ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের ইম্পেরিয়াল হসপিটালের যাত্রা শুরু

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৬ জুন ২০১৯

  চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক মানের ইম্পেরিয়াল হসপিটালের  যাত্রা শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে সাড়ে ৮শ’ কোটি টাকায় বেসরকারী খাতে নির্মিত ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড। শনিবার সকালে বিশ্বমানের এই হসপিটাল উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ভারতের নারায়না হেলথের চেয়ারম্যান ডাঃ দেবী প্রসাদ শেঠী। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত এই হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় চিকিৎসার জন্য এদেশের রোগীদের বিদেশমুখিতা কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রফেসর ডাঃ দেবী শেঠী বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য ছুটছে হাজার হাজার রোগী। বিদেশমুখী রোগীর সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। আমি কামনা করি, বাংলাদেশের রোগীদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে আর যেতে হবে না। প্রসঙ্গত, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ পরিচালিত হবে ভারতের বিখ্যাত নারায়না হেলথের সঙ্গে যৌথভাবে। বিভাগটির নামকরণ হয়েছে ‘ইম্পেরিয়াল-নারায়না কার্ডিয়াক’ বিভাগ। বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শেঠী নিজ দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, এক সময় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর রোগীর একটি বড় অংশ ছিল ভারতীয়। বর্তমানে ভারতের মানুষ ভারতেই চিকিৎসা গ্রহণ করে। বিদেশে যেতে হয় না। আমি আশা করি বাংলাদেশের মানুষও নিজ দেশেই উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। হাসপাতালটির উন্নত ও সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে সর্বোচ্চ সেবা পাবেন রোগীরা। একইসঙ্গে তিনি ইম্পেরিয়াল হসপিটাল স্বল্প আয়ের নিম্নবিত্ত রোগীদেরও চিকিৎসা দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ডাঃ শেঠী ইম্পেরিয়াল হসপিটাল পরিদর্শন করে এর অবকাঠামো, উন্নত যন্ত্রপাতি এবং নান্দনিক সৌন্দর্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অভিনন্দিত করেন। হাসপাতালের বোর্ড চেয়ারম্যান বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ রবিউল হোসেন স্বাগত বক্তব্যে তুলে ধরেন ৩৭৫ শয্যাবিশিষ্ট ইম্পেরিয়াল হসপিটালের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা। তিনি বলেন, উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতায় বহু রোগী বিদেশে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানে তাদের ও স্বজনদের আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক চাপের মধ্যে পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে কিছুটা মুক্তি দিতে উন্নত বিশ্বের সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকার স্বল্পমূল্যে হাসপাতালের জন্য জায়গা দিয়ে এ কাজকে আরও সহজতর করে দিয়েছে। তিনি আর্থিক সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নেতৃত্বে কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হাসপাতালের বিশেষত্ব তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, এখানে একই ছাদের নিচে সবধরনের চিকিৎসা সেবা রয়েছে, যা চট্টগ্রামের অন্য কোন হাসপাতালে নেই এবং থাকলেও অপ্রতুল। বিত্তবান, মধ্যবিত্ত এবং অসচ্ছল থেকে শুরু করে সকল ধরনের রোগী চিকিৎসা সেবা পাবে। শুধু তাই নয়, একজন রোগী ভর্তির শুরু থেকে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করা পর্যন্ত হসপিটালিটি বিভাগের মাধ্যমে যাবতীয় সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া দক্ষ জনসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে চিকিৎসক, নার্স ও মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানদের জন্য প্রশিক্ষণসহ আবাসিক ব্যবস্থা, অসচ্ছল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ চিকিৎসা সুবিধা এবং দূরবর্তী রোগীর দর্শনার্থীদের থাকার সুবিধার জন্য আবাসন সুযোগ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর জাকির হোসেন সড়কে প্রায় ৭ একর ভূমির ওপর গড়ে ওঠা ৬ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের রয়েছে ৫টি ভবন। হাসপাতালটিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ (ইনফেকশন কন্ট্রোল), রোগীদের নিরাপত্তা ও কর্মীদের নিরাপত্তা এ তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। উন্নতমানের সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি সেবা এবং কার্ডিয়াক, ট্রান্সপ্ল্যান্ট, নিউরো, অর্থপেডিক ও গাইনি অবস্ ইত্যাদি সম্বলিত ১৪টি মডিউলার অপারেশন থিয়েটার, ৬টি নার্স স্টেশন ও ৬২টি কনসালটেন্ট রুম সম্বলিত বহিঃবিভাগ এবং আধুনিক গুণগত মানসম্পন্ন ৫৮টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড, নবজাতকদের জন্য ৪৪ শয্যাবিশিষ্ট নিউনেটাল ইউনিট এবং ৮টি পেডিয়াটিক আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, হাসপাতালের কমিশনিং কনসালটেন্ট এড লি হ্যানসন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে সর্বাধুনিক এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি এর সঙ্গে ভারতের বিখ্যাত নারায়না হেলথ সংযুক্ত হওয়ায় ডাঃ দেবী শেঠীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
×