ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিএটির স্তালিন নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ১১:১১, ১১ জুন ২০১৯

  সিএটির স্তালিন নাটকের  উদ্বোধনী  প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নাটকের সঙ্গে দর্শককে সম্পৃক্ত করার দারুণ এক দৃষ্টান্ত। লবিতে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে কাঁচের বাক্সে রাখা জোসেফ স্তালিনের শবদেহ। এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বদানকারী বিশ্ব রাজনীতির পরাক্রমশালী একজন একনায়ক। চারদিকে ঝুলছে বিশাল বিশাল লাল পতাকা। তার মাঝে কালো রঙের কাস্তে ও হাতুড়ি এবং পাঁচ কোণা তারকা। এমন আবহে মিলনায়তনে প্রবেশের পূর্বে দর্শকের মাথায় পরিয়ে দেয়া হলো বিশেষ টুপি। যে টুপি কিনা স্তালিনসহ তার পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্যরা ব্যবহার করত। টুপি পরিহিত দর্শকরা প্রবেশ করলেন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে। উপভোগ করলেন স্তালিন নামের নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সোমবার সন্ধ্যায় প্রযোজনাটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়। মঙ্গল ও বুধবার একই মঞ্চে এর দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রদর্শনী হবে। নাটকটি মঞ্চে এনেছে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার (সিএটি)। নির্দেশনা দিয়েছেন কামালউদ্দিন নীলু। এটির বাংলা ভাষান্তর করেছেন রায়হান আখতার। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে কামালউদ্দিন নীলু বলেন, স্তালিন একজন গণনায়ক ও কর্তৃত্ববাদী শাসক। পাশাপাশি তিনি এমন এক বিশাল ছায়া, যা তার মৃত্যুর পরও দুনিয়াকে আবিষ্ট করতে পারে। নাটকে নিবন্ধিত ঘটনা, তার রূপ-গন্ধ-মেজাজে স্পষ্টই সোভিয়েত ইতিহাস গেঁথে আছে। এটি ক্ষমতাবৃত্তের এক আশ্চর্য নমুনা; যেখানে একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক আত্মবিস্তারের অনিবার্যতায় তার চারপাশে চাটুকারের দল জড়ো করেন। এই চাটুকাররাই পরগাছার মতো শেষ করে দেয় তার স্বপ্ন। জোসেফ স্তালিনকে বিচ্ছিন্ন করে জনমানুষ থেকে এবং নিজেদের অপরাধ ঢাকতে মৃত্যুর পর তার চরিত্রকে হত্যা করতে থাকে বার বার। স্তালিনের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তার ছায়া এখনও আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। ছায়াটি আমাদের একের পর এক নির্দেশ দিয়ে যায়। আর আমাদের ওপর জমে থাকা মেঘ ধীরে ধীরে কালো হয়ে হারিয়ে যায় অন্ধকারে। নাটকে উঠে এসেছে এমন এক সময়ের গল্প যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন জোসেফ স্তালিন। তিনি মনে করতেন-মৃত্যুই সব সমস্যার সমাধান, মানুষ না থাকলে সমস্যাও থাকবে না। নাটকের আইজেনস্টাইডনের একটি সিনেমা দেখছিলেন স্তালিন। সেটি দেখার মাঝপথে স্তালিন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনাটি ঘটে স্তালিনের বাগানবাড়িতে। সেখানে তিনি ডেকে পাঠান তার পলিটব্যুরোর সদস্যদের। যদিও সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন স্তালিনের মেয়ে সভেৎলানা,তার সেক্রেটারি আলেকজান্ডার পসক্রেবিশেভ এবং দেহরক্ষী মেজর ভ্লাসিক। কিন্তু পলিটব্যুরোর সদস্যরা উপস্থিত হওয়ার আগে সেখানে উপস্থিত হন স্তালিনের গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান নিকোলাই ইয়েঝভ। স্তালিনকে তিনি একটি তালিকা ধরিয়ে দেন যেটিতে তিনি লিখে এনেছেন; পলিটব্যুরোর সদস্যদের মধ্যে কাকে কাকে ছাঁটাই করতে হবে। এর পর নিকোলাই ইয়েঝভ চলে যান এবং উপস্থিত স্তালিনের পলিটব্যুরোর সদস্য ক্রুশ্চেভ মলোতভ, মালেনকভসহ কয়েকজন। স্তালিন তাদের সঙ্গে রাজনীতির এক জটিল ও নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠেন এবং স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে তিনি একের পর এক মৃত্যু পরোয়ানা জারি করতে থাকেন। তার এক সময়কার সহকর্মী নিকোলাই বুখারিনকে গ্রেফতার করেন এবং লোকদেখানো বিচার কাজ চালিয়ে মৃত্যুদন্ড দেন। এদিকে তার আরেক সহকর্মী ট্রটস্কি নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাকেও মেরে ফেলার জন্য তার গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান নিকোলাইকে নির্দেশ দেয়া হয়। স্তালিনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনে বাকস্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যায়। তিনি মায়ারহোল্ডকে গ্রেফতার করেন। তারপর তাকে প্রচন্ড নির্যাতন করেন এবং মৃত্যুদন্ড দেন। স্তালিনের এই নিষ্ঠুরতার কারণে পলিটব্যুরোর সদস্যরা সব সময় মৃত্যুভয়ে ভীত থাকেন। ফলে স্তালিনের চারপাশে তৈরি হয় চাটুকারের দল। স্তালিন তার পৈশাচিক আচরণ ও বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সহকর্মীদের কাছ থেকে তো বটেই পরিবারের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হওয়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনার কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি স্তালিন। এ কারণে মেয়ে সভেৎলানার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। আর এভাবেই স্তালিনের মতো একজন একনায়ক জীবন সায়াহ্নে পুরোপুরি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। এক সময় তার মৃত্যু হয়। সব মিলিয়ে নাটকে কাজ করেছেন ২০ জন। মঞ্চে কাজ করেছেন ১৫ জন। স্তালিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রায়হান আখতার ও শাহাদাৎ হোসেন। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিনা সুলতানা, একে আজাদ, মোহাম্মদ রাফী সুমন, শাওন কুমার দে, শিপ্রা দাস, শান্তনু চৌধুরী, সুব্রত প্রসাদ বর্মণ, মর্জিনা মুনা, মেজবাউল করিম, চিন্ময়ী গুপ্তা, কাবেরী জান্নাত প্রমুখ। ১০ মিনিটের বিরতিসহ নাটকের ব্যাপ্তি ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। কাল বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নাটকটির মোট তিনটি প্রদর্শনী হবে। টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছে ১০০০, ৫০০, ৩০০ ও ২০০ টাকা।
×