ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাদা জার্সিতে রঙিন ব্রাজিল

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৬ জুন ২০১৯

 সাদা জার্সিতে রঙিন ব্রাজিল

জিএম মোস্তফা ॥ লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকা। এবার তা শুরু হলো ক্রিকেট বিশ্বকাপের ডামাঢোলের মধ্যেই। তবে জয় দিয়েই কোপার মিশন শুরু করেছে আসরের স্বাগতিকরা। শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ব্রাজিল ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে বলিভিয়াকে। নেইমারবিহীন এই ম্যাচের জয়ের নায়ক ফিলিপে কুতিনহো। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একাই দুই গোল করেছেন তিনি। বাকি গোলটি এসেছে এভারটনের পা থেকে। ফলাফল দেখে অবশ্য জয়টা খুব সহজ মনে হতে পারে অনেকের। ভাবতে পারেন বলিভিয়াকে উড়িয়েই দিয়েছে স্বাগতিকরা। কিন্তু মাঠের লড়াই বলবে ভিন্ন কথা। প্রথমার্ধের শেষে ম্যাচের ফলাফল ছিল গোলশূন্য। ব্রাজিলের সেরা তারকা নেইমারের অনুপস্থিতির কথাই যেন মনে করছিল সমর্থকরা। কাতারের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে গোড়ালির ইনজুরির কারণে কোপা থেকে ছিটকে পড়েন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার। যে কারণে টুর্নামেন্টে শুরুর আগে থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তার অনুপস্থিতিতে কেমন করবে ব্রাজিল? বলিভিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধের পারফর্মেন্স বিচার করতে গেলে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই তারকার অনুপস্থিতি দারুণভাবে মিস করেছেন সমর্থকরা। প্রথমার্ধের পর খোদ নিজ দেশের সমর্থকরাও তো চিৎকার করে সমালোচনা করেন তিতের শিষ্যদের। কেননা, বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকে ব্রাজিল ভাল খেললেও আক্রমণভাগ ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ। যে কারণে প্রথমার্ধের কোন গোলের দেখা পায়নি সেলেসাওরা। কুতিনহোর কর্ণার থেকে রবার্তো ফিরমিনোর ফ্লিক বলিভিয়ান গোলরক্ষক কার্লোস লাম্পে রুখে দেন দারুণভাবে। তার কয়েক মিনিট পর কুতিনহোর আরেকটি পাস থেকে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন থিয়াগো সিলভা। যে কারণে সাদা জার্সি ও নীল শর্টস পরিহিত নতুন রূপের ব্রাজিলকে প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাই হতাশ করেছেন লাম্পে। বলিভিয়ান রক্ষণভাগের ভুলে এভারটন স্ট্রাইকার রিচারলিসন লাম্পেকে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি। যে কারণে স্বাগতিক সমর্থকদের হতাশ হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। তবে বিরতির পরই ঘুরে দাঁড়ায় পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। প্রায় ৬৭ হাজার স্বাগতিক দর্শকের উল্লিসিত ধ্বনির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামে তিতের দল। ৫০ মিনিটেই প্রথম এগিয়ে যায় তারা। রিচারলিসনের ক্রস বক্সের ভেতর বলিভিয়ান ডিফেন্ডার জুসিনোর হাতে লাগলে ভিএআর এর সহায়তায় পেনাল্টির নির্দেশ দেন আর্জেন্টাইন রেফারি নেস্তার পিটানা। স্পট কিক থেকে ব্রাজিলকে প্রথম এগিয়ে দেন কুতিনহো। তার তিন মিনিট পরই গোল ব্যবধান দ্বিগুণ করে ব্রাজিল। এবারও নায়ক সেই কুতিনহো। রবার্তো ফিরমিনোর সহায়তায় নিজের দ্বিতীয় গোল করেন বার্সিলোনার এই ব্রাজিলিয়ান। এরপরও দেখা যায় কুতিনহোর ঝলক। হ্যাটট্রিকেরও সুযোগ আসে তার। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। ম্যাচ শেষের ১৫ মিনিট আগে কুতিনহোর কর্ণার থেকে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন মারকুইনহোসও। কিন্তু তার হেড সরাসরি ধরা পড়ে লাম্পের হাতে। ম্যাচের বয়স যখন ৮৫ মিনিট তখন বদলি খেলোয়াড় এভারটন লেফট উইং থেকে অনেকটা জোরালো শটে লাম্পেকে পরাস্ত করেন। এভারটনের গোল অবশ্য বাঁধিয়ে রাখার মতোই। বাঁপ্রান্ত থেকে বক্সের বাইরে আড়াআড়ি শটে তৃতীয় গোল করেন তিনি। তাতেই ৩-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পেলে-রোনাল্ডোর উত্তরসূরিরা। সেইসঙ্গে কোপা আমেরিকার ইতিহাসে তৃতীয় দল হিসেবে শততম ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়ল ব্রাজিল। ম্যাচ শেষে জোড়া গোল করা কুতিনহো বলেন, ‘সমর্থকরা সবসময়ই আমাদের জয়ের আশা করে। আমরা যেন ভাল খেলি সেটাই তারা চায়। আমিও সব সময়ই তাদের সমর্থন নিয়েই খেলতে চাই। তবে আমাদের মূল গুরুত্ব হচ্ছে ম্যাচের প্রতি মনোনিবেশ করা।’ বলিভিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ব্রাজিলকে দেখা যায় নতুন রূপে। হ্যাঁ, এবার সাদা জার্সিতে রং ছড়িয়েছে তিতের ব্রাজিল। ১৯৫০ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম সাদা জার্সি পরে খেলতে নেমেছে সেলেসাওরা। সাদা জার্সিতে কোপা আমেরিকা জয়ের ঠিক ১০০ বছর পর! মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দখলের লড়াইয়ে ১৯১৯ সালে প্রথমবার সাদা জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। সেই স্মৃতি উসকে দিতেই ব্রাজিলের ‘অপয়া’ জার্সিতে মাঠে নামা। কেননা, হলুদ জার্সিতেই যে ব্রাজিল জাতীয় দলকে দেখতে অভ্যস্ত সেলেসাও ভক্তরা। কিন্তু এবার কোপা শুরুর আগে থেকেই ব্রাজিল জানিয়ে দিয়েছিল সাদা জার্সিতে কিছু ম্যাচ খেলতে দেখা যাবে তাদের। এবার কোপায় হলুদ ও নীল জার্সির সঙ্গে তৃতীয় ‘কিট’ হিসেবে যোগ হয়েছে এই সাদা জার্সি।
×