ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নুসরাত হত্যা মামলার চার্জ গঠন ২০ জুন, ৫ জনকে অব্যাহতি

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১১ জুন ২০১৯

 নুসরাত হত্যা মামলার চার্জ গঠন ২০ জুন, ৫ জনকে অব্যাহতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী, ১০ জুন ॥ সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার ধার্য তারিখ সোমবার দুপুরে ফেনী কারাগার থেকে চার্জশীটভুক্ত ১৬ জনসহ ২১ জন আসামিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতে চার্জশীট গ্রহণের ওপর শুনানি চলাকালে সরকার পক্ষের আইনজীবী ও বাদীর আইনজীবী মামলাটির চার্জশীটে জমা দেয়া তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেন। আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা চার্জশীট গ্রহণের বিরোধিতা করেন এবং এ মামলা আদালতে চলতে পারে না বলে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের বিচারক (জেলা জজ পদমর্যাদার) মোঃ মামুনুর রসিদ চার্জশীট গ্রহণ করেন। আদালতে চার্জশীটের ওপর শুনানি শেষে আসামি মাকসুদুল আলম, আফসার উদ্দিন, ইফতেখার উদ্দিন রানা, নুর উদ্দিন, রুহুল আমিন, মোঃ শামিমের জামিন আবেদন করেন আসামিদের আইনজীবীরা। আদালতের বিচারক আসামির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করে তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সব আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ২০ জুন ধার্য রেখে চার্জ গঠনের জন্য নির্ধারণ করেন এবং এর পর সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে বলে উল্লেখ করেন। এ মামলায় কারাগারে আটক থাকা চার্জশীটের বাইরের পাঁচ আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত। এরা হলেন নূর হোসেন, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্লা, সাইদুল ও আরিফুল ইসলাম। আদালতে চার্জশীটের ওপর শুনানিকালে বাদী পক্ষের আইনজীবী ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ স্বরে কথা বলা শুরু করেন। তখন আদালতের বিচারক সবাইকে শান্ত থেকে মামলা পরিচালনা করার জন্য বলেন এবং আদালতে ন্যায় বিচার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিচারক বলেন, আদালতের পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার কারণে ন্যায় বিচার বিঘ্নিত হতে পারে। তাই শান্তভাবে মামলা পরিচালনা করুন। আসামি আওয়ামী লীগ সোনাগাজী উপজেলা সভাপতি রুহুল আমিনের আইনজীবী আওয়ামী লীগ জেলা কমিটির সদস্য ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন বাহার বলেন, তার মক্কেল রুহুল আমিন অসুস্থ রাজনীতির শিকার। একটি চক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আসামি পক্ষের অপর আইনজীবী এ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নানু বলেন, পিবিআই মনগড়াভাবে চার্জশীট দিয়েছে, তারা উচ্চ আদালতে যাবেন, হাইকোর্টে এ চার্জশীট অবৈধ হয়ে যাবে। পিবিআই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলার চার্জশীটে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৪ (১) ও ৩০ ধারা দিয়েছে। এই মামলা এ ট্রাইব্যুনালে চলতে পারে না, এ মামলা চলতে হবে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৩০২ ধারায়। আসামি পক্ষের আইনজীবী কাজী বুলবুল সোহাগ বলেন, কয়েকজন আসামি আদালতে তাদের ১৬৪ ধারা জবানবন্দী প্রত্যাহারের জন্য ১৬৫ ধারায় ডিনাইল আবেদন করেছে। চার্জ গঠনের দিনসহ পরবর্তী কার্যক্রমে এ আবেদনগুলো উপস্থাপন করা হবে। বাদীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, আদালতে চার্জশীট গ্রহণ করায় মামলাটি দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণ পর্বে যাবে। ফলে দ্রুত এ মামলার কার্যক্রম শেষ হবে এবং ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে। দ্রুত বিচার আদালত বা এ ট্রাইব্যুনাল যেখানে বিচার হয় তা যেন ন্যায় বিচার হয় তার জন্য দেশবাসী প্রত্যাশা করছে। নুসরাতের ভাই মামলার বাদী মাহমুদুল হক নোমান বলেন, চার্জশীটের বিষয় তিনি সন্তুষ্ট। মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয় তার প্রত্যাশা করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মামলার কাগজপত্র নেয়ার জন্য জরুরী ফি দিয়ে আবেদন করছেন বলে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। উল্লেখ্য, গত ২৯ মে বুধবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর শাহআলম আদালতে ১৬ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট জমা দেন। আমলি আদালতে এ মামলার চার্জশীট গ্রহণের এখতিয়ার না থাকায় আদালতের কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে গত ৩০ মে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন আদালতের বিচারক মোঃ জকির হোসেন। গত ৩০ মে আদালতে আসামিদের উগ্র ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে সোমবার সব আসামিকে সকালে কারগার থেকে কোর্ট হাজতে না এনে দুপুরে আদালত চলাকালে সরাসরি আদালতে আনা হয় এবং মামলার কার্যক্রম শেষে করাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল থেকে আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ, পিবিআই মোতায়েন করা হয়। টহলে রাখা হয় র‌্যাব টিম।
×