ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

ওদের কিছুই ভাল লাগে না ॥ সমৃদ্ধ দেশ গড়তে জনকল্যাণমূলক বাজেট

প্রকাশিত: ১০:২৩, ১৫ জুন ২০১৯

ওদের কিছুই ভাল লাগে না ॥ সমৃদ্ধ দেশ গড়তে জনকল্যাণমূলক বাজেট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য জনকল্যাণমূলক বাজেট দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই সর্ববৃহৎ বাজেট। আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত দুই মেয়াদে ১০ বছরে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তার মাধ্যমে জনগণের মাঝে আমাদের প্রতি আস্থা বেড়েছে। তার প্রতিফলন ঘটেছে গত ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে। আর এ কারণেই বাজেট এমনভাবে করা হয়েছে যাতে দেশের সব মানুষ উপকৃত হন। এর সুফল ভোগ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, বাজেট বাস্তবায়নেও সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার সরকারী নির্দেশনা অবশ্যই মানতে হবে। যারা সত্যিকার অর্থে খেলাপী হয়েছেন তাদের একটি সুযোগ দেয়া হয়েছে নতুন বাজেটে। তবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন ও ভ্যাট আদায় সহজ করতে সাতটি স্তর করা হয়েছে। যাতে করে সবাই সুবিধামতো ভ্যাট দিতে পারেন। শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেলা ৩টায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে বৃহস্পতিবার মহান সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতা পড়তে সমস্যা হচ্ছিল। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীর পক্ষে বক্তব্য পড়ে দেয়ার অনুমতি নিয়ে বাজেট বক্তৃতা পড়া শুরু করেন। অর্থমন্ত্রী চিকিৎসাধীন থাকায় বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ৩০ লাখ শহীদ ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিহতদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। রীতি অনুযায়ী প্রতিবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী। এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ হওয়ায় সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাজেট পরবর্তী এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশেই বসেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এছাড়া মূলমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। প্রসঙ্গত, সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২০ ধরা হয়েছে। নতুন বাজেটে ব্যয় মেটাতে সরকারী অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত করব্যবস্থা থেকে আসবে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সেবামূলক খাত থেকে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করে রাখা হয়েছে। বরাবরের মতো আগামী বাজেটের ঘাটতিও থাকছে জিডিপির ৫ শতাংশ। মোট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। কোন কিছুতেই ভাল না লাগা অসুস্থতা ॥ প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সমালোচনাকারীদের বিষয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা এক ধরনের অসুস্থতা। নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সমালোচনাকেও ‘ভাল না লাগা পার্টির অসুস্থতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ এই বাজেটে খুশি কি না, বাজেটে তাদের উপকার হচ্ছে কি না-সেটাই তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে শুক্রবার সকালে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ‘বাজেট পর্যালোচনা’ অনুষ্ঠানে বলা হয়, দেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের মানুষ নয়, যারা ধনী এবং ‘অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগী’, তারাই নতুন অর্থবছরের বাজেট থেকে সুবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের একটা মানসিক অসুস্থতা থাকে, তাদের কিছুই ভাল লাগে না। আপনি যত ভাল কাজই করেন, তারা কোন কিছু ভাল খুঁজে পায় না। যখন দেশে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনকিছুই ভাল দেখে না। সব কিছুতেই কিন্তু খোঁজে। বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার কথা হচ্ছে, আমার সাধারণ জনগণ খুশি কি না। সাধারণ মানুষ খুশি কি না। সাধারণ মানুষগুলোর ভাল করতে পারছি কি না। এটা হচ্ছে বড় কথা। আওয়ামী লীগ সরকার যে এবার নিয়ে টানা ১১ বারের মতো বাজেট দিল-সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যা করছি, তার সুফলটা কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আর এই ভাল না লাগা পার্টি যারা, তাদের কোন কিছুতেই ভাল লাগবে না। সমালোচকদের জবাব দিতে গিয়ে একটি বাংলা কৌতুকের কথাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা গল্প