ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে অপরাধ বাড়ছে লাগামহীনভাবে

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৮ জুন ২০১৯

 চট্টগ্রামে অপরাধ  বাড়ছে  লাগামহীনভাবে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় ক্ষমতাসীন দলের গন্ধ পেলে পুলিশ আর এক ইঞ্চিও এগোয় না। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এখন নিত্য নৈমিত্তিক। পুলিশের সিটিজেট চার্টার অনুযায়ী চলছে না পুলিশ। ফলে অপরাধীর অপরাধও বাড়ছে। অভিযোগের অন্ত নেই থানায় কোন ভুক্তভোগী গেলেই তাকে গুরুত্ব দেয় না কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার। ক্ষতিগ্রস্তের কথা শুনে সে অনুযায়ী জিডি কিংবা মামলা রুজুর পরামর্শও কর্তব্যরত পুলিশের কাছ থেকে পাওয়ার কথা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির। পুলিশের এ সিটিজেন চার্টার সিএমপির প্রত্যেকটি থানায় ঝুলানো থাকলেও কার্যকর হয় না ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে। অভিযোগ রয়েছে, পকেটমারের কবলে পড়ে মোবাইল খোয়া গেলে সেটিও নথিভুক্ত হচ্ছে হারানো বলেই জিডিতে। মোটরসাইকেল চুরি হলে পুলিশ ক্ষতিগ্রস্তের পক্ষ থেকে হারানোর জিডি গ্রহণ করে। পুলিশের দায়িত্ব খুঁজে বের করা। কিন্তু সে দায়িত্ব এড়াতেই হারানো জিডি গ্রহণ করা হয়। বস্তুত ক্ষুদ্র আয়তনের জিনিসই মানুষের কাছ থেকে হারাতে পারে। গাড়ি চুরি হলে হারানো জিডি গ্রহণ করা বা পরামর্শ দেয়া আইনী জটিলতায় ফেলে ভুক্তভোগীকে চরম হয়রানি। এমন জিডি গ্রহণ করে পুলিশ অপরাধীদের অপরাধ বাড়াচ্ছে। আরও অভিযোগ আছে, ডাকাতির মামলা হতে হলে পুলিশের হিসেব অনুযায়ী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে মালামাল লুটে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ডাকাতির মামলায় কমপক্ষে ৫ সদস্যকে দেখাতে হবে। কিন্তু কারও অজান্তে বা ঘুমন্ত অবস্থায় গ্রিল কেটেও যদি সন্ত্রাসীরা ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে যায় পুলিশ এটিকে চুরি হিসেবেই দেখাচ্ছে। অভিযোগকারী তার বর্ণনায় চারজনকে গৃহে প্রবেশের কথা বললেও ঘরের বাইরে থাকা অন্য সদস্যদের বিষয়ে না বললে সেক্ষেত্রে চুরি হিসেবে এজাহার নথিভুক্ত হয়। এক্ষেত্রেও পুলিশ অপরাধীদের বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের নাম না জানলে ক্ষতিগ্রস্তদের জিডি করার পরামর্শ দিচ্ছেন। এমনকি এ জিডির প্রেক্ষিতে বা সন্দেহজনকভাবে এলাকার কাউকে চিহ্নিত করতে পারলে তখন মামলা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ডিউটি অফিসার। তাও আবার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমতিক্রমে। পুলিশের এ ধরনের কর্মকান্ড ক্ষতিগ্রস্তদের ভাবিয়ে তুলছে আর অপরাধীদের আশকারা দিচ্ছে। এদিকে, তদন্তের কষ্ট আর ঝামেলা এড়াতে পুলিশ এখন আর মামলা নিতে চায় না। জিডি ছাড়া মামলার বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেন ডিউটি অফিসার। মামলা নিতে হলে ‘ওসির অনুমতি’র দোহাই দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমনকি ওসি তদন্ত। ঘটনাস্থলে পুলিশের অনুুপস্থিতির সুযোগে আবারও অপরাধী আরেক দফা অপরাধ ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এ বিষয়ে সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়টি এখন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা জানতে চান প্রথমে। প্রভাবশালী কোন রাজনৈতিক দল হলেই মামলা নিতে চায় না পুলিশ। ঝামেলা সামলাতে উভয়পক্ষকে থানায় ডেকে সুরাহা করার চেষ্টা করেন ওসিরা। মামলা না নেয়া বা নিতে অপারগতা প্রকাশের কারণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই প্রতিবন্ধকতা থেকে সরে আসা না গেলে অপরাধের মাত্রা লাগামহীন ঘোড়ার মতোই হবে।
×