ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুনয় করছেন প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১২ জুন ২০১৯

ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুনয় করছেন প্রার্থীরা

সমুদ্র হক ॥ আষাঢ় মাসের প্রায় মধ্যভাগে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে বারিধারার (বৃষ্টিপাত) হিসাবও কষতে হচ্ছে। এই হিসাব ভোটারদের যতটা ভাবনায় ফেলেছে তার চেয়ে ঢেড় বেশি ভাবনা পেয়ে বসেছে প্রার্থীদের। এই আসনে ভোটারও কম নয়। মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪শ’ ৫৮। নারী ভোটার বেশি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও ভোট প্রদানের হার ছিল ৮২ শতাংশের বেশি। উপ-নির্বাচন সাধারণত মূল নির্বাচনের মতো জমজমাট হয় না। যে কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কমে যায়। একই কারণে প্রার্থীগণ জনসংযোগে বারবার ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার আবেদন নিবেদন করছেন। উপ-নির্বাচনের সময়ও হাতে কম। বড় জোড় দিনা দশেক ভোট প্রচার সময় পাওয়া যাবে। ২৪ জুন সকাল ন’টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। বগুড়ার ভোটাররা ইভিএমে অভ্যস্ত নয়। যন্ত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাঞ্চ করে ভোটার নিশ্চিত হওয়ার পর পোলিং অফিসার গোপন কক্ষে ভোট প্রদানের অনুমতি দিবেন। ভোটার ইভিএমে পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে বোতাম টিপে পরবর্তী ধাপে ওকে করার পর ভোট প্রদান সম্পন্ন হবে। নির্বাচন অফিসার বলছেন এই পদ্ধতি খুবই সহজ। কোনভাবেই ‘ফল্স’ ভোট ও কারচুপির কোন আশঙ্কা নেই। অন্যদিকে ভোটাররা মনে করছেন হয়ত জটিল। যে কারণে অনেকেই ভোট প্রদানে বিরত থাকতেও পারেন। ইভিএমের বিষয়টিও প্রার্থীগণ তাদের জনসংযোগে নিশ্চিত করছেন। এদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে নির্বাচন অফিস কার্যক্রম শুরু করেছে। উপ- নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শরীফউদ্দিন মোহাম্মদ তৌকিরুজ্জামান নিকেতার (যিনি টি জামান নামে অধিক পরিচিত) পক্ষে প্রচারের জন্য দলের জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ মকবুল হোসেন সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন। সমন্বয় ও প্রধান এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু। এ ছাড়াও পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ড ১২ ইউনিয়নে শক্তিশালী পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে। নগরীর টেম্পল রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় নির্বাচনী অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের (জিএম সিরাজ) পক্ষে একাদশ সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি কাজ করছে। যার প্রধান সমন্বয়ক সাবেক এমপি ও চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার (লালু)। বিএনপি নির্বাচনী প্রচার অফিস হিসাবে ব্যবহার করছে সুত্রাপুর রিয়াজ কাজী লেনে চম্পা মহলকে। জি এম সিরাজ বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত এমপি। একাদশ নির্বাচনে ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমানের কাছে হেরে যান। বিএনপি প্রার্থী জি এম সিরাজ এবার বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উল্লেখ্য একাদশ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয়ী হওয়ার পর শপথ গ্রহণ না করায় আসনটি শুন্য ঘোষিত হয়ে এখন উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাপা প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমরের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি দলের সকল নেতাকর্মী। এমনটি জানিয়ে জাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাপা শহর কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বাবু বললেন, প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমরের প্রতিটি সময় কাটছে জনসংযোগে। তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দশম সাধারণ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর মহাজোটের প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একাদশ নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে। উপ-নির্বাচনে তার আশা ছিল মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেন। দৌড়ঝাঁপও করেছেন। লাভ হয়নি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছে টি জামান নিকেতাকে। ফলে জাপা প্রার্থী ওমরের আশার গুড়ে বালি পড়ে। একাধিক সূত্রের কথা নুরুল ইসলাম ওমর শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবেন যদি কোন কারণে মহাজোটের প্রার্থী হতে পারেন। নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থী, ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপি প্রার্থী ও লাঙ্গল প্রতীকের জাপা প্রার্থীর জনসংযোগের পাশাপশি বাকি চার প্রার্থীর মধ্যে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ কবির আহমেদ মিঠুকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। তিনি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এই পরিচিতিকে কাজে লাগাচ্ছেন। বাকি তিন প্রার্থীর মধ্যে ডাব প্রতীকের বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোঃ মনসুর রহমান, হারিকেন প্রতীকের বাংলাদেশ মুসলিম লীগ প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মিনহাজের পরিচিতি তেমন নেই। জনসংযোগে তাদের সঙ্গে সমর্থকের সংখ্যা হাতে গোনা যায়। অনেকেই তাদের দেখে অবাক হয়ে যান। তাদের পোস্টার চোখে পড়ে না।
×