ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আজ আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তান

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১২ জুন ২০১৯

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আজ আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তান

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে মাত্র ১০৫ রানে অলআউট পাকিস্তানের বিশ্বকাপে শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। রেকর্ড টানা ১১ ওয়ানডে হারের লজ্জা সঙ্গী করে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল সরফরাজ আহমেদের দল। অথচ সেই তারাই কি না আয়োজকদের উড়িয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় দুর্দান্তভাবে। পাকিস্তান এমনই, দলটির ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ ইমেজ প্রতিপক্ষের জন্য বড় হুমকি! এরপর লঙ্কা বধের নেশায় টগবগ করে ফুটছিল সরফরাজ বাহিনী। কিন্তু ব্রিস্টলের বেরসিক বৃষ্টিতে ম্যাচটাই প- হয়ে গেছে। নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ আজ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। যাদের মিশন শুরু হয়েছিল টানা দুই জয়ে। আফগানিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিলেও আসরের প্রথম হাইভোল্টেজ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে বসে এ্যারন ফিঞ্চের দল। সুতরাং আজকের ম্যাচটা অসিদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। তবে ইংল্যান্ড বধে পাওয়া আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে সরফরাজ বাহিনী আজও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অসিদের হতাশায় ডোবাতে চায়। টন্টনে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়। ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের পরে দলের মনোবল অনেক চাঙ্গা হয়ে গেছে। ফলে আমরা চেয়েছিলাম বেশি সংখ্যক ম্যাচ খেলতে পারব, তাতে ক্রিকেটারদেরই সুবিধা হবে। তবে আবহাওয়ার কারণে সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। প্রকৃতির ওপর কারও হাত নেই। আমার বিশ্বাস, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ পর্যন্ত দলের এই ইতিবাচক মনোভাব বজায় থাকবে।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর বলেছিলেন সরফরাজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে মাঠে খেলবে পাকিস্তান, সেই টন্টনের পিচ কিন্তু যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক। সেই তথ্য মাথায় রেখে সতর্ক থাকছেন পাকিস্তান, ‘বিশ্বকাপে অন্য দলগুলোর মতো অস্ট্রেলিয়াও খুব কঠিন প্রতিপক্ষ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওদের হেরে যাওয়া ম্যাচটা আমরা দেখেছি, যা আমাদের রণপরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করবে।’ যোগ করেন তিনি। সরফরাজের পরের বক্তব্যেই আত্মবিশ্বাসটা ফুটে ওঠে, ‘আমরাও কিন্তু কারও চেয়ে কোন অংশে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে, ইংল্যান্ডকে হারানোর পর এই বিশ্বাস জন্মেছে যে আমরাও যেকোন শক্তিশালী দলকে হারাতে পরি। বিশ্বকাপের এই পর্যায়ে এমন ইতিবাচক মানসিকতাই অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।’ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দলের দুই অভিজ্ঞ পেসার মোহাম্মদ আমির ও ওয়াবাব রিয়াজ দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। আত্মবিশ্বাসী সরফরাজ মনে করছেন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও গতি দিয়েই তারা ডেভিড ওয়ার্নারদের মোকাবেলা করতে পারবেন। