ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উইন্ডিজকে উড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৫ জুন ২০১৯

উইন্ডিজকে উড়িয়ে  দ্বিতীয় স্থানে  ইংল্যান্ড

জাহিদুল আলম জয় ॥ স্বাগতিক ইংল্যান্ডের পেসারদের গতির ঝড়ে চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে মাত্র ২১২ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুক্রবার রাতে সাউদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ১৯ নম্বর ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই খাবি খেতে থাকেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। গেইল-লুইসদের ব্যাটিং ব্যর্থতাতেই বোঝা গিয়েছিল দিনটি রুট-আর্চারদের। অবশেষে সেটাই হয়েছে। অনেকটা হেসে-খেলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে তৃতীয় জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। সেই সঙ্গে পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ স্থান থেকে ইংলিশরা উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। এখন ইয়ন মরগানের দলের ভা-ারে জমা ৬ পয়েন্ট। সমান পয়েন্ট নিয়ে রানরেটে পিছিয়ে তিনে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। চার ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে নিউজিল্যান্ড। হারলেও অবস্থানের হেরফের হয়নি ক্যারিবীয়দের। আগের ৩ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান তালিকার ছয় নম্বরে। ইনিংসের বেশিরভাগ সময়ই কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি জেসন হোল্ডারের দল। ধারাবাহিকভাবে উইকেট পড়তে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ পর্যন্ত খেলতে পারেনি নির্ধারিত ৫০ ওভার। ৪৪.৪ ওভারে ২১২ রানেই গুটিয়ে যায় বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নদের ইনিংস। ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের বেসামাল করে দেন মূলত ইংলিশ পেসাররা। তাদের গতির ঝড়েই দুমড়-মুচড়ে পড়েন গেইল, লুইস, হোপরা। ক্যারিবীয়দের ১০ উইকেটের ৮টিই ভাগাভাগি করে নেন ইংল্যান্ডের চার পেসার। এর মধ্যে সবচেয়ে সফল মার্ক উড ও জোফরা আর্চার। এই দুই পেসারই কব্জা করেন ৩টি করে মোট ৬ উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন উদ্বোধনী বোলার ক্রিস ওকস ও লিয়াম প্লানকেট। ইংলিশদের হয়ে বাকি দু’টি উইকেট দখল করেন অনিয়মিত ডানহাতি অফব্রেক বোলার জো রুট। জন্মভূমির বিরুদ্ধে খেলা বলে আলাদা নজর ছিল আর্চারের ওপর। আরও একবার ঝড়ো গতির বোলিং করে সম্ভাবনাময় এই পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের আফসোস বাড়িয়েছেন। ৩০ রান খরচায় আর্চার ৩ উইকেট লাভ করেন। উড তো আরও মিতব্যয়ী। তিনি মাত্র ১৮ রানে ৩ উইকেট ঝুলিতে ভরেন। সহজ লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে কোন বেগ পেতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। ১৬.৫ ওভার হাতে রেখে অর্থাৎ ৩৩.১ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২১৩ রান করে ইংলিশরা। বল হাতে চমক দেখানোর পর ব্যাট হাতেও জো রুট ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ওপেনিংয়ে নেমে এই অলরাউন্ডার ৯৪ বলে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসটি তিনি সাজান ১১টি চারের সাহায্যে। চোখ ধাঁধানো অলরাউন্ড নৈপুণ্যে অনুমিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন রুট। এছাড়া ইংল্যান্ডের হয়ে আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ৪৫ ও ওয়ান ডাউনে নামা ক্রিস ওকস করেন ৪০ রান। ক্যারিবীয়দের হয়ে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল একাই ইংলিশদের উইকেট দু’টি লাভ করেন। এতে তিনি খরচ করেন ৪৯ রান। দারুণ এই জয়ের মাঝেও ইংলিশদের জন্য অস্বস্তি হয়ে এসেছে জেসন রয়ের ইনজুরি। উইন্ডিজের ইনিংসের অষ্টম ওভারে জোফরা আর্চারের ডেলিভারিতে ক্রিস গেইলের জোরালো শটে বল আটকাতে গিয়ে বাম পায়ে চোট পেয়েছেন তিনি। চোটের তীব্রতা এতটাই বেশি যে সঙ্গে সঙ্গেই মাঠ ছেড়ে চলে যান। তার বদলি হিসেবে জেমস ভিন্সকে ফিল্ডিং করতে নামায় ইংল্যান্ড। এ কারণে রয় নিয়মিত ইনিংস ওপেন করলেও ব্যাট করতে নামেননি। বিশ্বকাপে ইংলিশদের হয়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। এই ম্যাচটি বাদে তিন খেলায় রয় ব্যাট হাতে করেছেন ২১৫ রান। যার মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেন ১৫৩ রানের ঝকঝকে ইনিংস। এর আগে টস নামের ভাগ্য পরীক্ষায় জয়ী হয়ে অতিথি উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান। আর ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় ক্যারিবীয়রা। দলীয় মাত্র ৪ রান করে ক্রিস ওকসের বলে বোল্ড হন এভিন লুইস (২)। ক্রিস গেইল আর শাই হোপ শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটে তারা যোগ করেন ৫০ রান। উইকেটে সেট হওয়ার পর নিজের চেনা বিধ্বংসী ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিতে থাকেন গেইল। ঠিক তখনই প্লানকেট সাজঘরে পাঠান তাকে। ৪১ বলে ক্যারিবীয় ওপেনার করেন ৩৬ রান। পরের ওভারেই হোপকে সাজঘরে ফেরায় স্বাগতিকরা। ৩০ বলে মাত্র ১১ রান করে মার্ক উডের বলে এলবিডব্লিউ হন তিন নম্বরে নামা উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। দলীয় ৫৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো বিপদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ৮৯ রানের জুটি গড়েন সিমরন হেটমায়ার আর নিকোলাস পুরান। দারুণ এই জুটির পর বড় সংগ্রহের স্বপ্ন বুনছিল ক্যারিবীয়রা। কিন্তু তখন চমক দেখান পার্টটাইম বোলার জো রুট। দারুণ বোলিং করে জুটিতো ভাঙ্গেনই। টানা দুই ওভারে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ক্যারিবীয়দের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন বিলীন করে দেন। রুটের নেয়া দুটি উইকেটই ফিরতি ক্যাচ, অর্থাৎ কট এ্যান্ড বোল্ড। ৩৯ রান করে হেটমায়ার যেভাবে আউট হন ঠিক সেভাবেই রুটকে ফিরতি ক্যাচ দেন অধিনায়ক হোল্ডার (৯)। মিডল অর্ডার তচনচ হওয়ার পর ক্যারিবীয়দের লোয়ার অর্ডার আর মাথা উঁচু করতে পারেনি। আন্দ্রে রাসেল যখন বিধ্বংসী রূপে আবির্ভূত হচ্ছিলেন ঠিক তখনই মার্ক উড তাকে সাজঘরে ফেরান। ১৬ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ২১ রান করে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ দেন এই অলরাউন্ডার। সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২১২/১০ (৪৪.৪ ওভার), গেইল ৩৬, হোপ ১১, পুরান ৬৩, হেটমায়ার ৩৯, রাসেল ২১, ব্র্যাথওয়েট ১৪; উড ৩/১৮, আর্চার ৩/৩০, রুট ২/২৭) ইংল্যান্ড: ২১৩/২ (৩৩.১ ওভার) (বেয়ারস্টো ৪৫, রুট ১০০*, ওকস ৪০, স্টোকস ১০*; গ্যাব্রিয়েল ২/৪৯, রাসেল ০/১৪)। ফল: ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জো রুট (ইংল্যান্ড)।
×