আছে না, পড়াশোনা করছে ছেলে, পাস করবে না, পাস করার পরে বলল চাকরি পাবে না, চাকরি পাওয়ার পর বলল বেতন পাবে না, বেতন পাওয়ার পরে বলল বেতনের টাকা চলবে না। তো উনাদের সেই অসুস্থতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে, উন্নত করতে, সমৃদ্ধশালী করতে এবং স্বাধীনতার সুফল যেন দেশের মানুষের ঘরে পৌঁছে সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই লক্ষ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এখন বাইরে গেলে আগে যারা মনে করত আমরা ভিক্ষুকের জাতি হিসেবে যাচ্ছি, এখন আর কেউ তা মনে করে না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বড় অর্জন। শেখ হাসিনা বলেন, যারা সমালোচনা করার তারা করে যাক, ভাল কথা বললে আমরা গ্রহণ করব, মন্দ কথা বললে আমরা ধর্তব্যে নেব না। পরিষ্কার কথা। লিঙ্গবৈষম্য হ্রাসে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে ॥ বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয়, নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে উন্নত করতে হবে। সেদিকে আমাদের সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীরা বাংলাদেশে দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। জেন্ডার বৈষম্য হ্রাসে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে আছে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিট ও পুঁজিবাজার বিকশিত হবে ॥ বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটের কথা বলা হয়েছে বাজেটে। এই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করেছি, যাতে সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। কতগুলো সুবিধাও দিলাম। মানেনি। বাজেটে বলা আছে, নির্দেশনা আছে, কঠোর অবস্থান নেয়া হবে। নিয়মটা মেনে চলতে হবে, যেন ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে হয়। ডাবল না হয়। তাতে বিনিয়োগ বেশি হবে। অনেক আইন সংশোধন করব। সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ব্যাংকের মূলধনের পরিমাণ বাড়ানো হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। যেসব ঋণগ্রহীতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে পরিশোধ না করার জন্যই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হয়ে যান, সেই সমস্ত ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। দেশের শিল্প ও ব্যবসা খাতকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করতে আমরা ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার এক অংকের ওপর অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখব। বৃহৎ ঋণগুলোকে আরও নিবিড়ভাবে পরীবিক্ষণ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আমরা শেয়ার বাজারে সুশাসন দেখতে চাই। আমাদের দেশের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনীতির পাশাপাশি আমরা দেখতে চাই একটি বিকশিত পুঁজিবাজার। তিনি বলেন, শিল্প বিনিয়োগে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার। এ বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নিচ্ছি। প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা থাকছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয় করমুক্ত থাকবে। বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ওপর দ্বৈত কর পরিহার করা হবে। এছাড়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে বিশেষ প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রণোদনা স্কিমের আওতায় ৮৫৬ কোটি টাকা আবর্তনশীলের ভিত্তিতে পুনর্ব্যবহারের জন্য ছাড় করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ পাচার না করে বিনিয়োগ করার লক্ষ্যে কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে। অর্থপাচার ঠেকাতে আলাদা কমিটি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এ্যাটর্নি জেনারেল অফিসসহ সবাই মিলে গঠিত কমিটি এ বিষয়টি দেখছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অর্থপাচার যেখানেই হচ্ছে, ধরা পড়ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ পাচার করতে চায় অনেকেই। এটা বন্ধ করার জন্য বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সব সরকারই সুযোগ দিয়েছে। আমরাও সেই ধারাবাহিকতায় দিয়েছি। মাঝেমাঝে বন্ধও করেছি। কালো টাকার স্তূপ যেন না হয়, তাই তাদের টাকা প্রদর্শিত বা বিনিয়োগের খাত হয়ে কাজে লাগাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছি। সেখানে বিনিয়োগে সুনির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হবে, মানে সুদ দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট হার ধরা হচ্ছে, অতিরিক্ত এই অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ করতে পারবে। বিনিয়োগ করলে তাকে আর প্রশ্ন করা হবে না। ভবিষ্যতে যেন না করা হয়, সেই ব্যবস্থাও নেব। