ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণফোরামের বাজেট প্রতিক্রিয়া

দেশের প্রকৃত সমস্যা মোকাবেলার কোন চেষ্টা নেই

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১৬ জুন ২০১৯

 দেশের প্রকৃত সমস্যা মোকাবেলার কোন চেষ্টা নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করে ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক দল গণফোরাম বলেছে, এটি জনগণের নয়, গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষা করবে। সংসদে বাজেট প্রস্তাবের দু’দিন পর এই প্রতিক্রিয়া জানায় দলটি। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার গত বৃহস্পতিবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করে। ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি এই বাজেট আগেরটির চেয়ে ১৮ শতাংশ বড়। এ বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা হচ্ছে। বিএনপি বলেছে, এই বাজেট জনবিরোধী, এতে ধনী-দরিদ্র্রের বৈষম্য বাড়বে। তার জবাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেছেন, বাজেট নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার চলছে। বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, এটা জনগণের বাজেট নয়, এটা কয়েকটা শক্তিশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর জন্য। এই বাজেট জনগণের ক্ষতি করবে এবং দেশকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাবে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের মালিকানা নেই। সেজন্য বর্তমান বাজেটটি আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছি। সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে রেজা কিবরিয়া বলেন, এই বাজেট একটি অদূরদর্শী ও দুর্বলভাবে প্রণীত, যাতে দেশের প্রকৃত সমস্যা মোকাবেলার কোন চেষ্টা নেই। বর্তমানে দেশকে যারা লটেপুটে খাচ্ছে এবং যারা অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করছে, বাজেটটি তাদের সুবিধার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। বাজেট নিয়ে দলটির বক্তব্য হলো, এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, এই সংসদ নির্বাচিত না। এই প্রতিনিধিত্বহীন ও অনির্বাচিত সরকারের বাজেট যে আমাদের নাগরিকদের ইচ্ছার প্রতিফলন নয় এবং এটি যে দেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়নি...এটাতে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। বাজেট নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে ‘অনতিবিলম্বে দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন’র দাবি জানান গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বাজেটে যে ধরনের কর বসাচ্ছে, যে ধরনের ট্যারিফ বসাচ্ছে, ধরেন, আমদানি করা গুঁড়া দুধ, এটা জনগণের ওপর ট্যাক্স বসানো। জনগণের পকেট কেটে কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার চেষ্টা এই বাজেটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন রেজা কিবরিয়া। ‘গুটিকয়েক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর জন্য বাজেট কোন যুক্তিতে বলছেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনার মনে আছে, পাকিস্তান আমলে কত পরিবার ছিল? আপনি দেখুন পাওয়ার সেক্টরে যে চুক্তিগুলো হয়েছে, যে ধরনের কন্ট্রাক্ট সই করেছে তার প্রত্যেকটির জবাব সরকারকে দিতে হবে একদিন। মন্দঋণ পুনঃসংজ্ঞায়িত করণে সরকারের নতুন নীতিমালা, অনুৎপাদনশীল ব্যয়, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিল্পখাতে স্বল্প বরাদ্দ নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে গণফোরাম নেতা আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, মোশতাক আহমেদ, আমিন আহমেদ আফসারী, লতিফুল বারী হামিম উপস্থিত ছিলেন। রেজা কিবরিয়া বলেন, এ বাজেটে অর্থনীতি এখন সত্যিকারের যে বিপদে সম্মুখীন সে সম্পর্কে অজ্ঞাত প্রকাশ পেয়েছে। এটাতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, দারিদ্র্য বেকারত্বের মতো গুরুতর সমস্যা মোকাবেলায় কোন উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে গত এক দশকের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার ফলে বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে আমরা একটি আর্থিক সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে। এর প্রতিফলন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং কমাচ্ছে বিভিন্ন দুর্বলতার আভাস পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মন্দ ঋণ উন্নয়নের নতুন নীতি বিভ্রান্তিকর ও বিপদজনক। বিষয়টি আগুনের ঝুঁকিতে থাকা কোন ভবনের অগ্নি সতর্কতা সঙ্কেত বন্ধ করে দেয়ার মতো বলে তিনি উল্লেখ করেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, দেশের এক কোটি ৮০ লাখ কৃষক বর্তমানে যে সঙ্কট মোকাবেলা করছে তার কারণ সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতা। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে বাস্তবসম্মত মূল্য সহায়তা দেয়ার ব্যর্থতা আগামীবছরের কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সরকারী সহায়তা ছিল যৎসামান্য এবং তা এসেছে অসময়ে সরকারী মূল্যে ধান কেনা শুরুর আগেই বেশিরভাগ কৃষক তাদের ধান বিক্রি করে দিয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে দু’লাখ ৮০ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব ঘাটতি চলতি বছর প্রায় ২৫ শতাংশ দাঁড়াতে পারে। ২০১৯-২০ সালের ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা বিগত সরকারের অনুপার্জিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি এটি সত্যিই দুশ্চিন্তার বিষয় কারণ এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত বাৎসরিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, অপচয়, অদক্ষতা ও দুর্নীতি সবচেয়ে লজ্জাজনক চিত্রটি উঠে এসেছে বিদ্যুতখাতে। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে সাহসী অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে আমরা যা জেনেছি। তা দেশের অদক্ষতা ও দুর্নীতির জন্য অবকাঠামো সবাই জানে। এই অদক্ষতা ও দুর্নীতির দায় এখন বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে গ্রাহকদের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
×