ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যন্ত এলাকায় কর্মসংস্থান হচ্ছে ;###;শহুরে স্বপ্ন ডানা মেলছে গ্রামে

সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা গ্রামের আলোচনায় ॥ তারুণ্যের মুখে দিনবদলের গল্প

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১১ জুন ২০১৯

 সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা গ্রামের আলোচনায় ॥ তারুণ্যের মুখে দিনবদলের  গল্প

ওয়াজেদ হীরা ॥ গ্রামের নাম পলাশতলী। টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার শেষ প্রান্তের একটি গ্রাম। ঢাকায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সাফায়েত ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে এলাকার সমবয়সী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে নানা আলোচনায় ব্যস্ত। কেমন করে অতি দ্রুত সময়ে এমন একটি প্রত্যন্ত এলাকায় পাকা রাস্তাসহ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলো সেই গল্প বলেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি যে টিভিতে খেলা দেখছেন সেটিও যে উন্নয়নের একটি অংশ সেটি বোঝানোর চেষ্টা করেন এই তরুণ। এলাকার অন্যান্য তরুণ কিংবা মুরব্বি সবাইকে এটা স্পষ্ট করে বলেন যে, এটা দলীয় কোন বিষয় নয় এটাই সত্য যে আওয়ামী লীগ সরকার গত ১০ বছরে দেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। সামনে আরও সুদিন আসছে। দু’একজন অতি আওয়ামী লীগার বলে উঠে গেলেও উপস্থিত অধিকাংশই মুগ্ধ হয়ে শোনেন কথাগুলো। ঈদ উৎসবের ছুটিতে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর হাট-বাজারে দিন কিংবা রাতে সরকারের নানা উন্নয়নের আলোচনার দৃশ্য দেখা গেছে। কিছু কিছু কাজের সমালোচনা থাকলেও বর্তমান সরকারের প্রশংসাও ছিল বেশ। আলোচনা গ্রামে বসবাস করা মানুষগুলো বেশিরভাগ সময়ই শহরে বাস করা মানুষের মুখে শোনার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছে। বিশেষ করে যারা শহুরে শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবী তাদের কথাগুলো মুগ্ধ হয়ে শোনেন গ্রামের নানা বয়সী মানুষ। অতীতে জরাজীর্ণ গ্রাম নতুনভাবে দেখে তারুণ্যের মুখে দিনবদলের গল্প শোনেন গ্রামের বয়স্করা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮-তে একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার বলা হয়েছে, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ। প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। বর্তমান সরকারের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে যাবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা-উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। ছেলেমেয়েদের উন্নত পরিবেশে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করা হবে। সুপেয় পানি এবং উন্নত মানের পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সুস্থ বিনোদন এবং খেলাধুলার জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। কর্মসংস্থানের জন্য জেলা-উপজেলায় কলকারখানা গড়ে তোলা হবে। ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি সর্বত্র পৌঁছে যাবে। উন্নয়নচিন্তার মধ্যে গ্রামকে স্থান দেয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা সাধুবাদও জানিয়েছেন। সে লক্ষ্য নিয়েই বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার এগিয়ে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, এখন আর শহর ও গ্রামের মধ্যে তেমন কোন তফাত দেখা যায় না। শহুরে মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, গ্রামে বসেও এখন তার অনেক কিছুই অনায়াসে ভোগ করা যায়। সরকারের কর্মপরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায় উন্নয়নের নানা দৃশ্য। এখনও যে সকল গ্রাম কিছুটা পিছিয়ে আছে সে দিকেও দৃষ্টি দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বছরে দুই ঈদের সময়ই বেশি গ্রামমুখী হয় শহুরে বসবাস করা মানুষ। নিজেদের বদলানো গ্রাম দেখে অবাক হয়ে যান তারা। গ্রামে এখন আর বিদ্যুত খুব একটা যায় না। প্রযুক্তির কল্যাণে ইন্টারনেট গ্রামেও চলে গেছে থ্রিজি সেবা। এছাড়াও এমন গ্রাম এখন আর দেখা যায় না যেখানেই ডিস নেই। