ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সংলাপ একসঙ্গে চলতে পারে না ॥ পাকিস্তানকে মোদি

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১৫ জুন ২০১৯

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সন্ত্রাস নিয়ে ইসলামাবাদকে ফের কড়া বার্তা দিল নয়াদিল্লী। কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন এসসিও-এর শীর্ষ বৈঠকের শেষদিন শুক্রবার চিরবৈরি প্রতিবেশি রাষ্ট্র পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই হুঁশিয়ারি দেন। বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও উপস্থিত ছিলেন। খবর এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের। মোদি বলেন, সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থদান করছে যে দেশগুলো তাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি জানিয়ে দেন, সন্ত্রাস-মুক্ত সমাজের পক্ষে ভারত। এসসিও-এর উদ্দীপনা ও আদর্শকে সামনে রেখে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে লড়াইয়ের কথা বলেন মোদি। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে দেশগুলোকে তাদের সংকীর্ণ পরিসর থেকে বেরিয়ে এসে এক হতে হবে। মোদি বলেন, গত রবিবার শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে আমি সেন্ট এ্যান্থনি চার্চে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি সন্ত্রাসের কুৎসিত মুখের সাক্ষী হয়েছি। সন্ত্রাস সর্বত্র নিরীহদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এসসিও-এর সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে রিজিওনাল এ্যান্টি টেররিস্ট স্ট্রাকচার-এর সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। এসসিও চীনের নেতৃত্বে ৮ সদস্য দেশের একটি অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্লক। ২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান এই সংগঠনের সদস্য হয়। বৃহস্পতিবার শীর্ষ বৈঠকের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে আলোচনার সময় পাকিস্তানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। শি জিনপিংকে মোদি সাফ জানান, ইসলামাবাদ যতদিন না সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ততদিন তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়। ভারতের বক্তব্য, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই এই বক্তব্য আরও জোরালো হয়েছে বলে বিদেশ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলাপকালে মোদি বলেন, সন্ত্রাসমুক্ত পরিমণ্ডল তৈরি করা প্রয়োজন পাকিস্তানের। কিন্তু এই মুহূর্তে তেমন কিছু ঘটতে দেখছি ন। আমরা আশাবাদী খুব শীঘ্রই ইসলামাবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। তারা এই পদক্ষেপ নিলেই কেবল দেশটির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হতে পারে। এই শীর্ষ বৈঠকের আগে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য মোদিকে আলাদা করে চিঠি লেখেন। ইমরান মোদিকে লেখেন, তিনি সব বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক। এমনকি কাশ্মীর নিয়েও। কিন্তু এই শীর্ষ বৈঠকে ইমরান খানের সঙ্গে মোদির কোন দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সম্ভাবনা নেই। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলায় ৪০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। পাকিস্তানের এর দায় চাপায় ভারত। এরপর থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলে আসছে দিল্লী। মোদির আমন্ত্রণে সাড়া চীনা প্রেসিডেন্টের ॥ নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এ বছরই ভারত সফরে আসছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এসসিও সম্মেলনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার নরেন্দ্র মোদি চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। এ সময় শি জিনপিংকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান মোদি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানায়, চলতি বছরের শেষ দিকে শি জিনপিং ভারতে আসবেন একটি অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি শি জিনপিংকে ভারতে অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন তিনি ভারতে আসবেন। মোদি ও শি গতবছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হয়েছিলেন। ওই বৈঠক সাফল্যমণ্ডিত হয়েছিল। ওই বৈঠকেই শি জিনপিং কথা দিয়েছিলেন তিনি ভারতে আসবেন। গতবছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দুই দেশের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা নিজেদের বিদেশ নীতি ও স্বরাষ্ট্র নীতিকে বোঝার সুযোগ পান। গত কয়েকবছরে ভারত ও চীন পরস্পরের কিছুটা হলেও কাছাকাছি এসেছে। বৃহস্পতিবার বিশকেকে পৌঁছনোর পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের ফের সাক্ষাত হয়। গোখলে জানিয়েছেন, ২০ মিনিটের মতো কথা বলার সময় নির্ধারিত করা হলেও তার চেয়ে অনেক বেশি সময় দু’জনের কথা হয়। তিনি জানান, উভয় নেতার মধ্যে উষ্ণ ও আন্তরিক কথোপকথন হয়। মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে শি জিনপিং বলেন, তার প্রতি ভারতের মানুষের ভরসাই প্রতিফলিত হয়েছে নির্বাচনের ফলাফলে। তারা দু’জনেই একমত হন যে তাদের প্রথম বৈঠকের পরে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে।
×