ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুত্রের দ্বিতল ভবনে ঠাঁই হয়নি বৃদ্ধ মায়ের

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৫ জুন ২০১৯

 পুত্রের দ্বিতল ভবনে ঠাঁই  হয়নি বৃদ্ধ মায়ের

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ অশীতিপর বৃদ্ধা রশি বেগম। বয়সের ভারে রোগ-শোক ও অযত্ন অবহেলায় এখন স্পষ্ট করে কথা বলতে পারছেন না। শুধুই তাকিয়ে থাকেন ফ্যাল ফ্যাল করে। চলার কোন সামর্থ্য নেই। নেই অর্থ সম্পত্তি। শুধু ছিল পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কিছু সম্পত্তি। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে ওই শেষ সম্বলটুকু আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন বিধবা রশি বেগম। কিন্তু একমাত্র পুত্র ইউনুস আলী ফকিরের কারণে তা সম্ভব হয়নি। আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের কাশেম ফকির ও রশি বেগম দম্পত্তির একমাত্র পুত্র ইউনুস আলী। জানা গেছে, রশি বেগমের কোন ভাই-বোন না থাকায় বাবার সকল সম্পত্তির মালিক হন রশি নিজেই। কাশেম ফকিরের মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্রের সুখের জন্য মা রশি বেগম নিজের বাবার বাড়ির সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে একমাত্র পুত্রের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়েই সম্প্রতি ইউনুস আলী নির্মাণ করেন সুরম্য দ্বিতল পাকা ভবন। এরপর ওই বাড়ি থেকে রশি বেগমকে তাড়িয়ে দিয়ে ইউনুস আলী তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পাকা ভবনে বসবাস করে আসছে। গর্ভধারিনী মা রশি বেগমের ওই দ্বিতল পাকা ভবনে ঠাঁই না হলেও প্রতিবেশীদের সহায়তায় ভবনের পাশে বাবার বাড়ির অন্য ওয়ারিশদের সম্পত্তিতে টিনের একচালা খুপরি ঘরে ঠাঁই মিলেছে অশিতিপর বৃদ্ধা রশি বেগমের। রশি বেগমের নিকটাত্মীয় (খালু) খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা খলিল মিয়া জানান, ছেলের পাকা ভবনে বৃদ্ধ মা থাকলে মানসম্মান হানির কারণে রশি বেগমকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা ইউনুস আলীর ভবনের পাশের একটি পরিত্যক্ত খুপরি ঘরে রশি বেগমকে আশ্রয় দিলেও গত দশ বছর যাবত ইউনুস তার মায়ের কোন খোঁজখবর কিংবা খরচ বহন করছে না। রোগে-শোকে রশি বেগম অসুস্থ হলেও তার কোন খোঁজ খবর নেয় না একমাত্র সন্তান ইউনুস আলী। নাতিরাও খোঁজ নেয় না তাদের দাদির। প্রতিবেশীদের দেয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন রশি বেগম। বৃহস্পতিবার দুপুরে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন জানান, গত ৯ জুন রাতে একই বাড়ির মাহাবুবুর রহমানের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালিমা বেগমকে মারধর করে ইউনুস আলী। ওই ঘটনায় হালিমার ভাই নাসির মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ সময় তিনি গর্ভধারিনী মা অশিতিপর রশি বেগমের সঙ্গে তার একমাত্র পুত্র ইউনুস আলী অমানবিক ঘটনাটি জানতে পেরে মর্মাহত হন। পরবর্তীতে হালিমা বেগমের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা গ্রহণ করে অভিযুক্ত ইউনুস আলীকে গ্রেফতারের জন্য থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামি ইউনুস আলীকে গ্রেফতার করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
×