ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাক-বাছাইয়ে লাওসের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র

ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নাম লেখাল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ১২ জুন ২০১৯

ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নাম লেখাল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কিরগিজ রেফারি ফাইজুলিন তাইমুর খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই লাওসের সব ফুটবলার মাটিতে শুয়ে পড়লেন। আর বাংলাদেশের ফুটবলারদের দেখা গেল অনেকটা ভাবলেশহীন ভাবে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। না, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ এই ম্যাচে হারেনি। তিন বছর আগে ভুটানের কাছে হেরে তিন বছরের জন্য যে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল, এবার আর তেমনটা হয়নি। এবার তারা দেখা পেয়েছে আশার আলোর, যার নাম ফিফা বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব। মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ের দ্বিতীয় লেগের খেলায় কমপক্ষে ড্র করলেই চলত বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র করেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ বাহিনী। প্রথম লেগের খেলায় স্বাগতিক লাওসকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ফলে বাছাইপর্বে যেতে হলে দ্বিতীয় লেগে হার এড়ানোই যথেষ্ট ছিল বাংলাদেশের। সেটিই তারা করতে পেরেছে অনেক ঘাম ঝরিয়ে। লাওসের বিপক্ষে এ নিয়ে টানা চার ম্যাচে অপরাজিত থাকল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে নিজেদের মাঠ সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে একই ব্যবধানে জিতেছিল লাল-সবুজরা। এর আগে লাওসের মাঠে ২০১৮ সালের মার্চের প্রীতি ম্যাচটি ২-২ ড্র হয়েছিল। গত ৬ জুনের ম্যাচের মোকাবেলার ফল তো লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে। খেলা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের বাইরের চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে হাজারখানেক ফুটবলপ্রেমীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেল। সবার মাঝেই উৎফুল্ল ভাব। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। পাশেই হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামের গেটের ঠিক সামনেই বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টার্স ফোরামের ব্যানারে বেশকিছু ফুটবলপ্রেমীকে দেখা গেল তারা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি পরে এসেছেন। অনেকেই ড্রাম বাজাচ্ছেন। কেউ বাজাচ্ছেন ভুভুজেলা। কারোর হাতে বাংলাদেশের পতাকা। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জুবায়ের জানালেন, তাদের সংগঠনের প্রায় হাজারখানেক সদস্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলা দেখতে এসেছেন। আশা করছেন এ খেলায় বাংলাদেশই জিতবে। আরেকটু সামনে এগুতেই রোলার স্কেটিং স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে একটি বিশাল ব্যানার টাঙ্গানো অবস্থায় দেখা গেল। ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি পরা কয়েকজন তরুণ মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ‘সেলফি’ তুলছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এরা একটি ফেসবুকভিত্তিক ফুটবল গ্রুপ। নাম ‘বাংলাদেশ ফুটবল ওয়াকিং এ্যারাউন্ড দ্য ড্রিম।’ ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রুপের সদস্য ১৬ হাজার। যাদের সবাই সত্যিকারের বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী বলে দাবি করলেন গ্রুপের ১০ এডমিনের একজন কাজী সজীব। তিনি আরও জানান, ‘আমরা এখানে এক শ’ জন প্লাস এসেছি। আরও আসার পথে। ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছে।’ শেষ পর্যন্ত স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজার ছয়েক দর্শক উপস্থিত ছিলেন, যা এই স্টেডিয়ামে দর্শক খরার অপবাদ ঘোচাতে বেশ আশাব্যঞ্জক সংখ্যাই। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ দল ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলে। চার ডিফেন্ডার, দুই মিডফিল্ডার, চার ফরোয়ার্ড। আক্রমণাত্মক কৌশল। লাওস একই ফর্মেশনে খেলে। কিন্তু বেশি প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশই। বল নিয়ন্ত্রণ ৬৫ শতাংশই ছিল লাল-সবুজদের পক্ষে। লাওসের গোলমুখে বেশকিছু বিপজ্জনক আক্রমণ শাণায় তারা। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়াতে একটি গোলও করতে পারেনি। আগের দিনই ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে বলেছিলেন তাদের লক্ষ্য ম্যাচ শুরুর বিশ মিনিটের মধ্যে গোল আদায় করে নিজেদের এগিয়ে নেয়া। কিন্তু মঙ্গলবারের ম্যাচে কি এক ‘অমঙ্গলের ছায়া’ ভর করেছিল তার শিষ্যদের মধ্যে। একের পর এক আক্রমণ পর্যবসিত হয় ব্যর্থতায়। এই অর্ধে কমপক্ষে পাঁচটি নিশ্চিত গোলের নষ্ট করে বাংলাদেশ দল। দুই অর্ধ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি গোল মিস করেন জীবন। দ্বিতীয়ার্ধে লাওস মরিয়া হয়ে খেলে। তারাই বেশি আক্রমণ করে। বাংলাদেশ এই অর্ধে তেমন ভাল খেলতে পারেনি। অসংখ্য গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেও শেষ পর্যন্ত গোল পায়নি লাল-সবুজরা। তবে হারতেও হয়নি। ড্র করে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ায় স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরেছে দর্শকরা।
×