ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শনির আখড়ায় বহুতল ভবনে বিস্ফোরণ ॥ নিহত ১, আহত ৫

প্রকাশিত: ১১:১০, ১১ জুন ২০১৯

শনির আখড়ায় বহুতল ভবনে বিস্ফোরণ ॥ নিহত ১, আহত ৫

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর শনির আখড়ায় বহুতল আরএস টাওয়ারে বড় ধরনের বিস্ফোরণে একজন নিহত ও আহত হয়েছে পাঁচ জন। বিস্ফোরণে ভবনের দোতলা ও তৃতীয় তলার দেয়াল ছাড়াও ফ্লোর ধসে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ভবনের তৃতীয় তলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে তৃতীয় তলার একপাশের দেয়াল ধসে নিচে পড়লে চাপা পড়ে রিক্সাযাত্রী টুপি ব্যবসায়ীর ফরিদ আহম্মেদ মারা যায়। এই তলায় একটি বেসরকারী ব্যাংকের শাখা আছে। গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে আগুন লেগে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের তরফ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে সোমবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠিত হয়নি। সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কদমতলী থানাধীন ধনিয়ার নয়াপাড়ার ১ নম্বর মসজিদ রোডের ৩৩৬ নম্বর তিন তলা আরএস টাওয়ারে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পোস্তগোলা স্টেশন জানায়, ভবনটির দোতলা ও তৃতীয় তলায় এক্সিম ব্যাংকের শনির আখড়া শাখা অবস্থিত। আচমকা বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে আশপাশ কেঁপে ওঠে। প্রচন্ড বিস্ফোরণে তৃতীয় তলার দেয়াল ধসে নিচে পড়ে আগুন ধরে যায়। প্রচন্ড বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে নিচে পড়লে সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় চাপা পড়ে ফরিদ আহম্মেদ (৫২) নামের এক টুপি ব্যবসায়ীর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। আহত হন এক নারী ও রিক্সাচালকসহ অন্তত পাঁচ। আহতদের মধ্যে ভ্যানচালক সাইদুল (৩০), ফল ব্যবসায়ী জাকির (৩৫) ও বেকারির ম্যানেজার কামাল হোসেন (৪০) ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, আহত তিনজনের দু’জনের মাথায় আঘাত লেগেছে। অপরজনের দুই হাতে আঘাতসহ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত। ফায়ার সার্ভিসের পোস্তগোলা শাখার ফায়ারম্যান মোহাম্মদ হানিফ জনকণ্ঠকে বলেন, বিস্ফোরণের পর তিন তলায়, আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণে দেয়ালের কিছু অংশ ধসে পড়লে হতাহতের ঘটনা ঘটে। অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট মাত্র আধঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের জোন-৬ এর উপ-পরিচালক মোঃ নাজমুজ্জামান জানান, হতাহতদের সবাই নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ভবনটির দোতলা ও তৃতীয় তলায় এক্সিম ব্যাংকের শনিরআখড়া শাখা। নিচ তলায় সূর্য্য বানু রেস্তরাঁ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বোঝা যায়, তৃতীয় তলায় এক্সিম ব্যাংক থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনটির সামনের দেয়াল, দোতলার সামনের দেয়াল, আশপাশের ভবনের দেয়াল, দ্বিতীয় ও দ্বিতীয় তলার ফ্লোরের ছাদ ধসে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডেকোরেশন। এসি, সেপটিক ট্যাঙ্ক অথবা গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এমন বড় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। তবে আলামত বলছে, গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল জনকণ্ঠকে জানান, ঘটনা তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ তদন্ত কমিটি হয়নি। নিহত ফরিদ আহম্মেদের চাচাত ভাই মোহাম্মদ আলম জনকণ্ঠকে জানান, ফরিদ পরিবার পরিজন নিয়ে ধনিয়ায় বসবাস করত। তার স্ত্রী ছাড়াও এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। একমাত্র ছেলে ধ্রুব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। মেয়ে চুমকি স্থানীয় একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। ফরিদ ধনিয়া একটি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করে আসছিলেন। তার একটি টুপির কারখানা আছে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে রিক্সায় করে ফ্যাক্টরিতে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। ধসে পড়া দেয়ালের কিছু অংশ তার মাথায় পড়ে। সে রিক্সা থেকে পড়ে দেয়ালসহ পাশের আরেকটি দেয়ালের সঙ্গে চাপা খায়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গ থেকে তার লাশ ফেনীর পরশুরাম থানাধীন চারিগ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফনের কথা। তার মৃত্যুতে পরিবারটি মারাত্মক বেকায়দায় পড়ল। দাফন শেষে ঢাকায় ফিরে এ বিষয়ে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
×