ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুদিনেও উবারচালক খুনের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৬ জুন ২০১৯

 দুদিনেও উবারচালক খুনের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে উবার চালক আরমানকে (৪২) ছিনতাইকারীরা খুন করেছে, নাকি পূর্বশত্রুতার জেরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের দু’দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এ ঘটনার রহস্য উৎঘাটন করতে পারেনি। উত্তরা পশ্চিম থানার ইনস্পেক্টর (তদন্ত) কাজী আবুল কালাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঘটনাস্থল ও আশপাশের সড়কের বিভিন্ন ভবনে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে খুনীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। অচিরেই এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে। এদিকে নিহত আরমান পরিবারের দাবি, ওর সঙ্গে কারও কোন শত্রুতা ছিল না। অপরাধীরা যাত্রী সেজে গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েই তাকে খুন করে থাকতে পারে। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, উত্তরায় প্রাইভেটকারের ভেতর উবারচালক খুনের ঘটনায় ওই এলাকায় ব্যাপক সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করা হয়েছে। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার ও সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহার করে উবারচালক হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারব বলে আশা করি। কেন, কারা উবারচালককে হত্যা করেছে তাও বের করা হবে। এটি আমাদের মাথায় আছে। গত শুক্রবার ভোরেরদিকে পুলিশ উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ৫২ নম্বর বাড়ির সামনে একটি প্রাইভেটকারের (ঢাকা মেট্রো- গ-২৫-৪৫৪৫) ভেতর থেকে উবারচালক (স্মার্টফোনে এ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা) আরমানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। ঢাকা মেডিক্যালে ময়নাতদন্ত শেষে আরমানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত আরমানের বাবা মরহুম আব্দুল হাকিম। বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী থানার ফতে মোহাম্মদপুর গ্রামে। তিনি মিরপুরে ১২ নম্বর রোডের ৭ নম্বর লেনের ১৬ নম্বর বাড়িতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন। ওই রাতে রামপুরা থেকে যাত্রী নিয়ে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে খান তিনি। এরপর গাড়ি জমা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে ছোট বোনের বিয়েতে যাওয়ার কথা ছিল তার। উত্তরা পশ্চিম থানার ইনস্পেক্টর কাজী আবুল কালাম জানান, আরমানকে কেন, কি কারণে হত্যা করা হয়েছে, কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি জানান, ছিনতাইকারীরা তাকে হত্যা করেছে, নাকি অন্য কোন কারণে তিনি খুন হয়েছেন সেই রহস্যোদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু হয়েছে। অচিরেই আরমান হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে আশা করি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৩ জুন রাত এগারোটা ২১ মিনিটে উবারের জন্য কল পেয়ে রামপুরার ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে যাত্রী নিয়ে উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরে যান চালক আরমান। বারোটার পর যাত্রী নামিয়ে ফেরার পথে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এদিকে আরমানের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে থানার এসআই ফারুক আহমেদ জানান, আরমানের বুকে ও পিঠে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। উবার মালিকের ছোট ভাই গোলাম আলী অন্তর জানান, উনি আমাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার কোন শত্রু নেই। দেড় বছর ধরে তিনি আমাদের গাড়ি চালান। বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ি জমা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে ছোট বোনের বিয়েতে যাওয়ার কথা ছিল তার। আরমানের ফিরতে দেরি হওয়ায় আমি তার মোবাইলে কল করে জানতে পারি, কে বা কারা তাকে খুন করেছে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত এগারোটা ২১ মিনিটে উবার কল পেয়ে রামপুরা থেকে যাত্রী নিয়ে উত্তরা যান আরমান। বারোটা ৪ মিনিটে ট্রিপ শেষ করে তার মিরপুরে ফেরার কথা ছিল। উত্তরা জোনের এসি শচীন মৌলিক জানান, ঘটনার কারণ জানতে আমরা বিভিন্ন ক্লু খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। হত্যাকারী কে বা কারা তা শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গাড়ি স্টার্ট (চালু) অবস্থায় পাওয়া গেছে। তার সিটবেল্ট বাঁধা ছিল। রাত সাড়ে বারোটার দিকে চলন্ত অবস্থায় গাড়িটি ১৬ নম্বর সড়ক দিয়ে এস ৫২ নম্বর বাড়ির পাশের দেয়ালে ধাক্কা খায়। ওই গাড়ির ভেতর থেকে তার দুটি মোবাইল, মানিব্যাগসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া গেছে। ওই প্রাইভেটকারের পেছনের দুটি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। আর সামনের দুটি দরজার লক খোলা ছিল।
×