ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১০:০৮, ১৪ জুন ২০১৯

  বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী অর্থবছরে বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতে ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ঘোষিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এই বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাজেটে বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণের বিশদ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এর বাইরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে সরকারী উদ্যোগের বিস্তারিত উল্লেখ করেন তিনি। বাজেটে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় রাখা হয়েছে ৫০ কোটি। অন্যদিকে জ্বালানির উন্নয়ন বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৯১৬ কোটি আর পরিচালন ব্যয় রাখা হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বিদ্যুত এবং জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। উত্থাপিত বাজেটে বলা হয়েছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার ৫৩টি বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণাধীন। ৫ হাজার ৮০১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যেগুলোর খুব শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও ১ হাজার ৪১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুতকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে আরও ১৯ হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পুরাতন বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোকে সংরক্ষণ মেরামত বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুত উৎপাদনের পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন ভবিষ্যতে একক জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে জ্বালানির বহুমুখীকরণের উদ্যোগ রয়েছে। উত্থাপিত বাজেটে বলা হচ্ছে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী ২০২১ এ ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ এ ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ এ ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখন দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট বলে বাজেট বক্তৃতায় জানানো হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, জমির প্রাপ্যতা, পরিবহন এবং লোডসেন্টার বিবেচনায় নিয়ে পায়রা, মাতারবাড়ি এবং মহেশখালীতে তিনটি বিদ্যুত হাব নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনটি বড় বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রকল্প মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রকল্প পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্প এছাড়া যৌথ বিনিয়োগে মহেশখালীতে ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়াও রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশে প্রকৃতিক গ্যাস দিয়ে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এজন্য দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন সেখান থেকে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাইপলাইনে আনা সম্ভব। এখন সেখান থেকে দৈনিক ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, একক জ্বালানি গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে জ্বালানির বহুমুখী ব্যবহারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকারী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ ভাগ জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা হবে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, মোট উৎপাদনের ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করা হবে। সরকারী-বেসরকারী ভবনের ছাদে সৌর বিদ্যুত প্যানেল স্থাপন করা হচ্ছে। নেট মিটারিং গাইড লাইনের মাধ্যমে গ্রাহককে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ১১ হাজার ৪৯৩ সার্কিট কিলোমিটার এবং বিতরণ লাইন ৫ লাখ ৮ হাজার কিলোমিটার। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে মোট সঞ্চালন লাইন হবে ২৮ হাজার সার্কিট কিলোমিটার। বিতরণ লাইন হবে ৬ লাখ ৬০ হাজার কিলোমিটার। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে স্থলভাগের সমুদ্র এলাকায় স্বল্প-মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাপেক্স মোট ২৪টি কূপের খননকাজ সম্পন্ন করেছে। সমুদ্রসীমায় চারটি ব্লকে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) সই হয়েছে।
×