ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে ঘরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে কাজ করছে সরকার

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১৫ জুন ২০১৯

 ঘরে ঘরে নিরবচ্ছিন্ন  বিদ্যুত সরবরাহে কাজ করছে সরকার

রশিদ মামুন ॥ এক যুগে বিদ্যুত খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৮৭৪ গুণ। ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার সঙ্গে স্বস্তিদায়ক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে এই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিদ্যুত খাতে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ১১ বছর আগে মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণকালে দিন-রাতে অন্তত ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হতো। প্রতি ঘণ্টায় এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুত চলে যেত। আসত এক ঘণ্টা পর। তখন একটি ৫০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র উৎপাদনে এলে বিপুল উদ্দীপনায় প্রচার করা হতো। কিন্তু গত ১০ বছরে সেই চিত্র একেবারেই বদলে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চার দলীয় জোট সরকারের সময় বিদ্যুত খাতে বিশাল একটি শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। টানা পাঁচ বছরে টঙ্গীতে কেবল একটি ৮০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করে বিএনপি। যার চাপ পরে সামাল দেয়া বেশ কঠিন ছিল। শুরু থেকেই বিদ্যুত জ্বালানি খাতকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয় মহাজোট সরকার। বিদ্যুত উৎপাদনে বরাদ্দের সঙ্গে তখন বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হতো। ক্রমান্বয়ে সেই ভর্তুকিও কমিয়ে আনা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিদ্যুত খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৬৭৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এরপর ২০০৯-১০ অর্থবছর ছিল ২ হাজার ৬৪৪ কোটি ২৬ লাখ, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫ হাজার ৯৮১ কোটি ৮৮ লাখ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৭ হাজার ২০৮ কোটি ১০ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৮ হাজার ৮০৩ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ হাজার ৯২৮ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮ হাজার ২৭৬ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫ হাজার ৪৭৬ কোটি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৬ হাজার ২১৭ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৪ হাজার ৯৪৭ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৪ হাজার ২১২ কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। গত ১০ বছরে সরকারের যে পরিসংখ্যান তাতে বলা হচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা ২৭ থেকে বেড়ে এখন ১৩০ হয়েছে। এই সময় উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভসহ)। সরকার বলছে, ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুত উৎপাদন ছিল তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট আর ২০১৯ সালে এসে বেড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সঞ্চালন লাইন আট হাজার কি.মি. থেকে ১১ হাজার ৪৯৩ মেগাওয়াট অর্থাৎ তিন হাজার ৪৯৩ মেগাওয়াট বেড়েছে। বিতরণ লাইন দুই লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ১৪ হাজার কিলোমিটার। এই সময়ে গ্রিড সাবস্টেশন ক্ষমতা ১৫ হাজার ৮৭০ এমভিএ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৯৭৬ এমভিএ। বিদ্যুতের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০০৯ সালে ছিল ৪৭ শতাংশ যা এখন ৯৩ শতাংশ। সরকার বলছে, এ বছরের মধ্যেই শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে যাবে। যদিও সরকার এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ’২১ সাল নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সব সূচকে উন্নয়ন ঘটার পর এখন গ্রাহকের চাহিদা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালন মাসুল আল বেরুনী এ বিষয়ে বলেন, এক সময় মানুষ দিন রাতের অর্ধেক সময় বিদ্যুত পেত না। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। মানুষ এখন যেহেতু সব সময়ই বিদ্যুত পাচ্ছে তাই কখনও বিদ্যুত না পেলে তা স্বাভাবিক মনে হবে না। এটা মানুষের দোষ নয় অভ্যস্ততার বিষয়। মানুষ বিদ্যুত পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। না পেলে আর ভাল লাগবে না এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তিনি বলেন, গ্রিডে এখন আর কোন সমস্যা নেই। চাহিদা অনুযায়ী আমরা বিদ্যুত সঞ্চালনে সমর। সরকারের সামনে এখন প্রধান লক্ষ্য এখন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ। তবে সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বিতরণ ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন। শহরে বিদ্যুত সরবরাহ এখন স্বাভাবিক হলেও গ্রামে সংকট রয়ে গেছে, যার প্রধান কারণ বিতরণ ব্যবস্থা। যদিও চাইলেই রাতারাতি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়। বলা হচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়নের ক্ষেত্রে লাইন নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তার পাশে গাছপালার নিচে দিয়ে। ফলে কোন কারণে ঝড় বৃষ্টি হলে বিতরণ ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। সঙ্গতকারণেই যতক্ষণ মানসম্মত বিতরণ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব না হবে ততক্ষণ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়বে। এখন দেশে চাহিদার দ্বিগুণ বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা থাকার পরও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রসঙ্গত, কোন নির্দিষ্ট সময় অন্তর ৫ মিনিট বা তার চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুত না থাকাকেই লোডশেডিং বলা হয়ে থাকে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সম্প্রতি বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তবে এ জন্য সরকারকে সময় দিতে হবে।
×