ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষায় সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ

প্রকাশিত: ১০:০৮, ১৪ জুন ২০১৯

 শিক্ষায় সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এটি স্মরণকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ। দীর্ঘ ৯ বছর পর বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুখবর এলো নতুন বাজেটে। এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। ২৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয়ে বাস্তবায়নাধীন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে; যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরে শিক্ষা খাতের বাজেট ছিল ৫০ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় মানসম্মত শিক্ষার ওপর। তবে দীর্ঘ প্রায় এক দশক বন্ধ থাকার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সুখবর এলো বাজেটে। এবারের বাজেটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকছে। ফলে ৯ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অসুস্থ বোধ করায় বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত অংশের বক্তৃতার শুরুতেই সুসংবাদ জানান। বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন কারণে এমপিওভুক্তি কার্যক্রমটি বন্ধ ছিল। এবারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা এমপিওভুক্তি কার্যক্রমের জন্য এ বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান রাখা হয়েছে। এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিমাসে বেতন-ভাতা বাবদ সরকারী অংশ (মূল বেতন ও কিছু ভাতা) পেয়ে থাকেন। এ জন্য বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় এমপিওভুক্তির জন্য সরকারের দারস্থ হয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকেই এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের মুখে গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ জারি করে। এরপর গত আগস্টে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেয়া হয়। মোট নয় হাজার ৬১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। যাচাইয়ে এমপিও নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করে যোগ্য প্রতিষ্ঠান হয়েছে দুই হাজার ৭৬২ টি। কিন্তু অর্থের অভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিতে পারছিল না। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চেয়ে চিঠি পাঠায়। তাতে মোট এক হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শীঘ্রই নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে। তবে তা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। নতুন বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতের জন্য ২৯ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। কারিগরি ও মাদ্রাসার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ২৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে নতুন দিক হচ্ছে শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার প্রস্তাব। শিক্ষা বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মানসম্মত শিক্ষার বিষয়ে। এ বিষয়ে জাপানের স¤্রাট মেইজির উদাহরণ টেনে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, মেইজির সময়ে জাপান শিক্ষায় অনগ্রসর ছিল। তখন তিনি অনুধাবন করেন জাপানে ছাত্রের অভাব নেই আছে উপযুক্ত শিক্ষকের অভাব। তাই তিনি প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষিত কয়েক হাজার শিক্ষককে জাপান নিয়ে আসেন। এভাবে জাপান জ্ঞান, বিজ্ঞানে অগ্রসর হয় এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যায়। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা মনে করি স¤্রাট মেইজিকে অনুসরণ করার সময় আমাদের এসে গেছে। এখন আমাদের ছাত্রছাত্রীর ঘাটতি নেই। ঘাটতি দেখা দিয়েছে উপযুক্ত এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকের। প্রাথমিক থেকে শিক্ষার সকল স্তরে উপযুক্ত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের কাছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে হস্তান্তর করতে চাই। এ বছর থেকেই এসবের বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত শিক্ষা বাজেটে উপযুক্ত শিক্ষক বাছাই ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে শ্রেণীকক্ষ তৈরি করার বিষয়েও জোর দেয়া হয়। ন্যানো টেকনোলজি, রোবটিক্স, ব্লক চেইন ম্যানেজমেন্ট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বিষয়ে জোর দেয়ার কথাও জানানো হয়। সেই লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা’ নামে একটি পাইলট প্রকল্পের কথা জানানো হয়। এতে ৫০৩টি মডেল বিদ্যালয়ে ইন্টার‌্যাক্টিভ ক্লাসরুম তৈরি হবে। বলা হয়েছে, বর্তমানে ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ শিক্ষা প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শিক্ষা বাজেটে এ কাজের জন্য মোট ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে; যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা জিডিপির ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। এটি এখন পর্যন্ত বাজেটে শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন প্রণয়ন, নতুন জাতীয়কৃত ও বিদ্যমান বিদ্যালয়গুলোতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয় বাজেটে। এ ছাড়াও মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে ৫ বছর মেয়াদী শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী প্রস্তাব করা হয় যেখানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত বিষয়ে জোর দেয়ার কথা জানানো হয়। স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে স্থানীয় ব্যক্তিসহ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া সামগ্রিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় স্কুল ফিডিং নীতি প্রণয়ন করা হবে। নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া বর্তমানে চলমান রয়েছে। কারিগরি শিক্ষার অগ্রগতির জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল তৈরির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে দুই হাজার ২৮১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুলের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও ভূমি জরিপ শিক্ষা উন্নয়ন, ২৩টি জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরাধীন ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। কারিগরি শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ৪টি বিভাগীয় শহরে (সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর) মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষায় এ বছর সর্বোচ্চ সাত হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়; যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এই অর্থ মাদ্রাসায় অবকাঠামো উন্নয়ন, পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বৈষম্য দূরীকরণ ব্যবহারে ব্যয় হবে বলে জানানো হয়।
×