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত বাড়ি কিংবা হাট বাজার। আড্ডাও চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। শহরে বসবাসরতদের মনে হয় এটাও যেন শহরই! পার্থক্য শুধু এদিক সেদিক তাকালে দেখা যায় ফসলের সবুজের মাঠ কিংবা পুকুর যা শহরে দেখা যায় না। শহরের তরুণ শিক্ষার্থীদের বাস্তবতার আলোকে বর্তমান উন্নয়ন নিয়ে নানা আলোচনা করতে দেখা গেছে। বায়োজেষ্ঠ্যরা সেই আলোচনায় গত ১০ বা বিশ বছর আগে গ্রামের চেহারা কেমন ছিল তা বলছেন। আর তরুণরা বলছেন আগামীতে কেমন হবে একেকটি এলাকা সেই কথা। বিভিন্ন উৎসব এলে সবার সাক্ষাতে আলোচনাগুলো বেশি সরব হয়। বেসরকারী চাকরিজীবী সবুজ উদ্দিন। ভালুকার আওলিয়ার চালা প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়িতে ঈদ করেন। বয়স্কদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার সময় নিজের চাকরির সুযোগ সুবিধার কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, এই যে কয়েক বছরে আমাদের এই রাস্তাটা পাকা হয়েছে এটি উন্নয়নের অংশ। এর ফলে কত মানুষের সুবিধা হয়েছে খেয়াল করেছেন। সবাই নিজেদের পণ্য হাট বাজারে নিতে পারছে অল্প খরচে স্বল্প সময়ে। আমরা পাকা রাস্তার কারণে বাড়িতে আসতে আগ্রহ করি বেশি। আগে কাঁচা থাকতে কি কাদাই না হতো। এছাড়াও বিদু্যূতের আলো থাকায় বাচ্চারা পড়াশোনা করতে পারছেন আরামে সে কথাও বুঝিয়ে বলেন তিনি। টাঙ্গাইল ময়মনসিংহের কমপক্ষে ১০টি প্রত্যন্ত গ্রামে নানা উন্নয়নের দৃশ্য দেখা গেছে। এর মধ্যে ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি, গারো বাজার, চৌরাস্তামোড়, পারকি রাস্তাগুলোর উন্নয়নের দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। এর বাইছে মধুপুর আনারসের এলাকা হিসেবে খ্যাতি থাকলেও এক সময় এর আশপাশের গ্রামগুলোতে চলাচলের রাস্তাগুলো ছিল খুবই নাজুক। এখন আর সেই দৃশ্য নেই। পিচঢালা পথে মানুষ ঘুরতে আসে আনারসের বাগান দেখতে। এ সময় দর্শনার্থীরা আলোচনা করেন রাস্তার উন্নয়নের কারণে এত সুন্দর দৃশ্য দেখা গেল। সখিপুরের ইছাদীঘি, কালমেঘা, ছাতিয়ারচালা, বেড়বাড়ি, তক্তারচালা নামক গ্রামগুলোতে এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। লালমাটির এই এলাকাগুলোতে আগে হারিকেন বা কুপিই ছিল ভরসা। গত কয়েক বছরে এসব এলাকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। জানা গেছে, সরকার নতুন নতুন বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিদ্যুত উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। নতুন নতুন এলাকায় বিদ্যুত সংযোগ হচ্ছে। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুত সুবিধাও বাড়ছে। অনেকেই এখন আর লাকড়ি দিয়ে চুলায় রান্না করেন না। গ্রামের অনেক বাড়িতেও এখন রান্না হচ্ছে রাইস কুকারে। বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় টিউবওয়েলের মধ্যে মোটর লাগিয়ে ট্যাঙ্কে পানি ওঠানো হচ্ছে। কষ্ট করে টিউবওয়েল চাপতে হয় না। আর এসব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য ঘরের প্যাটার্নেও আসছে পরিবর্তন। টিনের ঘরের বদলে গ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় দেখা যাচ্ছে ইটের তৈরি বিল্ডিং। অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে আগের তুলনায় পরিবারগুলোর জীবনমানেও উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রত্যন্ত এলাকার ঘরবাড়িতেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। যেখানে ছনের ঘর ছিল সেখানে উঠেছে টিনের ঘর, আর টিনের ঘরের জায়গায় এখন দেখা যাচ্ছে ইটের তৈরি ইমারত। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ খানা জরিপে দেখা গেছে, দেশে ২০১০ সালে ইট ও সিমেন্টের তৈরি বাসস্থানের হার ছিল শতকরা ২৫ দশমিক ১২ ভাগ, এটি ২০১৬ সালে বেড়ে ৩০ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে টিন ও কাঠের দেয়ালের হার ২০১০ সালে ছিল ৩৮ দশমিক ৪৬ ভাগ, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ১২ ভাগ। ২০১০ সালে বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে এমন পরিবারের হার ছিল ৫৫ দশমিক ২৬ ভাগ। ২০১৬ সালে বিদ্যুতের এই হার ৭৫ দশমিক ৯২ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ময়মনসিংহের শিল্প এলাকা হিসেবে খ্যাত উপজেলা থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী উপজেলায় লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। শিল্প এলাকাখ্যাত ভালুকার অনেক আঞ্চলিক রাস্তাঘাট অধিক গাড়ি চলাচলের কারণে প্রায়শ ভেঙ্গে যায়। যা এখন নতুন করে মেরামতের কাজ চলছে। রাস্তার উন্নয়নের কারণে উপজেলায় গ্রামগুলো এখন বেশ কর্মমুখর। মল্লিকবাড়ি থেকে দেবরাজ বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত সম্প্রতি ১০ কিমি. একটি পাকা রাস্তার কারণে বদলে গেছে কয়েক গ্রামের চিত্র। উপকৃত হয়েছে ইন্তাঘাট, সোনাখালি, ছিটাল, আউলিয়ারচালা গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার। বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নানামুখী কর্মে নিয়োজিত এলাকার নারীরাও। এসব গ্রামের উৎপাদিত নানা পণ্য নিয়ে সহজেই যাতায়াত করছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন গতি এসেছে তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নও হচ্ছে। দারিদ্র্য জয় করে প্রতিটি পরিবার এখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেন। অথচ কয়েক বছর আগেও কাঁচা রাস্তার কারণে এলাকার মানুষ বেকার সময় কাটাতেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে হাঁটুসমান কাদায় পরিণত হতো রাস্তাটি। এখন এলাকার প্রতিটি মানুষের আয় বেড়েছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থাও বদলে গেছে। বাচ্চাদের উন্নতমানের স্কুলে পড়াশোনা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুতই উপজেলাসহ অন্যান্য জায়গায় যেতে পারছেন গ্রামের মানুষগুলো। ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের কয়েকটি ইউনিয়নেও দেখা গেছে উন্নয়নের নানা দৃশ্য। এই উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে যেখানে গত দশবছর আগেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না বললেই চলে সেইসব জায়গায় এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই হয়েছে। টাঙ্গাইল সখিপুরের শেষ প্রান্তের গ্রাম দেবরাজ। এখানে যাতায়াত করতে একপাশে পাকা অংশ থাকলেও অন্যপাশ কাঁচা। তবে শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামটি। রাত দশটা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানো হয় তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে। এছাড়াও রয়েছে কোচিং সেন্টার। অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে দেখা গেছে গড়ে উঠেছে কিন্ডারগার্টেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদের মতে, মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ছে। পরিবর্তন আসছে উৎপাদন ব্যবস্থায়। অর্থনৈতিক অগ্রগতির হাত ধরেই বাংলাদেশে সামাজিক পরিবর্তন ঘটছে। সমাজে বাড়ছে শিক্ষার হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে তথ্য সংগ্রহ করে যে খানা আয় ব্যয় জরিপ করেছে, সর্বশেষ সেই খানা জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে : ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত মানুষ যে ধরনের খাবার গ্রহণ করত ছয় বছর পর অর্থাৎ ২০১৬-১৭ সালের জরিপে সেখানে পরিবর্তন দেখা গেছে। দেশের মানুষ এখন ভাত ও আটা কম খাচ্ছে। বাড়িয়েছে ডাল, শাক-সবজি, মাংস ও ডিম খাওয়া। ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে দ্বিগুণ হয়েছে ডিম খাওয়ার হার। মাছ গ্রহণের হার বেড়েছে। কমেছে দুধ, চিনি গ্রহণের হার। গরু ও খাসির মাংস গ্রহণের হারও কমেছে। বাইরের খাবার গ্রহণের হার কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়। ২০১৬ সালে খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় দাঁড়িয়েছে শতকরা ৫২ দশমিক ৩০ ভাগ যা ২০১০ সালে ছিল মোট ব্যয়ের শতকরা ৪৫ দশমিক ১৯ ভাগ। খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় বেড়ে যাওয়ার এই চিত্রটি উন্নয়নের একটি নির্দেশনা বলে মনে করছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। বর্তমানে দেশের কৃষকরাও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন। এতে করে নানা ধরনের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকার রাখছে বিভিন্ন এ্যাপ। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তথ্যের সহজলভ্যতার কারণে গ্রামের শিক্ষিত যুবকরা একক কিংবা জোটগতভাবে গড়ে তুলছেন বিভিন্ন খামার বা বাগান। আঙ্গারগারা গ্রামে বুলবুলন-জাহাঙ্গীর বন্ধুরা মিলে লেবুর বাগান করেছেন। উৎপাদিত পণ্যের সুফল মিলছে তাদের ঘরে। বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে পোল্ট্রি ফার্ম কিংবা গরুর খামারও। জুলহাস একজন শিক্ষিত যুবক। মাস্টার্স পাস করে চাকরি না পেয়ে গরুর খামার গড়ে তোলেন। এখন সফল খামারি। কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি গ্রামগঞ্জে এখন অকৃষি খাতের বিকাশ ঘটছে। ছোট ছোট শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। গ্রামের নারীরা এখন অবসরে গল্প-গুজব না করে তারা বিভিন্ন ধরনের কুটিরশিল্পভিত্তিক পণ্য তৈরি করছেন। এর মধ্য দিয়ে নারীরও আয় বাড়ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নও সামাজিক পরিবর্তনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আয়তো আছেই। ঘরের কাছেই বিকাশ কিংবা ব্যাকিং সেবা মিলছে। ফলে টাকা নিয়ে কারও কোনও দুশ্চিন্তা নেই। চলতি বছরের শুরুর দিকে সংসদে প্রশ্ন উত্তর পর্বে গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণে সরকারের নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় পার্টির সদস্য মোঃ মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশে কৃষি বিপ্লব, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতায়ন, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শীর্ষক কর্মসূচী গ্রহণ করছে। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুত ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদু্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×