ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হায়দার মোহাম্মদ জিতু

অভিমত ॥ সাম্য ও সততার দৃষ্টান্ত

প্রকাশিত: ০৮:৩৮, ১২ জুন ২০১৯

অভিমত ॥ সাম্য ও সততার দৃষ্টান্ত

প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য সমাজ ব্যবস্থার মূল পার্থক্যগত দিক হল, প্রাচ্য চলে বিশ্বাসের চাকায়। আর পাশ্চাত্য চলে যুক্তির প্রেক্ষাপটে। যদিও প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য এই দুই বৈষম্য-বিভাজনের তলানিতে আছে হাজার বছরের লুটেরা সন্ত্রাস, ঔপনিবেশিক মেরুকরণ, অভ্যন্তরীণ কলহ-বিরহ এবং সাম্রাজ্যবাদী ইশতেহার। তবে তামাশার বিষয়টি হলো, অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাই এই ব্যবস্থার তাঁবেদার। যদিও বর্তমান দ্রুত গতির ‘তথ্য প্রযুক্তির’ পৃথিবীতে এখন বিশ্বাস নিয়ে খেলার বাজার দর নেই। যার এক অনন্য উদাহরণ বর্তমান ‘বাংলাদেশ’। আর এই তথ্য প্রযুক্তির হাতিয়ার জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার তাঁর নেতৃত্ব বলেই আজ ভবিষ্যত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বপ্নের পথে বাংলাদেশ। যদিও এই পথচলা আরও অনেক পূর্বেই সংগঠিত হওয়ার প্রেক্ষাপট ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ‘স্বাধীনতা-সাম্যকে’ উল্টোপথে পাঠানো হয়েছিল। যা পরবর্তীকালে পুনরুদ্ধার করেন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। বাঙালী রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দেয়া পিতা এবং পরিবারের সবার মৃত্যু, এরপর দীর্ঘদিন ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরবাসে জীবনযাপন করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও শেখ হাসিনা ন্যায়ের স্বপ্ন ছাড়েননি। তাঁর এই দীর্ঘ সংযম এবং শান্ত-সাহস জনগণকে শিখিয়েছে, ‘ডযবৎব ঃযবৎব রং হড় যড়ঢ়ব ঃযবৎব রং ধ যড়ঢ়ব ঃযধঃ রং যড়ঢ়ব’। গানের ভাষায়, ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে।’ শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে ইংরেজ সমালোচক ও লেখক জর্জ ওয়াশিংটন কারভারের একটি উক্তি উল্লেখ্য, ‘ডযবৎব ঃযবৎব রং হড় ারংরড়হ, ঃযবৎব রং হড় যড়ঢ়ব’। বাঙালীর স্বপ্ন-সাহস শেখ হাসিনায় স্বাধীনতা-সাম্য প্রতিষ্ঠার সেই দুরন্ত ‘ভিশন’ ছিল। তিনি বাঙালীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং নিয়ে গেছেন সেই বাস্তবতায়- যেখানে বাঙালী গর্জন-হুঙ্কারে তছনছ করেছে সকল মৌলবাদ এবং স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার বুলেট-বেয়নেটকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব স্পর্ধায় ধর্মীয় পুঁজিবাদের ‘মালিক-ঠিকাদার-সিন্ডিকেট এবং গুদামধারীরা’ হয়েছেন নিঃস্ব। সেই সঙ্গে সর্বব্যাপী পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাঙালীর সেই হাজার বছরের পুরনো সহজিয়া সংস্কৃতি। যে সংস্কৃতির মুখ এবং মানসিক আহ্বান, ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম’। অর্থাৎ আবহমান বাংলার সেই ঐক্যের সংস্কৃতি। যার সুরধ্বনি পূর্বেই গেয়ে গেছেন তাঁরই পিতা শেখ মুজিব। আর এ কারণেই কিছু প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রতিবিপ্লবীদের ফাঁকা বুলি আজ শেখ হাসিনার বিপক্ষে। তবে তিনি প্রমাণ করে চলেছেন কোন কূটকৌশল কিংবা সাম্প্রদায়িক জোট তাঁর নেতৃত্বে চলমান বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতে পারবে না। ধর্মের ভিত্তিতে কেউ সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু হিসেবে কোন সুযোগ নিতে পারবেন না। আনন্দের বিষয় হলো, ধর্ম নয় ভাষার ভিত্তিতেই সকলকে বিবেচনার একটা বিষয় লক্ষ্য করা যায়। আর এটা চমৎকার এবং নান্দনিক। কারণ, ‘বাংলাদেশের’ স্বাধীনতা সংগ্রাম মূলে ছিল সাংস্কৃতিক বৈপরীত্য, ধর্ম নয়। সেই হিসেবে এই রাষ্ট্রের প্রতি সকল ‘বাংলা’ ‘ভাষাভাষীর’ রয়েছে সমান অধিকার এবং দায়িত্ববোধ। আর সেই মূল সুরেই আজ বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার কর্ম-সংস্কৃতিই জাতিকে আশান্বিত করে, ক’দিন বাদে হয়ত সংখ্যালঘু শব্দটি জাদুঘরে স্থান পাবে। তাঁর শান্ত-সাহস ও কর্মযজ্ঞে আজ বাংলার সর্বজন পাচ্ছেন সমান সুবিধা। উদাহরণ প্রসঙ্গে মসজিদের ইমাম এবং খাদেমদের সম্মানিত এবং স্বাবলম্বী করতে শেখ হাসিনা সরকার তাঁদের জন্য সরকারী স্কেলে বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছেন। ৮৭২২ কোটি টাকায় ‘প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করার পরিকল্পনা করেছেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ অন্য মানুষদের জন্য তাঁদের ধর্ম উপযোগী ক্রিয়া সাধন নিশ্চিত করেছেন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিগত দশ বছরে মোট ১,১১,৮৮৫টি বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং দুস্থদের মাঝে সর্বমোট ১৯৮,২৪,১৬,০০০ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। বৌদ্ধ বিহার, প্যাগোডা, শ্মশান মেরামত ও সংস্কারের জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হতে ১,২৯,০০,০০০ টাকা অনুদান এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে মোট ৪,১০,০০,০০০ টাকা দেশের বিভিন্ন অসচ্ছল বৌদ্ধ বিহারে বিশেষ অনুদান দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার শেখ হাসিনার অস্থি-শিরায়ও সকলকে নিয়ে এগোনোর প্রচেষ্টা বহমান। আর এই সম্মিলিত চেষ্টার কারণ শেখ হাসিনা জানেন এবং বোঝেন। তিনি জানেন জাতি হিসেবে সেই জাতিই সর্বোচ্চ বৈচিত্র্যপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং চমকপ্রদ, যার আছে হরেক রকমের ধর্মচর্চার পরিবেশ এবং আচরণগত অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি। লেখক : ছাত্রনেতা [email protected]
×