ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সঞ্চয়পত্রের নতুন কর প্রত্যাহার হতে পারে

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১৮ জুন ২০১৯

 সঞ্চয়পত্রের  নতুন কর  প্রত্যাহার  হতে  পারে

এম শাহজাহান ॥ স্বল্প আয়ের মানুষের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। অর্থাৎ উৎসে কর কর্তনের বর্তমান যে হার নির্ধারিত আছে তাই বহাল রাখার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এতে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ, পেনশনার ও গৃহিণীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। নিয়মিত আয় উপার্জন নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছেন তারা। এই বাস্তবতায় সঞ্চয়পত্রের ওপর নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হবে। সূত্রমতে, স্বল্প আয়ের মানুষের আর্থিক সুরক্ষা দিতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমানো হচ্ছে না। বরং সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সরকার প্রতি বছর বেশি পরিমাণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। এর মূল কারণ হচ্ছেÑ সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো। কিন্তু গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিয়মনীতির ফাঁকফোকরে সামাজিক সুরক্ষার এই প্রকল্পে ঢুকে পড়ছেন ব্যবসায়ী ও সমাজের ধনী ব্যক্তিরা। মূলত তাদের আসার পথ বন্ধ করতে সঞ্চয়পত্রের বেচাকেনায় বেশকিছু নতুন নিয়মকানুন করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পটি এখন অনলাইনে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র কিনতে ই-টিআইএন দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ইচ্ছে করলেই এখন আর কেউ নিয়মের বাইরে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গ্রাহকদের মুনাফার টাকার ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন। অর্থাৎ আগে উৎসে কর দিতে হতো ৫ শতাংশ, এখন দিতে হবে ১০ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হতো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারাও বলছেন, বাজেট পাসের আগে নতুন আরোপিত উৎসে করা প্রত্যাহার না হলে ১০ শতাংশ করার ঘোষণা কার্যকর করা হবে আগামী ১ জুলাই থেকেই। জানা গেছে, উৎসে কর দ্বিগুণ করার কারণে সমাজের সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের আয় কমে যাবে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের কারণে কোন গ্রাহক যদি মাসে ৫ হাজার টাকা মুনাফা পেয়ে থাকেন, ১ জুলাইয়ের পর থেকে তিনি ৫ হাজার থেকে ৫০০ টাকা কম পাবেন। ব্যাংকের কাছ থেকে এ টাকা বুঝে নেবে এনবিআর। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে উৎসে কর দ্বিগুণ করার ঘোষণাটি কার্যকর হলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের নজরে এসেছে। সাধারণ উপকারভোগীদের সুরক্ষার জন্যই সঞ্চয়পত্রের মতো প্রকল্প চালু রাখা হয়েছে। এ কারণে উৎসে কর দ্বিগুণ না করে বরং এই প্রকল্পে ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের আসার পথ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পাসের আগে ৫ শতাংশ নতুন আরোপিত উৎসে কর প্রত্যাহার করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। এদিকে সঞ্চয়পত্রকে সরকার প্রতিবছরই বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন পূরণের অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচনা করে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ঢাকা অঞ্চলে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র বিক্রি, এক লাখ টাকার উপরে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন জমা দেয়ার নিয়ম কার্যকর হয়েছে। তবে এ নতুন পদ্ধতি পুরনো সঞ্চয়পত্রধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আগামী ১ জুলাই থেকে সারাদেশে এ পদ্ধতি চালু করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ১৫ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সরকারী ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচী বিভাগ থেকে জারি করা এ নির্দেশনায় বলা হয়, জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে জেলা শহরে সঞ্চয়পত্র স্কিম লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের সব কার্যালয় ও শাখাকে লেনদেন শুরু করতে হবে। আগামী পহেলা জুন থেকে অনলাইন ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতির বাইরে সঞ্চয়পত্র বেচাকেনা না করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। সঞ্চয়পত্র অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে ৬৮ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। আর এর ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়েও ৫২ শতাংশ বেশি নিয়ে ফেলেছে নয় মাসেই। জানা গেছে, আসন্ন বাজেটে (২০১৯-২০) তা কমিয়ে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে মাত্র ৩০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা চলতি বাজেটে ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের তুলনায় ১২ হাজার কোটি টাকা কম। সঞ্চয়পত্র খাতে কালো টাকা বিনিয়োগ রোধ, ধনী ও কর্পোরেট শ্রেণীর হাত থেকে সঞ্চয়পত্রকে রক্ষা, ঋণ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানো ও অধিক সুদ পরিশোধে বাজেটের ওপর সৃষ্ট অতিরিক্ত চাপকে হ্রাস করতেই মূলত নানামুখী সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
×