ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৭৫ বছর পর দেখা হল প্রেমিক যুগল রবিন্স ও গেনেইয়ের

প্রকাশিত: ০০:১৫, ১৩ জুন ২০১৯

৭৫ বছর পর দেখা হল প্রেমিক যুগল রবিন্স ও গেনেইয়ের

অনলাইন ডেস্ক ॥ ১৯৪৪ সালে অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা, কেটি রবিন্স পূর্ব ফ্রান্সের ব্রায়িতে একটি রেজিমেন্টে নিযুক্ত ছিলেন। জার্মানির দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সে সময় জোট বেঁধে লড়াই করছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স। ফ্রান্সের সেই ঘাঁটিতে থাকাকালীন তরুণ রবিন্স, ১৮ বছর বয়সী ফরাসি মেয়ে জেনেই পিয়ারসন নি গেনেই- এর প্রেমে পড়েন। তবে তাদের দেখা হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই, পূর্ব ফ্রন্টের উদ্দেশ্যে কেটি রবিন্সকে তাড়াহুড়ো করে গ্রাম ছেড়ে যেতে হয়। একজন আরেকজনের থেকে আলাদা হওয়ার সময় তারা ভাবছিলেন যে তাদের আবার দেখা হবে কি না। কেটি রবিন্স পরে জেনেইয়ের একটি ছবি তার কাছে রেখে দেন। তারপর দীর্ঘ ৭৫ বছর পেরিয়ে যায়। তাদের দেখা হয়নি ঠিকই, কিন্তু জেনেইয়ের শেষ স্মৃতি হাতছাড়া করেননি মিস্টার রবিন্স। এরপর একদিন ফ্রান্সের একদল সাংবাদিক বিশেষ প্রতিবেদনের কাজে মিস্টার রবিন্সের সাক্ষাতকার নিতে আসেন।সে সময় ফ্রান্সের সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের ভেটেরান অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন। তাদের সঙ্গে দেখা হতেই ফ্রান্সের প্রচারমাধ্যম ফ্রান্স-টু এর সাংবাদিকদের জেনেই-এর সেই ছবিটি দেখান মিস্টার রবিন্স। বলেন, যে তিনি ফ্রান্সে ফিরে গিয়ে জেনেইকে না হলে তার পরিবারকে খুঁজে বের করতে চান। সাংবাদিকদের সঙ্গে এই সাক্ষাতের কয়েক সপ্তাহ পরেই মিস্টার রবিন্স ডি-ডে ল্যান্ডিং অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া নরম্যান্ডি ল্যান্ডিং এর ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফ্রান্সে যান। তিনি ভাবতেও পারেননি, তার জন্য কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে। মিস্টার রবিন্সকে চমকে দিতে, ফ্রান্সের ওই সাংবাদিকরা আগে থেকেই সেই নারীর খোঁজ বের করেন। এরপর মুখোমুখি করেন দুজনকে। মিস্টার রবিন্সকে সাংবাদিকরা নিয়ে যান সেই রিটায়ার হোমে, যেখানে অপেক্ষায় ছিলেন মিজ গেনেই। দীর্ঘ ৭৫ বছর পর দেখা হতেই তারা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেন। সে সময় মিস্টার রবিন্সের গায়ে ছিল সামরিক পোশাক আর মিজ জেনেই কালো পোশাকে নিজেকে সাজিয়েছিলেন পরিপাটি করে। পরে মিজ গেনেই সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সবসময়ের রবিন্সের কথা মনে করতেন। আশা করতেন যে, একদিন রবিন্স নিশ্চয়ই ফিরে আসবে। নিজেদের আলাদা হওয়ার মুহূর্তটি নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে স্মৃতিচারণ করেন মিজ গেনেই। তিনি বলেন, "রবিন্স যখন ট্রাকে করে ফিরে যাচ্ছিল, আমার মন এতোটাই ভেঙে পড়েছিল যে আমি ভীষণ কাঁদছিলাম। আমি আশা করেছিলাম যুদ্ধ শেষে সে হয়তো আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবে না।" তবে বাস্তবে এই দীর্ঘ সময়ে তাদের একবারের জন্যও দেখা হয়নি। এ নিয়ে আক্ষেপের কথাও জানান মিজ গেনেই। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, "রবিন্স এতদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কেন ছিল? আমার কাছে আরও আগে কেন ফিরে আসেনি? আমি ভাবি, যদি সে আরও আগে ফিরতো।" মিজ জেনেই পরে বিয়ে করেন। সেই সংসারে তাঁর পাঁচ সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে মিস্টার রবিন্সও পরে বিয়ে করেন। যুক্তরাষ্ট্রে নিজের পরিবার নিয়ে থাকছেন তিনি। তাদের দুজনই এখন নিজেদের সঙ্গীকে হারিয়েছেন। তারা আশা করেন যে একদিন তাদের আবারও নিশ্চয়ই দেখা হবে। বিদায়ী চুম্বনে এমনটাই আশা করছিলেন দুজন। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×