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সবাইকে সৎ হতে হবে। সৎ থাকলে তাকে কখনো হতাশ হতে হয় না। তিনি নিজের জীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, জীবনে বহুবার তাঁকে সততার পরিচয় দিতে হয়েছে। তিন কোটি কর্মসংস্থান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বাজেটে কর্মসংস্থানের কথা বলেছি। চাকরি দেয়ার কথা বলিনি। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে আমরা একশ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি। এই বরাদ্দ শিক্ষা, প্রযুক্তি, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণে ব্যয় হবে। আমরা চাই প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যেন নিজের কাজ নিজে করতে পারে। কাজেই তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। এত বেশি বেকার যদি থাকে, তাহলে তো ধান কাটলেও ৪/৫ শ’ টাকা পাওয়া যাবে। প্লাস দুই বেলা খাবার। সেই লোক কেন পাওয়া যাচ্ছে না, বিবেচনা করেছেন। শ্রমের মূল্য অনেক বেড়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বলেই ধান কাটার লোক নেই। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যেন পেটভরে খেতে পারে, সেই সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। আমরা একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। একেকটি প্রকল্প হলে বহু মানুষের কাজ হবে, চাকরি হবে। চক্রবৃদ্ধি সুদে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চক্রবৃদ্ধি সুদ যোগ হওয়ার কারণে প্রকৃত ঋণের চেয়ে বেশি খেলাপী ঋণ দেখা যাচ্ছে। তবে ঋণ খেলাপী ভাল বিষয় নয়। ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হলে ব্যবস্থা। তবে প্রকৃত খেলাপীরা সুযোগ পাবেন। তিনি বলেন, তার সরকার ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিতে চায়। তিনি বলেন, আমাদের এখানে সুদের হার অনেক বেশি। ব্যাংকগুলোতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হয়। আবার খেলাপী ঋণের হিসাব যখন দেয়া হয়, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ যোগ হয়ে যে ঋণের পরিমাণটা দাঁড়ায়, সেই হিসাব প্রকাশ করা হয়। ফলে খেলাপী ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি দেখায়। প্রকৃত ঋণ আসলে অতটা নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চক্রবৃদ্ধি হারে সুদসহ খেলাপী ঋণ ধরা হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু দুর্বলতা আছে। ধীরে ধীরে বিষয়গুলো এ্যাডজাস্ট করা হচ্ছে। আমরাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর আমরা আগেও বলেছি, খেলাপী হয়ে যাওয়া ঋণও শোধ দেয়ার সুযোগ দেব। সোনার বাংলা গড়তে সোনালি যুদ্ধ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাজেটের লক্ষ্য ধারাবাহিকভাবে দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। জনগণ যেন সোনালি দিন দেখতে পায়, সেটিকেই সোনালি যুদ্ধ বলা হয়েছে। এটি অকল্যাণ, ধ্বংস নয়, সৃষ্টির যুদ্ধ। বেশি চিনি খেলে ডায়াবেটিস হয় ॥ ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চিনি আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরদিন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খানিকটা রসিকতা করেই বললেন, চিনি খেলে ডায়াবেটিস হতে পারে বিধায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক হার পুনর্নির্ধারণের অংশে এসে প্রধানমন্ত্রী চিনি শিল্পের অংশটি পাঠ করে শোনান। বাজেটে চিনি আমদানিতে র-সুগারের ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টন ২ হাজার টাকা ও রিফাইন্ড সুগারের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ হাজার টাকা হারে স্পেসিফিক ডিউটিসহ ২০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বিদ্যমান রয়েছে। অর্থমন্ত্রীর জন্য দোয়া কামনা ॥ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের জন্য দোয়া চেয়ে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য শেষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আসলে দুর্ভাগ্য তার, তিনি অসুস্থ। জীবনের প্রথম বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি নেই। দ্রুত তিনি সুস্থ হয়ে কাজে ফিরে আসুন এই দোয়া করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের বিগত নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আমার গ্রাম আমার শহর কর্মসূচী বাস্তবায়নে পল্লী এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া তিনি বিদ্যুত, বন্দর উন্নয়ন, বিনিয়োগ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন লিখিত বক্তব্যে।
×