ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বুথের টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্র ‘হিডেন কোবরা’

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১১ জুন ২০১৯

 বুথের টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্র ‘হিডেন কোবরা’

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশে অবস্থান করছে ‘হিডেন কোবরা’ নামের আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্র। ‘টুপকিন’ ম্যালওয়ার মাধ্যমে এই চক্র নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে ব্যাংকের এটিএম বুথ। এরপর ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় লেজারাস নামের যে আন্তর্জাতিক চক্রটি জড়িত ছিল সেই চক্রেরই সহযোগী হচ্ছে হিডেন কোবরা। ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করতে জালিয়াতি চক্রের ছয় ইউক্রেনের নাগরিককে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ‘লেজারাস’ নামের যে চক্রটি জড়িত ছিল সেই চক্রের সহযোগী হিডেন কোবরা এখন ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা উত্তোলনের জন্য ওঁৎ পেতে আছে। ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতির ঘটনার তদন্তে হিডেন কোবরা নামের আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যদের সন্ধান মিলেছে। এর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা একইভাবে জালিয়াতি করে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। বাংলাদেশের মিশন শেষ করে তারা ভারতে হানা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের ফাঁদে আটকে পড়ায় ভেস্তে যায় তাদের সব পরিকল্পনা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ‘টুপকিন’ নামে একটি ম্যালওয়ার ব্যবহার করে বুথের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে নিয়ে নেয় হিডেন কোবরা জালিয়াত চক্র। ওই ব্যাংকের সার্ভার থেকে বুথ মেশিনের সমস্ত যোগাযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা বুথ থেকে ইচ্ছে মতো টাকা উত্তোলন করতে পারে। টাকা উত্তোলনের সময় ব্যাংকের কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে যে নির্দেশনা আসার কথা, সেটি তখন দিয়ে থাকেন ওই চক্রের সদস্যরাই। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, গত ১ জুন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় এটিএম বুথ জালিয়াত চক্রের ৬ সদস্য। গ্রেফতারকৃতরা সকলেই ইউক্রেনের নাগরিক। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ভ্যালেন্টাইন সোকোলভস্কি (৩৭), শেভচুক ওলেগ (৪৬), ডেনিস ভিতোমেস্কি (২০), নাজারি ভোজনক (১৯), সের্গেই ইউক্রেনেটজ (৩৩) ও ভালোদিমির ট্রুশিনিস্কি (৩৭)। ওই চক্রের সদস্যরা যেসব এটিএম বুথের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেল, কাকরাইল, রামপুরার ডিআইটি সড়ক ও নিকুঞ্জ এলাকার। গত ৩১ মে প্রথমে মধ্য বাড্ডার বুথ থেকে টাকা চুরি হয়। বাকি সব বুথে চুরি হয় গত ১ জুন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৬ লাখ টাকা চুরির তথ্য পেয়েছ তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ দেখতে পেয়েছে, এটিএম বুথের টাকা চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল জালিয়াত চক্রের দুটি গ্রুপ। গত ১ জুন সন্ধ্যায় খিলগাঁওয়ের তালতলা এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা চুরি করতে যান ইউক্রেনের দুই নাগরিক। তাদের একজন ধরা পড়লেও পালিয়ে যান অপরজন। ওইদিন রাতেই রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন থেকে ইউক্রেনের আরও পাঁচ নাগরিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে ওই চক্রের এক সদস্য পলাতক রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩০ মে বিকেলে তুর্কী এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে আসেন সাত নাগরিক। পরদিনই ডাচ বাংলা ব্যাংকের মধ্য বাড্ডার দুটি বুথ থেকে ৪ লাখ টাকা চুরি করেন। ৬ জুন তাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। এই সাতজন ছাড়াও জালিয়াত চক্রে আর কারা আছে, তা শনাক্ত করতে ১৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা এবং বেরিয়ে যাওয়া ইউক্রেনের সব নাগরিকের তথ্য পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চাওয়া হয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেছেন, ব্যাংকের এটিএম বুথের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে ‘হিডেন কোবরা’ নামক একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ‘লেজারাস’ নামের যে চক্রটি জড়িত ছিল সেই চক্রের সঙ্গে এদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। বাংলাদেশের এটিএম বুথগুলোতে জালিয়াতি চক্র হানা দিতে পারে, এমন তথ্য তারা আন্তর্জাতিক একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আগেই জানতে পেরেছিলেন বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাবি।
×