ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১৮ জুন ২০১৯

 ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এবার বিশ্বকাপ ভেন্যুগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির মাঠ টনটনের কাউন্টি গ্রাউন্ড। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ভরপুর বিশ্বের ভয়ানক সব মারকুটে ব্যাটসম্যান। অথচ এই মাঠে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে অবশ্যই জিততে হবে বাংলাদেশ দলকে। সেই ম্যাচে টস জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত চরম সাহসিকতাই বলা যায় মাশরাফি বিন মর্তুজার। তার সিদ্ধান্তের পর শুরুটা গেইলকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। দলীয় ১০০ রান পর্যন্ত ক্যারিবীয়দের চলার গতি শ্লথ করেও রাখতে পেরেছিলেন বাংলাদেশী বোলাররা। তবে এভিন লুইস, শিমরন হেটমায়ারের ঝড়ো অর্ধশতক ও শাই হোপের ৯৬ রানের ইনিংসে ৮ উইকেটে ৩২১ রান তোলে। ৩ উইকেট করে নেন মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এর আগে সর্বাধিক ৩১৮ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। এবার তাই জেতার জন্য পূর্বের রেকর্ড ভাঙ্গতে হবে। বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ডই বিরল। সর্বাধিক ৩২৭ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডকে ২০১১ বিশ্বকাপে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ৪ ম্যাচে মাত্র ৩ পয়েন্ট। উভয় দলের পরিসংখ্যান সমান। তাই চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে জয়ের জন্য উন্মুখ হয়েই নামে। টনটনের মাঠটি ছোট হওয়াতে সবারই প্রত্যাশা ছিল টস জিতলে বাংলাদেশ দল আগে ব্যাটিংয়ে নামবে। কিন্তু মাশরাফি উল্টোটাই করলেন। এক ঝাঁক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের উপস্থিতি থাকলেও ক্যারিবীয়দের আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান তিনি। এ ম্যাচে টস করার মধ্য দিয়ে হাবিবুল বাশার সুমনকে বিশ্বকাপে সর্বাধিক ম্যাচে (৯) বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়ার রেকর্ড ছুঁয়েছেন তিনি। এদিন বাংলাদেশ দল একটি পরিবর্তন নিয়ে নামে। আগের তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে তেমন সুবিধা করতে না পারায় মোহাম্মদ মিঠুনকে বাদ দিয়ে লিটন কুমার দাসকে একাদশে ফেরায় তারা। আর কার্লোস ব্রেথওয়েটকে বাইরে রেখে ড্যারেন ব্রাভোকে নিয়ে নামে উইন্ডিজ। ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, নিকোলাস পুরান আর আন্দ্রে রাসেলরা বিশ্বের যেকোন বোলারকে তুলোধুনো করতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন অনেক বার। তবু ক্যারিবীয়দের আগে ব্যাটিংয়ে নামিয়ে দারুণভাবে শুরু করে বাংলাদেশের বোলাররা। আগের ম্যাচগুলোয় তেমন সুবিধা করতে না পারা মাশরাফি এদিন প্রথম ওভারেই মেডেন দিয়ে দারুণ শুরু এনে দেন বাংলাদেশকে। পরের ওভারে মাত্র ২ রান দেন সাইফউদ্দিন। তৃতীয় ওভারে মাশরাফি দেন ৪ রান। এই চাপটা ধরে রেখে সাইফ আঘাত হানেন চতুর্থ ওভারে। ভয়ঙ্কর গেইলকে (০) উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহীমের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। শুরুর এই সাফল্যটা ধরে রেখে ক্যারিবীয়দের চেপে ধরে রাখে বাংলাদেশের বোলাররা। আর লুইস- হোপও নাছোড়বান্দার মতো উইকেট কামড়ে পড়ে থাকেন। তাই প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেটে মাত্র ৩২ রান আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পরের ৫ ওভারে ৩২ রান তুলে নিয়ে আস্তে আস্তে চড়াও হতে শুরু করেন হোপ-লুইস। উইকেট না হারানোয় তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটি বাংলাদেশ দলের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে। লুইস-হোপ দু’জনেই অর্ধশতক হাঁকান। ২৫তম ওভারে এসে সাকিব আল হাসান দেন ব্রেক থ্রু। ৫৮ বলে ৫০ ছোঁয়া লুইস তখন রানের চাকা দ্রুত ঘুরিয়ে নিচ্ছিলেন। ৬৭ বলে ৬ চার, ২ ছক্কায় ৭০ রান করার পর তিনি সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে বদলি ফিল্ডার সাব্বির রহমানের ক্যাচে পরিণত হন। ১১৬ রানের দ্বিতীয় জুটির পতন ঘটে। এই উইকেট হারানোর পর দ্রুত রান করতে ক্যারিবীয়রা আগেভাগেই পাঠায় নিকোলাস পুরানকে। তবে তৃতীয় উইকেটে তিনি হোপের সঙ্গে ৩৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি। আবার আঘাত হানেন সাকিব, ফিরিয়ে দেন ৩০ বলে ২৫ রান করা পুরানকে। কিন্তু ৫ নম্বরে নেমে হেটমায়ার দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন। মাত্র ২৫ বলেই অর্ধশতক হাঁকিয়ে দলের রান তিন শ’ পেরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশা উজ্জ্বল করে তোলেন। অপর প্রান্তে হোপ ছিলেন নির্বিকার। এত ঘটনা দেখে যাচ্ছিলেন সুস্থ মস্তিষ্কে ব্যাট চালিয়ে। হেটমায়ার ২৬ বলে ৪ চার, ৩ ছক্কায় ৫০ রান তুলে সাজঘরে ফেরত যান। শেষদিকে এসে মুস্তাফিজ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন তার স্লোয়ার ডেলিভারিতে। হেটমায়ারের পর সেঞ্চুরির পথে চলা হোপকেও শিকার করেন তিনি। ৪০তম ওভারের তৃতীয় বলে হেটমায়ার এবং ষষ্ঠ বলে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান রাসেলকে (০) সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। ৪৭তম ওভারের শেষ বলে হোপ ১২১ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৯৬ রান করে তার শিকার হন। তবে এর আগেই অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার ১৫ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৩৩ রান করে দলের রান তিন শ’ পেরিয়ে নিয়ে যান। তাই শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের বোলিং ভাল হলেও বড় সংগ্রহ আটকাতে পারেননি মাশরাফিরা। সাইফ শুরুতে দুর্দান্ত বোলিং করলেও পরের দিকে ছিলেন দারুণ খরুচে। তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৮ উইকেটে ৩২১ রানে থামে তারা। এর আগে ২০১৪ সালে নিজেদের মাঠে ৭ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল উইন্ডিজ। মুস্তাফিজ ৯ ওভারে ৫৯ রানে এবং সাইফ ১০ ওভারে ৭২ রানে ৩টি করে ও সাকিব ৮ ওভারে ৫৪ রানে ২টি উইকেট শিকার করেন। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের করা ৩১৮ রান তাড়া করে ৪ উইকেটে ৩২২ রান তুলে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেটি ছিল নিউজিল্যান্ডের ছোট্ট মাঠ নেলসনে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সেটি দ্বিতীয় সেরা রান তাড়া করার রেকর্ড। অর্থাৎ এবার নিজেদের রেকর্ডটাকেই পেছনে ফেলতে হবে বাংলাদেশ দলকে। বিশ্বকাপে রান তাড়ার সেরা রেকর্ড আইরিশদের। ২০১১ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডের করা ৩২৭ রান টপকে গিয়েছিল তারা ৭ উইকেটে ৩২৯ রান করে। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোন দলই। আর বাংলাদেশ দল ওয়ানডেতে ৩ শতাধিক রান তাড়া করেছে মাত্র তিনবার। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে পরে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩১৩ রান এবং ২০১৩ সালে ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ৩০৯ রান তুলে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সর্বাধিক ২৭৪ রান তাড়া করে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। সেটি ২০০৯ সালে ডোমিনিকায়। এছাড়া ২৫০ রানের বেশি তাড়া আর মাত্র একবারই ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে করতে পেরেছে টাইগাররা। বিশ্বকাপের আগে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে ডাবলিনে পরে ব্যাট করে ২ উইকেটে ২৬৪ রান তুলে বিশাল জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। সুতরাং এবার জেতার জন্য অনেক অসম্ভবকেই জয় করতে হবে টাইগারদের।
×