ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য ইরানের প্রতি জাপানী প্রধানমন্ত্রী আবের আহ্বান

গঠনমূলক ভূমিকা চাই

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১৪ জুন ২০১৯

গঠনমূলক ভূমিকা চাই

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য গঠনমূলক ভূমিকা নিতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশটির প্রতি এ আহ্বান জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে বিরল এক কূটনৈতিক মিশনে বুধবার তেহরান গেছেন জাপানী প্রধানমন্ত্রী। গত বছর মে মাসে ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনকে সরিয়ে নিলে ইরানের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। এর পর থেকে ওয়াশিংটন ইরানের ওপর একতরফা অবরোধ আরোপ করে আসছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে চলেছে। এর ফলে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে টোকিও। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্র শিনজো আবে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের প্রকৃত শান্তি ও স্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ইরানের গঠনমূলক ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবে আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, হঠাৎ করেই যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। জাপানী প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, যেকোন উপায়ে অস্ত্রের সংঘাত বন্ধ এড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে চলা উত্তেজনা প্রশমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে চায় জাপান। এই একমাত্র চিন্তা থেকেই আমি ইরান সফরে এসেছি। একই সংবাদ সম্মেলনে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি অবরোধের মাধ্যমে তেহরানের ওপর চাপ প্রয়োগ থেকে সরে আসে তাহলে বিশ্বে এবং মধ্যপ্রাচ্যে খুবই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে তিনি আশা করেন। রুহানি বলেন, যদি কোন উত্তেজনা থাকে, সেটার উৎপত্তি ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যুদ্ধের শিকড় থেকে। ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি আরও বলেন, এ অঞ্চলে আমরা কোন সংঘাতের পথে যাব না, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও নয়। কিন্তু যদি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাহলে আমরা কঠোরভাবে এর জবাব দেব। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বুধবার রাতে তেহরানে দুই দফা বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। তিনি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শিনজো আবে ইরানের তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে আগ্রহী বলেও তিনি জানান। রুহানি বলেন, ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে চাবাহার বন্দরে জাপানী বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রুহানি বলেন, আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও উত্তেজনা হ্রাসের বিষয়ে আলোচনা করেছি। দুই দেশই মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বলে জানান তিনি। রুহানি বলেন, জাপানী প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী এবং তিনি জানিয়েছেন ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যাসন্ন। জাপানী প্রধানমন্ত্রী ইরানের পরমাণু সমঝোতার প্রতি আবারও সমর্থন জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন রুহানি। তিনি বলেন, জাপান পরমাণু সমঝোতাকে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। তিনি বলেন, দুই দেশই শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের পক্ষে এবং পরমাণু অস্ত্রের বিরোধী। দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা জানান রুহানি। এর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তার দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন পদক্ষেপকে আবারও অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কোন কাজে আসেনি এবং নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বুধবার তেহরান পৌঁছান। গত ৪১ বছরের মধ্যে ইরানে এটাই কোন জাপানী প্রধানমন্ত্রীর সফর। -এএফপি ও ওয়েবসাইট
×