ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে ফের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া দুর্নীতিসহায়ক ॥ টিআইবি

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১৫ জুন ২০১৯

 বাজেটে ফের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া দুর্নীতিসহায়ক ॥ টিআইবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটে আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়াকে বৈষম্যমূলক ও দুর্নীতি সহায়ক বলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে সঙ্কটাপন্ন ব্যাংক খাতের সংস্কারে কার্যকর কোন পথ নির্দেশ বা পরিকল্পনা না থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সংস্থাটির অভিযোগ বরং প্রশ্ন থাকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার কি কোন মূল্য নেই? শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরে সংস্থাটি। তবে তারা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা বাড়ানোসহ কয়েকটি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ক্রমবর্ধমান সম্পদ ও আয়বৈষম্য নিরসনে কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না রেখে বরং অনিয়ম ও দুর্নীতির মহাৎসবের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করায় সম্পদ ও আয়বৈষম্য আরও বাড়বে। বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগপ্রাপ্ত খাতে দুর্নীতির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সৎপথে এসব খাতে আয় ও সম্পদ আহরণের সুযোগ ধূলিসাত হবে। এর প্রভাবে দুর্নীতির বিস্তৃতি ও গভীরতা আরও বৃদ্ধি পাবে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সুশাসন ও ন্যায্যতার পরিপন্থী হলেও দফায় দফায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে এসেছে একের পর এক সরকার। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট লঙ্ঘন ও দুর্নীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত শূন্যসহনশীলতার পরিপন্থী হলেও এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে এই অনিয়মকে বাদ না দিয়ে বরং এর পরিধি আরও বাড়ানো হয়েছে। ফ্ল্যাটের পাশাপাশি এবার জমি কেনাকেও যোগ করা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করা যাবে। তদুপরি এবার প্রথমবারের মতো এই অবৈধটাকে পাঁচ বছরের জন্য বৈধতার প্রস্তাব করা হলো। অর্থাৎ দুর্নীতির মহোৎসব ও বিচারহীনতাকে পাঁচ বছর মেয়াদি লাইসেন্স দেয়া হলো। চরম হতাশাজনক হলেও প্রশ্ন ওঠে, তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর শূন্যসহনশীলতার ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার মতো কি কেউ নেই সরকারী অঙ্গনে? কি হবে এই অঙ্গীকারের? এ উদ্যোগ যেমন অসাংবিধানিক তেমনি অনৈতিক, বৈষম্যমূলক এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের নামান্তর। ইফতেখার বলেন, কেবল ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অবৈধ বিষয়কে বৈধতা দেয়ার অর্থ সমাজে বৈধভাবে উপার্জন করাকে নিরুৎসাহিত করা, যা অন্যদিকে চরম বৈষম্যমূলক। কারণ, সৎপথে উপার্জনকারীকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। দুর্নীতির কাছে রাষ্ট্রের এই আত্মসমর্পণ কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে তা সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। অন্যদিকে রেকর্ড পরিমাণ খেলাপী ঋণ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও যোগসাজশের অপসংস্কৃতিতে ধুঁকতে থাকা সঙ্কটাপন্ন ব্যাংক খাতের সংস্কারে বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোন উদ্যোগ না থাকায় সেটা এ খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। ড. জামান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট খাতে জনগণের করের টাকায় নতুন করে বাড়তি প্রণোদনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা এ খাতের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় কি ভূমিকা রাখবে এবং তা কীভাবে, সে ব্যাপারে সরকার বা যাদের চাপে এটা করা হলো তাদের কোন বিবেচনা রয়েছে এমন ইঙ্গিত নেই। ক্রমবর্ধমান রাষ্ট্রীয় ঋণের বিষয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল অঙ্ক ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে এমন বৃহৎ প্রকল্পে অর্থের যথার্থ ব্যয় এবং কার্যকর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা ও প্রস্তাবনা না থাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের শূন্যসহনশীলতা অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা বাস্তবিক অর্থে দেশের সাধারণ নাগরিকদেরই বইতে হয়। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কৌশলগত দিক-নির্দেশনার দাবি জানাই। এছাড়া, প্রতিরক্ষা খাতে বিশাল বরাদ্দের সমর্থনে যা-ই থাকুক, জনগণের এ অর্থ ব্যয়ের খাতওয়ারি কোন তথ্য বা বিশ্লেষণের সুযোগ প্রতিবারের মতো এবারও জনগণকে দেয়া হয়নি, যা এ বিষয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) জন্য কোন বরাদ্দ না করায় হতাশা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির প্রেক্ষিতে বাজেটে কোন বরাদ্দ না রাখাটা একবারেই অযৌক্তিক এবং উল্টো পথে হাঁটার শামিল। সুতরাং বিসিসিটিএফে কমপক্ষে ১,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি জলবায়ু বাজেটে ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও এলাকা চিহ্নিতকরণ ও অগ্রাধিকারসহ ব্যয়িত অর্থের ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কৌশলগত দিক-নির্দেশনার দাবি জানান তিনি।
×