ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যাত্রী পিষে মারা সেই চালক ভারতে পালানোর সময় নদী থেকে গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১০:২৩, ১১ জুন ২০১৯

যাত্রী পিষে মারা সেই চালক ভারতে পালানোর সময়  নদী থেকে গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে ভাড়া নিয়ে বিতন্ডার জেরে এক যাত্রীকে লাথি মেরে নিচে ফেলে বাসের চাকায় পিষে হত্যার ঘটনায় দায়ী বাস চালককে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পথে নদীতে ঝাঁপিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া থানা সীমান্ত এলাকার কংস নদী থেকে সোমবার বিকেলে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওই চালকের নাম রোকন উদ্দিন (৩৫)। সে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার লতিফপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে। জয়দেবপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান ও নিহতের স্ত্রীর ভাই জামাল উদ্দিন জানান, ঈদের ছুটি শেষে স্ত্রী পারুল আক্তারকে নিয়ে রবিবার ময়মনসিংহের শ্বশুরবাড়ি থেকে আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে চড়ে গাজীপুরের বাসায় ফিরছিলেন স্থানীয় স্কটেক্স এ্যাপারেলস পোশাক কারখানার গাড়িচালক সালাহ্ উদ্দিন (৩৫)। পথে তার সঙ্গে ভাড়া নিয়ে ওই বাসের কন্ডাক্টর, হেলপার, সুপারভাইজার ও চালকের বাগ্বিতন্ডা হয়। নিজেকে গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে সালাহ উদ্দিন মোট বাসভাড়া ৬শ’ টাকা থেকে কিছু টাকা কম দিতে চাইলে এ বাগ্বিতন্ডা হয়। পরে তিনি ভাড়ার পুরো টাকা পরিশোধ করেন। এ সময় বাসের কন্ডাক্টর ও সহকারীরা সালাহ উদ্দিনকে লাঞ্ছিত করে এবং হুমকি দেয়। বাগ্বিতন্ডার জেরে বাসের কন্ডাক্টর-হেলপার ও তাদের সহকারীরা সালাউদ্দিনকে মারধর করতে পারে এ আশঙ্কায় সালাউদ্দিন তার ভাই জামাল উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে গাজীপুরের বাঘেরবাজার বাসস্ট্যান্ডে আসতে বলেন। খবর পেয়ে জামাল উদ্দিন ওই বাস স্ট্যান্ডে এসে ভাই ও ভাবির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাসটি বাঘেরবাজার এলাকায় পৌঁছলে বাসের শ্রমিকরা লাথি মেরে সালাহ উদ্দিনকে বাস থেকে নিচে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ফেলে দিয়ে তার স্ত্রীকে না নামিয়ে চালক বাসটি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সালাহ্ উদ্দিন ও তার ভাই জামাল উদ্দিন গতিরোধের জন্য বাসের সামনে দাঁড়ালে চালক সালাউদ্দিনকে চাপা দিয়ে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে সালাউদ্দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে সালাউদ্দিনের স্ত্রীকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে মহাসড়কের আমতলা এলাকায় বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনার পর বাসটিকে স্থানীয় হোতাপাড়া এলাকার ফুয়াং কারখানার সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ফেলে রেখে বাসের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার ও সুপারভাইজারসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাসটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করলেও চালক, কন্ডাক্টর ও হেলপারসহ অন্যদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এ ঘটনায় রাতে নিহতের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাসের চালক, কন্ডাক্টর, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আসামি করা হয়। পুলিশ ঘটনার পর থেকেই পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। এদিকে জব্দ হওয়া বাসের ভেতর থেকে একটি মামলার রশিদ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই মামলার রশিদে চালকের তথ্য ও মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জয়দেবপুর থানা পুলিশ গাজীপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। সোমবার বিকেল চারটার দিকে ঘাতক বাসচালক রোকন উদ্দিন তার মা’কে নিয়ে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে জয়দেবপুর থানার এসআই আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রোকন উদ্দিন পার্শ্ববর্তী কংস নদীতে ঝাঁপ দেয়। এ সময় পুলিশও নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে রোকন উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সময় রোকন উদ্দিনের মা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যান। জয়দেবপুর থানার ওসি আরও জানান, মামলার অন্য আসামিদেরও শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে। ঘটনার সঙ্গে বাসের মালিক দায়ী থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। নিহত সালাহ উদ্দিন ঢাকার আলুবাজার এলাকার মৃত শাহাবউদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকার আতাউর রহমানের বাড়িতে স্ত্রীসহ ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার গাড়ি চালাতেন। নিহতের ছোট ভাই জামাল উদ্দিন ও স্ত্রী পারুল আক্তার জানান, ঈদের ছুটিতে বেড়াতে স্ত্রীকে নিয়ে সালাহ উদ্দিন গত শুক্রবার তার শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুরে যান। রবিবার সেখান থেকে গাজীপুরের কর্মস্থলে ফেরার পথে আলম এশিয়ার একটি বাসে ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে তার বাগ্বিতন্ডা হয়। বাসটি গাজীপুরের বাঘেরবাজার এলাকায় পৌঁছলে কন্ডাক্টর ও হেলপার তার ভাইকে লাথি মেরে বাস থেকে মাটিতে ফেলে দিয়ে ভাবিকে না নামিয়েই চালক বাসটি নিয়ে চলে যেতে চায়। এ সময় ভাবিকে বাস থেকে নামানোর জন্য বাসের সামনে দাঁড়িয়ে গতিরোধের চেষ্টা করলে চালক ভাই সালাহ উদ্দিনকে চাপা দিয়ে বাসটি নিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ওই বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে সালাহ উদ্দিন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এদিকে রাতে ওই বাসের কন্ডাক্টরকে শেরপুরের নন্দী বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার লতিফপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে বাস চালক রোকন উদ্দিন (৩৫) এবং শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার পোড়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে একই বাসের কন্ডাক্টর আনোয়ার হোসেন (৩০)। জয়দেবপুর থানার এসআই আব্দুর রহমান ভুইয়া ও সাদেকুর রহমান জানান, চালক রোকন উদ্দিনকে গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে অপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হয়। রাতে গ্রেফতারকৃত চালক রোকন উদ্দিনের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে কৌশলে একই বাসের কন্ডাক্টর আনোয়ারকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী নন্দী বাজার এলাকায় ডেকে আনা হয়। রাত ৯টার দিকে পলাতক আনোয়ার পুলিশে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ওই বাজার সংলগ্ন একটি নির্জনস্থানে এসে পৌঁছে। এ সময় পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা আনোয়ারকে গ্রেফতার করে। রাতেই গ্রেফতারকৃত দু’জনকে নিয়ে পুলিশ গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়।
×