ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

তবু মাশরাফিদের নিয়ে আশাবাদী লিনু

প্রকাশিত: ১১:২৭, ১৩ জুন ২০১৯

 তবু মাশরাফিদের নিয়ে আশাবাদী লিনু

রুমেল খান ॥ জন্ম চট্টগ্রামে। শৈশবেই সিলেটে টেবিল টেনিসের প্রেমে পড়া বড় বোন মুনিরা রহমান হেলেনের মাধ্যমে। ডাইনিং টেবিলকে টেনিস কোর্ট বানিয়ে অনুশীলন করতেন। সেই বড় বোনের কাছে ১৯৭৪ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরে রানারআপ হন। তার তিন বছর পরেই একই আসরের ফাইনালে প্রথম শিরোপার স্বাদ পাওয়া। প্রতিপক্ষ ছিলেন তার বড় বোনই! তাকে হারানোর সময় বালিকাটির বয়স ছিল মাত্র ১২! সেদিনের সেই বালিকাটিই পরবর্তীতে পরিণত হন দেশের সেরা টিটি খেলোয়াড়ে। এতটাই সেরা, ১৬ বার (১৯৭৭-২০০১ সময়কালে) জাতীয় টিটি চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বইয়ে তার নাম ওঠে! তিনিই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে গিনেজ বুকে নাম ওঠান। তার নাম জোবেরা রহমান লিনু। এই সাবেক তারকা ক্রীড়াবিদ এখন নিমগ্ন আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে। ঢাকার উত্তরার বাসায় ভাই-বোন, ভাইয়ের দুই বাচ্চা নিয়ে টিভিতে উপভোগ করছেন খেলা। এ প্রসঙ্গে ১৯৭৮, ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে জাতীয় সাইক্লিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া লিনু জনকণ্ঠকে জানান, ‘সবাইকে নিয়ে বেশ আনন্দ করেই খেলা দেখছি। বিশেষ করে বাংলাদেশের খেলাগুলো। আপনি ফোন করার একটু আগেই বাচ্চা-কাচ্চারা আবদার করায় তাদের চিকেন বার্গার বানিয়ে খাওয়ালাম। একেকদিন আমরা বিভিন্ন ফাস্টফুডসহ একেক ধরনের খাবার খাই খেলা চলাকালে।’ বাংলাদেশের ইতোমধ্যেই চারটি ম্যাচ হয়েছে। একটিতে জিতেছে, একটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত, হেরেছে দুটিতে। লাল-সবুজদের পারফর্মেন্স প্রসঙ্গে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার হিসেবেও খ্যাতি কুড়ানো লিনু বলেন, ‘ক্রিকেট এনজয় করার চেষ্টা করি। এই আসরে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে তাদের প্রথম ম্যাচে জিতলে খুবই ভাল লেগেছিল। তবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারায় কষ্ট পেয়েছি। ওই ম্যাচে আরও ২০টা রান বেশি করলে বাংলাদেশ ঠিকই জিততে পারত। আর ইংল্যান্ডের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারায় খুবই কষ্ট পেয়েছি। ক্রিকেট খুব বেশি বুঝি না, তারপরও বলব, ওই ম্যাচে টস জিতেও বাংলাদেশ কেন যে আগে বোলিং করল, সেটা বুঝলাম না।’ টিটি ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি এবং আবাহনী লিমিটেডের টিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিনু আরও যোগ করেন, ‘বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ম্যাচে জিতে যেভাবে জয় উদযাপন করেছে, সেটা মোটেও ভাল লাগেনি। তারা তো এমন উদযাপন করবে আরও পরে, একেবারে আসরের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে। এখনই তো তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়নি বা ফাইনালে ওঠেনি। কাজেই বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস না দেখিয়ে তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’ ১৯৯৩ সালে আজিমপুরে সাইক্লিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা লিনু তার আরেকটি অনুভূতির কথা জানান, ‘এছাড়া কোন খেলা বা টুর্নামেন্ট চলাচালীন বাংলাদেশ দলকে দেখা যায় বিভিন্ন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেতে বা কোথাও দাওয়াত খেতে যেতে। মনোসংযোগ ধরে রাখতে ও সজীব থাকতে এগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কারণ সামনে তো আরও ভাইটাল ম্যাচ আছে।’ বৃষ্টির কারণে এবারের বিশ্বকাপ বিঘ্নিত হচ্ছে বার বার। এ নিয়ে নিজের বিরক্তিভাব লুকানোর চেষ্টা করেননি তিনবার বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়া লিনু, ‘যারা এই আসরটি আয়োজন করছে, তারা কি জানত না বছরের এই সময়টায় প্রচুর বৃষ্টি হবে? যদি জানত, তাহলে কেন এখানে আয়োজন করল? এখন তো বৃষ্টির অত্যাচারে বিশ্বকাপের আকষর্ণই ম্লান হওয়ার উপক্রম। এই যে ধরুন, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচটি। বৃষ্টি না হলে বাংলাদেশ তো এই ম্যাচে জিতেই যেত। কারণ শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। বৃষ্টির কারণে এভাবে জয়বঞ্চিত হয়ে এক পয়েন্ট পাওয়াতে বাংলাদেশের যতটা ক্ষতি হলো, ততটাই লাভ হলো শ্রীলঙ্কার। এর ফলে বাংলাদেশের সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা অনেকখানিই কমে গেল। তবে তারপরও আমি আশাবাদী। কেননা ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। যেকোন কিছুই ঘটতে পারে। বাংলাদেশের শেষ চারে যাওয়াটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।’ শখের টিভি উপস্থাপিকা লিনুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী এবারের আসরে সেমিতে খেলার জোর সম্ভাবনা আছে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের। গত ২০১৫ বিশ্বকাপে কাদেরকে সেমিফাইনালিস্ট ভেবেছিলেন, মনে আছে সেটা? অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে করতে পারলেন না ২০০৫ সালে ‘ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত’ হওয়া লিনু। তবে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সময় জনকণ্ঠের আর্কাইভ খুঁজে জানা গেল লিনু সেবার যে চারটি দলের কথা বলেছিলেন, সেগুলো ছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। একবার জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার এবং একবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া লিনুর দৃষ্টিতে এবারের আসরে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, রস টেইলর ও সাকিব আল হাসান মাঠ মাতাবেন। লিনুর সাবেক প্রিয় ক্রিকেটারদের তালিকায় আছেন শচীন টেন্ডুলকর, ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, শেন ওয়ার্ন, মুত্তিয়া মুরলিধরন এবং অরবিন্দ ডি সিলভা। তার মতে, এবারের বিশ্বকাপ আসরটি আরও কম সময় নিয়ে হলে ভাল হতো। তবে যেভাবে হচ্ছে, সেটা ঠিকই আছে। ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা বোলারদের চেয়ে বেশি সুবিধা পান, এটা পছন্দ নয় লিনুর, ‘বোলারদের ক্ষমতা আরও বাড়ানো উচিত। বোলিং পিচে খেলা হওয়া উচিত। তাহলে লড়াইটা সমানে-সমান হবে, ভারসাম্যপূর্ণ এবং উপভোগ্য হবে।’
×