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইংল্যান্ডের কাছে ৪-০ তে ওয়ানডে সিরিজ হারের পর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে মাত্র ১০৫ রানে অলআউটের লজ্জায় ডুবেছিল পাকিরা। কিন্তু পরের ম্যাচে সেই ইংলিশদের অবাক করে দেয় সরফরাজ বাহিনী। কোন সেঞ্চুরি ছাড়াই ৩৪৮ রানের পাহাড় গড়ে ১৪ রানের আকর্ষণীয় জয় পায় পাকিস্তান। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচসেরা হন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজ। দুটি করে উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অনেক আলোচনার পর বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া আমির ও ওয়াহাব। চমৎকার হাফ সেঞ্চুরিতে সমালোচনার জবাব দেন অধিনায়ক সরফরাজ। অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে আজ ব্যাটিংয়ে টপঅর্ডারের তিন তারকা ইমাম-উল হক, বাবর আজম ও ফকর জামানের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। অন্যদিকে অপেক্ষকৃত দুর্বল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের প্রত্যাশিত জয়ে মিশন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় ১৫ রানে। দুর্বল আম্পারিংয়ের কারণে আলোচিত সেই ম্যাচে ৭৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন স্টিভেন স্মিথ। ৯২ রান করেন টেলএন্ডার নাথান কুল্টার নাইল। ৫ উইকেট নিয়ে অসামান্য অবদান রাখেন বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক। কিন্তু ওভালে বিশ্বকাপে এবার প্রথম হাইভোল্টেজ ম্যাচে ভারতের কাছে ৩৬ রানে হারে অসিরা। ভারতের ৩৫২/৫-এর জবাবে ৩১৬ রানে অলআউট হয় এ্যারন ফিঞ্চের দল। এদিন হাফ সেঞ্চুরি হাঁকান স্মিথ-ওয়ার্নার দুজনেই। তবে ওয়ার্নারের ৫৬ রান করতে ৮৪ বল মোকাবেলা ছিল বড় রহস্যময়! ঘুরে দাঁড়াতে হলে তুখোড় দুই তারকার ব্যাট থেকে আজ আরও ভাল কিছু চাইবে অস্ট্রেলিয়া। টপঅর্ডারে আছেন ডেভিড ওয়ার্নার, অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ, স্মিথ, উসমান খাজা। মিডলঅর্ডারে গ্লোন ম্যাক্সওয়েল, এ্যালেক্স ক্যারি, মার্কাস স্টয়নিস। বোলিংয়ে স্টার্ক-কুল্টার নাইলের সঙ্গী প্যাট কামিন্স। স্পিনে তরুণ এ্যান্ডাম জাম্পাও হয়ে উঠতে পারেন তুরুপের তাস। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ফিঞ্চ বলেন, ‘দুই জয়ে দারুণ শুরুর পরও আমরা ভারতের বিপক্ষে সেটি ধরে রাখতে পারিনি। টপঅর্ডারে প্রত্যাশিত রান আসেনি। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে আত্মবিশ্বাসী। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে সেটি সম্ভব।’ গত বছর কেপটাউন টেস্টে বহুল আলোচিত বল টেম্পারিংয়ের কারণে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন স্মিথ ও ওয়ার্নার। দুই তারকাকে হারিয়ে মাঠের ক্রিকেটেও বেসামাল হয়ে পড়েছিল অসিরা। হারছিল একের পর এক সিরিজ। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। ভারতের মাটিতে ভারতকে আর আমিরাতে পাকিস্তানকে হারিয়েছে স্মিথ-ওয়ার্নারকে ছাড়াই। আবার প্রত্যাবর্তনে দুই তারকাই হয়ে উঠেছেন দলের অন্যতম ত্রাতা। অস্ট্রেলিয়ার জন্য বাড়তি পাওয়া এই দলের পাঁচ সদস্য গতবারের চ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেনÑ অধিনায়ক ফিঞ্চ, তুখোড় স্মিথ-ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কামিন্স আর স্টার্ক। আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়া পঞ্চম ও পাকিস্তান ষষ্ঠ স্থানে। ১৯৭৫ থেকে এ পর্যন্ত ১০৩ ওয়ানডের ৬৭টিতে জয় অস্ট্রেলিয়ার, পাকিস্তানের সাফল্য ৩২, টাই ১ ও পরিত্যক্ত ৩। তবে বিশ্বকাপের ঠিক আগে আমিরাতে পাকিদের ‘হোয়াইটওয়াশ’ করেছিল ফিঞ্চ বাহিনী। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ৯ দেখায় ৫ জয় অস্ট্রেলিয়ার, পাকিস্তানের সাফল্য ৪ বার। এ্যাডিলেডে গত বিশ্বকাপে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল মিসবাহ-উল হকের পাকিস্তান।
×