ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুদক পরিচালক বাছির সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ১০:২৫, ১১ জুন ২০১৯

 শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দুদক পরিচালক বাছির সাসপেন্ড

মশিউর রহমান খান ॥ মামলা তদন্তের তথ্য আসামির কাছে ফাঁস করে দেয়ার অভিযোগে দুদক পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সংস্থা। একইসঙ্গে আসামির কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে পৃথক বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সোমবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছে তার মামলার তথ্যই ফাঁস করে দেন ওই পরিচালক। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অনুসন্ধানের তথ্য অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রকাশ করায় চাকরির শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে আলাদা বিভাগীয় তদন্ত হবে। উল্লেখ্য, গত রবিবার বিতর্কিত পুলিশের ডিআইজি মিজান একটি বেসরকারী টেলিভিশনে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা এনামুল বাছির তাকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন এবং তার সঙ্গে তদন্তের তথ্য বিনিময় করেন। একইসঙ্গে নগদ ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন ও আরও গ্যাসের একটি প্রাইভেটকার দাবি করেন তার কাছে। পরবর্তীতে এই পরিচালক তাকে আসামি হিসেবে মিজানুরকে বাদ দেয়া সম্ভব হবে না বলে আসামির স্ত্রী যিনি নিজেও দুদকের মামলার আসামি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যান ওই পরিচালক বলেন মিজান। তবে দুদক পরিচালক এনামুল বাছির মিজানের এ দাবি অস্বীকার করে বলেন, তিনি কারও কাছ থেকে কোন ঘুষ নেননি। তদন্তের স্বার্থে আসামির ঠিকানায় গিয়েছিলেন মাত্র। টেলিভিশনে প্রচারিত ওই সংবাদে ঘুষ লেনদেনের সপক্ষে ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের মোবাইল কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপও প্রচার করা হয়। এ বিষয়ে ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় রবিবারই দুদক সচিব দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই বাছিরকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, কমিশনের তথ্য অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে প্রকাশ করাটা কমিশনের চাকরিবিধির শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং সেই কারণে খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ এসেছে সেগুলোর তদন্তের স্বার্থে আমরা তাকে আজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। তবে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে আলদা তদন্ত হবে। তিনি বলেন, আপনি ঘুষ দিতে পারেন না। ঘুষ দেয়ার কথা বলতে পারেন না। তা আমাদের আইনে ফৌজদারি অপরাধ। ঘুষ দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরে মামলা হবে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, ডিআইজি মিজানের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের প্রতিবেদন এনামুল বাছির এখনও কমিশনে জমা দেননি। যেহেতু কোন রিপোর্ট প্রদান করেননি সেহেতু এনামুল বাছিরকে ওই অনুসন্ধানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এখন নতুন করে একজন পরিচালককে এই অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি মিজান এবং তার স্ত্রীর সম্পদের বিষয়ে যতটুকু অনুসন্ধান হয়েছে, তার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে নতুন যিনি দায়িত্ব পাবেন তিনি অনুসন্ধান শেষ করবেন। তিনি বলেন, দুদকের ৮শ’ ৭৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। কমিশন কোন একজন এমপ্লয়ীর ইন্টিগ্রিটির (সততা) বিষয়ে গ্যারান্টি দিতে পারে না। কিন্তু কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা হবে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফরেনসিক রিপোর্ট’ ছাড়া ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছিরের মধ্যে কথিত ঘুষ লেনদেনের অডিও ক্লিপের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়ের মন্তব্য করা মুশকিল। এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তে ডিজি পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তিনি দেখবেন সার্বিক বিষয়, ঘুষ লেনদেনসহ এনামুল বাছির কি করেছেন। উল্লেখ্য, এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত বছর জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে মিজানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ৩ মে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। প্রথমে এর অনুসন্ধান কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী। পরে এ দায়িত্ব পান এনামুল বাছির।
×