ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে তথ্য

৩০ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৪০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১৮ জুন ২০১৯

৩০ প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৪০ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ৩০টি সংস্থার কাছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ ৩৯ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১১১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৪২০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারী কর্পোরেশনগুলো ঋণ নিয়ে ঠিক জায়গায় ব্যবহার করেনি। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা প্রতিবছর লোকসান দিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব, কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় ট্রেড ইউনিয়নের অযাচিত হস্তক্ষেপ, প্রয়োজনের তুলনায় অধিক জনবল নিয়োগ, অদক্ষতা, মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে ব্যর্থতা ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়সহ বেশ কিছু কারণে ব্যাংকের টাকা শোধ দিতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি কমানো গেলে সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ব্যাংকের টাকা আটকিয়ে রাখছে না, রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনগুলো এখন দায়-দেনা ও লোকসানে জর্জরিত।’ তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসন না থাকায় নিজেরা লোকসান থেকে বের হতে পারছে না। ব্যাংকগুলোর টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। ফলে তারা ব্যাংকগুলোকেও বিপদে ফেলে দিয়েছে।’ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, গত একবছরে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের কাছে ব্যাংকের পাওনা বেড়েছে এক হাজার কোটি টাকা। গতবছর প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। বেসরকারী খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এই ঋণ নেয়া হয়, যা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই ঋণের বড় অংশই নেয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৪ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৫ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৮৮৪ কোটি টাকা। এই সংস্থাটির খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৩৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা রয়েছে ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কাছে ব্যাংকের পাওনা ৫৭২ কোটি টাকা। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৪৮৫ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসার কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ২৪৬ কোটি টাকা। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপী ঋণ ২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিএডিসির খেলাপী ঋণ ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বলেও অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
×