ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৪ জুন ২০১৯

 মাস্টাররোলে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর শিক্ষা বোর্ডে মাস্টাররোল কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ক্রয় নীতিমালা না মেনে উন্মুক্ত টেন্ডারের পরিবর্তে কৌশলে ছোট ছোট প্রকল্প দেখিয়ে কোটেশনে পছন্দের লোককে কাজ দিয়ে ফায়দা লোটা হচ্ছে। গত আড়াই বছর ধরে এভাবেই অনিয়ম চলছে যশোর শিক্ষা বোর্ডে। জানা যায়, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল আলীম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে চলতি বছর বোর্ডের বিভিন্ন শাখায় ৪৫ জন মাস্টাররোল কর্মচারী নিয়োগ দেন। অভিযোগ রয়েছে, বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের কতিপয় নেতার যোগসাজশে প্রত্যেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে এদের অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মচারীদের বেশির ভাগই বিএনপি-জামায়াতপন্থী। অথচ মাস্টাররোল এসব কর্মচারী নিয়োগের আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন থাকলেও বোর্ডের চেয়ারম্যান তা অমান্য করেছেন। পিপিআর আইন-২০০৮ লঙ্ঘন করে ছোট ছোট প্রকল্প দেখিয়ে কৌশলে কোটেশনে কোটি কোটি টাকার কাজ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যানের অফিস রুম ও সভা কক্ষ মেরামত, নাম ফলক তৈরি এবং ফুলবাগান শোভা বর্ধনের নামে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ এসব কাজে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে বোর্ডের একাধিক সূত্র দাবি করেছে। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে মালামাল কেনার নিয়ম থাকলেও ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ছোট ছোট প্রকল্প দেখিয়ে কোটেশনে ৯ কোটি ২৭ লাখ ৮০ হাজার ২৩৫ টাকার মালামাল কেনা হয়েছে। অনুমোদনবিহীন এসব অনিয়মিত ব্যয় নিয়ে অডিট আপত্তি হলেও পরবর্তীতে বিশেষ ব্যবস্থায় তা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। শিক্ষা বোর্ডের মতো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান প্রধানের বার্ষিক ব্যয়ের ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা হলেও যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান ক্রয় ক্ষমতার অতিরিক্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ২৯১ টাকার মালামাল কিনেছেন কোটেশনের মাধ্যমে। পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানী প্রদান সত্ত্বেও পুনরায় বহিরাগত শ্রমিক দিয়ে একই কাজ করে অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে ৯ লাখ ৫২ হাজার ৬৩৫ টাকা। ঢাকার যশোর শিক্ষা বোর্ডের রেস্ট হাউজ সংস্কার করার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। রেস্ট হাউজের জন্য একটি এসি, দরজা, কিছু টাইলস্ ও কিছু চৌকি কিনে এই ২০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ রেস্ট হাউজ সাজানোর জন্য সর্বোচ্চ ৭/৮ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে বলে সূত্র দাবি করেছে। বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রেও হয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম। এসএসসি পাসের ছাত্র/ছাত্রীদের বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে ২ বছরের মধ্যে আবেদন করার নিয়ম থাকলেও বোর্ডের চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে ১৫২তম সভায় ৪ প্রার্থীর বয়স সংশোধনের ক্ষেত্রে এ নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। এসব প্রার্থীরা হলেন, এসএসসি, কেন্দ্রের নাম বরিশাল, রোল নং- ১০৭১৪৩, পাসের সাল ১৯৯৭, এসএসসি, কেন্দ্রের নাম কোটচাঁদপুর, রোল নং- ১৪৪, পাসের সাল ১৯৯২, এসএসসি, কেন্দ্রের নাম তেরখাদা, রোল নং- ২৫৪, পাসের সাল ১৯৯২, এসএসসি, কেন্দ্রের নাম চৌগাছা, রোল নং- ৮৫০৬০১ ও পাসের সাল ১৯৯৮। গত আড়াই বছর ধরে সরকারী নীতিমালা উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান বোর্ড কমিটির সভাসহ বিভিন্ন মিটিং-এর নামে ভাতা বাবদ একটি বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাত করেছেন। অর্থাৎ নিজ অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি বোর্ড থেকে এ ভাতা উত্তোলন করেন। যশোর জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যান নিজ অফিস ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে মিটিং করলে তিনি ভাতা প্রাপ্য হবেন, তবে যশোর শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে ওই অফিসে মিটিং করে যদি তিনি বৈঠকী ভাতা গ্রহণ করেন, তাহলে সেটা হবে অবৈধ। এদিকে ২০১৫ সালের ২ জুলাই শিক্ষা বোর্ডে ৪২ লাখ টাকার হাইস্প্রিড কম্পিউটার ক্রয় নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে সর্বনিম্ন দ্বিতীয় দরদাতা যশোরের মাল্টি কম্পিউটার ল্যান্ডের মালিক আতাউর রহমান দুর্নীতির অভিযোগ এনে বোর্ডের তৎকালীন সচিব মোল্লা আমীর হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আদালত এ মামলার রায় দেয়। যার নং- ২৫/১৯। রায়ে সচিব নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং বাদী আতাউর রহমান হেরে যান। অথচ বোর্ডের চেয়ারম্যান আদালতের নির্দেশনা না নিয়ে গত ১১ মার্চ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মাল্টি কম্পিউটার ল্যান্ডকে ওই কাজের অনুকূলে বিল পরিশোধ করেছেন।
×