ধুয়ে দেই। এটা করলে খেলোয়াড়দের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। ফলে সেটা তাদের পরবর্তী খেলাগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটা মোটেও কাম্য নয়। এমনটা না করে ভাল সময়ের মতো খারাপ সময়ও খেলোয়াড়দের সমর্থন দেয়া উচিত, তাদের পাশে থাকা উচিত।’ সোমবার বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এখনও আরও কয়েকটি ম্যাচ খেলা বাকি আছে তাদের। কি মনে হয়, সেমিতে কি নাম লেখাতে পারবে লাল-সবুজবাহিনী? ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর আমি তো মনে করি এখন বাংলাদেশের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হলো।’ জিমির মতে বাংলাদেশ বাদে অন্য তিন সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট দল হতে পারে ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। গত ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশসহ জিমির প্রিয় দল ছিল ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। শেষের দলটি তো চ্যাম্পিয়নই হয়ে যায়। জিমির অতীতের প্রিয় ক্রিকেটারদের তালিকায় আছেন পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, সাঈদ আনোয়ার, ভারতের শচীন টেন্ডুলকর এবং শ্রীলঙ্কার সনাথ জয়সুরিয়া। ৪৬ দিনে এবার বিশ্বকাপে মোট ম্যাচ হবে ৪৮টি। সময়সীমা নিয়ে জিমির অভিমত, ‘বিশ্বকাপ হবে বিশ্বকাপের মতোই। বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় দেখি সবাই ভিন্ন ভিন্ন দেশের পতাকা ছাদে ওড়ায় অথচ সেই আসরে আমাদের দেশ খেলে না। আমাদের দেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেললেও কাউকে তো নিজের দেশের পতাকা বাড়ির ছাদে ওড়াতে দেখি না। এটা আমাকে অবাক করে।’ এবারের বিশ্বকাপকে অনেকেই ব্যঙ্গ করে ‘বৃষ্টিকাপ’ বলছেন। এ প্রসঙ্গে জিমির মন্তব্য, ‘আসলে বৃষ্টি এমন একটি জিনিস যার ওপর কারোর হাত নেই। কাজেই এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। শুধু একটি কথাই বলবÑ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ যদি অনুষ্ঠিত হতো তাহলে দর্শকরা ম্যাচগুলো আরও উপভোগ করতো। তাছাড়া বাংলাদেশও হয়তো জিততে পারতো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে।’
×