ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে নেয়া হবে কৌশল

বাজেটে কৃষি বিদ্যুত জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১১ জুন ২০১৯

 বাজেটে কৃষি বিদ্যুত জ্বালানি খাতে ২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে আগামী অর্থবছরে কৃষি, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। শুধু এই তিন খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৭ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকির ফলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে, শক্তিশালী হবে কৃষি অর্থনীতি। খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করার বিষয়টিও আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে উল্লেখ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতের জন্য ভর্তুকি হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হবে ৯ হাজার কোটি টাকা। ৯ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার ভর্তুকি থাকছে বিদ্যুত খাতের জন্য। এছাড়া এলএনজি আমদানিতে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেয়া হবে। কৃষি ও বিদ্যুত খাতে চলতি অর্থবছরের ন্যায় ভর্তুকি বরাদ্দ থাকলেও প্রায় তিনগুণ ভর্তুকি বেড়েছে এলএনজির মতো জ্বালানি আমদানিতে। দেশের বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে গ্যাসের সঙ্কট দূর করা হবে। এজন্য বেশি দামে এলএনজি আমদানি করে কমদামে তা উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি কমানোর কথা বলেছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় এখনই ভর্তুকি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এজন্য এই তিন খাতের বাইরেও প্রণোদনা, নগদ ঋণ সহায়তা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো হবে। সব মিলিয়ে নতুন অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৪২ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের চূড়ান্ত ঘোষণায় ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। রফতানি ও রেমিটেন্স বাড়াতে প্রণোদনা ও নগদ সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বৈধপথে রেমিটেন্স আনা হলে শতকরা ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে। এছাড়া এবারই সকল পণ্য রফতানিতে নগদ সহায়তার ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাজেট সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ সহায়তা বাজেটে প্রতিবছরই রাখা হয়। এবারও কোন কোন খাতে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ সহায়তা বাড়বে। রফতানি ও রেমিটেন্স বাড়াতে সরকার কাজ করছে। এ কারণে সকল পণ্য রফতানিতে প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা দেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স আনার প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু করা হয়েছে। প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠাতে উৎসাহিত করতে তাদেরও একটি প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী বাজেটে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। জানা গেছে, বিগত অর্থবছরগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসন্ন বাজেটেও ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। তবে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ প্রকৃত ব্যয় এর আগের অর্থবছরগুলোর তুলনায় বাড়লেও জিডিপির শতকরা হিসাবে তা অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজেটে এ খাতে জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সাধারণত, ভর্তুকি বেশি দেয়া হয় কৃষি ও খাদ্য খাতে। আর প্রণোদনা বেশি দেয়া হয় কৃষি, পোশাক রফতানি ও পাট খাতে। নগদ ঋণ দেয়া হয়ে থাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডসহ (পিডিবি) অন্য সংস্থাকে। তবে বিপিসি, পিডিবিকে যে নগদ ঋণ দেয়া হয় সেগুলোকে এক ধরনের ভর্তুকি হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে। কারণ এসব ঋণ সাধারণত সরকার ফেরত পায় না। যে কারণে পরে পুরো ঋণই অনুদান, ভর্তুকিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আসন্ন অর্থবছরে ভর্তুকিতেই বেশি বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ খাতে প্রাক্কলিত বরাদ্দ ২৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হবে বিদ্যুত খাতে। বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ প্রাথমিক প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। খাদ্যে ভর্তুকি ধরা হচ্ছে ৪ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। এছাড়া অন্য খাতের জন্য ৯ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনার জন্য ১৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। রফতানি নগদ প্রণোদনাও রাখা হচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকা। আর পাট খাতের জন্য ৫০০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। রেমিটেন্সের আহরণে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হবে। এ খাতের জন্য ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে, আসছে বাজেটে নগদ ঋণ খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃষিপণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিতে কৌশল নেয়া হবে ॥ আগামী বাজেটে কৃষিপণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করার কৌশল গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি ধানের দাম কমে যাওয়ায় সরকার চাল আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছে। একইভাবে কৃষি যন্ত্রপাতিসহ অন্য পণ্য আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দিয়ে রেখেছে সরকার। কৃষক যাতে উৎপাদিত ফসল ও পণ্যের ন্যায্যদাম পায় বিষয়টি আগামী বাজেটে নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ধানসহ কৃষকের উৎপাদিত সব ধরনের ফসল ও পণ্যের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি, বাজেট ঘোষণায় বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এদিকে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে গত কয়েক বছর বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিল্পেও নতুন সংযোগ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এখন এলএনজি আমদানি করে গ্যাসের সঙ্কট দূর করা হচ্ছে। চড়া দামে আমদানি করা এলএনজি সরবরাহে বাড়তি ভর্তুকি রাখতে হচ্ছে আগামী বাজেটে। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এর ফলে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে, বাড়বে শিল্পের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান।
×