ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অফিসপাড়ায় প্রথম দিন কেটেছে কোলাকুলি আর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে

রাজধানীতে ফিরছে মানুষ, ফেরেনি প্রাণচাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ১০:০৫, ১০ জুন ২০১৯

 রাজধানীতে ফিরছে মানুষ, ফেরেনি প্রাণচাঞ্চল্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের আনন্দটা একটু বেশিই ছিল লম্বা ছুটির কারণে। সেই আনন্দের রেশ নিয়ে তৃণমূল থেকে মানুষ ফিরতে শুরু করেছে কর্মস্থল রাজধানীতে। রবিবার থেকে কর্মব্যস্ততা শুরু হলেও মানুষের ভিড় বাড়েনি, বাড়েনি কোলাহল। সেই সঙ্গে ফিরে পায়নি চিরচেনা রূপ এই সপ্তাহটা এভাবেই কাটবে। রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে রবিবার থেকেই অফিস পাড়ায় মানুষের সমাগম থাকলেও বাড়েনি কোলাহল। অফিসে অফিসে এখনও ঈদের আমেজ। ঈদের ছুটি শেষে কর্মচঞ্চল রাজধানীতে প্রথম দিনে অফিসে চলছে কোলাকুলি আর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়। রাজধানীর সড়কে নেই সেই চিরচেনা যানজট। মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে না। উত্তরার বাসিন্দা সোরহাব সদরঘাটে আসেন স্ত্রী সন্তানদের নেয়ার জন্য। তিনি বলেন, উত্তরা থেকে সদরঘাট আসতে আমার আধ ঘণ্টার একটু বেশি সময় লেগেছে। যেটা আমরা সবসময় প্রত্যাশা করলেও ঈদের সময় ছাড়া পাওয়া যায় না। সদরঘাটে সিএনজি চালক জমির উদ্দিন বলেন, আসলে অফিস খুললেও এখনও ঢাকার এপার থেকে ওপার মানে মিরপুর বা উত্তরা যেতে ৩০-৪০ মিনিটের বেশি লাগে না। অথচ ক’দিনের মধ্যেই সেটি দু’তিন ঘণ্টায়ও যাওয়া যাবে না। এদিকে রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিভেজা ঢাকায় এখনও মানুষ নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ করে পার্ক বা সিনেমা হলগুলো বেশ ভিড়। বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স বন্ধ থাকায় এর আরেকটি শাখা সীমান্ত স্কয়ারে দর্শকের ভিড় বেড়েছে। এছাড়াও ব্লকবাস্টার যমুনা, বলাকা, রাজমনিসহ একাধিক সিনেমা হলে প্রচুর দর্শনার্থী দেখা গেছে। ফাহিম ও তার বন্ধুরা সিনেমা দেখতে এসে বলেন, আমরা শিক্ষার্থী এখনও বিশ্ববিদ্যালয় খোলেনি, যানজট এড়িয়ে আগেভাগেই চলে এসেছি। ঘুরে ঘুরে ফাঁকা ঢাকার মজা উপভোগ করছি। রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরি করেন তারা শনিবার রাত থেকেই ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। তবে কর্মজীবীরা ফিরতে শুরু করলেও রাজধানীর বড় একটা অংশ শিক্ষার্থীরা এখনও ফিরেনি। কেননা এখনও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এখনও বন্ধ রয়েছে। এ কারণে কর্মকর্তরা ফিরলেও তাদের অনেকের পরিবার ফেরেনি। নগরে অবস্থানরতরা বলছেন আগামী সপ্তাহ থেকে চিরচেনা দৃশ্যপট ফিরে পাবে রাজধানী যেখানে যানজট হবে আবার নিত্যসঙ্গী। অলি গলিতে মানুষ আর মানুষ। রাজধানীর অনেক অলিগলির রেস্তরাঁ এখনও বন্ধ। ইস্কাটনের বাসিন্দা তমিজ রমহান বলেন, দেখুন ঈদের সময় এত বেশি মানুষ গ্রামে যায় যে ফাঁকা ঢাকা তখন বেশি ভয় ভয় লাগে। অলিতে গলিতে মানুষ না থাকলে হাটতেও ভয় লাগে। দু’দিন ধরে মানুষের সমাগম কিছুটা বেড়ছে তবে পূর্ণতা পেতে এই সপ্তাহ চলে যাবে। এদিকে, রাজধানীর সড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপ না থাকায় ট্রাফিক পুলিশগুলোর দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে না। তারাও ঈদের আমেজ নিয়েই দায়িত্ব পালন করছেন। ফাঁকা রাজধানীর অনেক মোড়েই দায়িত্বরত সার্জেন্টদের বিভিন্ন অপরাধ করার জন্য গাড়ি বা মোটরবাইক চালকদের মামলাও দিতে দেখা যায়। কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত এক সার্জেন্ট বলেন, রাস্তা একটু ফাঁকা থাকলে অনেকেই অতিরিক্ত স্পিডে গাড়ি চালায়। আমরা এসব দেখছি। রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, পান্থপথ, ধানমন্ডি, মহাখালীসহ একাধিক স্থানে দেখা গেছে অনেক দোকনপাট খোলা আবার অনেকগুলোই বন্ধ। এদিকে, সকালে বৃষ্টির কারণে কিছুটা বিপাকে পড়েছিলেন অফিসগামী মানুষ। ঈদের পর এমনিতেই সব ধরনের পরিবহনের ভাড়া কিছুটা বেশি ছিল, বৃষ্টির কারণে সেই ভাড়া আরও কিছুটা বেড়েছে। এ নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা বাসের চালক-সহকারীর সঙ্গে তর্কেও জড়িয়েছেন। লঞ্চ আর ট্রেনে করে যারা ফিরছেন নগরে তাদের সমস্যা হচ্ছে এই ভাড়া নিয়ে বেশি। কেননা টার্মিনাল থেকে বের হয়ে সিএনজি অটোরিক্সা নিতে গেলেই অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে চালকরা। এতে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। অনেক যাত্রী এক সঙ্গে আসায় গুটিকয়েক সিএনজি অটোরিক্সা সুযোগ নিচ্ছে। রাজশাহী থেকে নগরে ফেরেন ইকরাম। তিনি বলেন, ঈদের আগেও বখশিশ, এখনও বখশিশ চাচ্ছে। কমলাপুর থেকে মিরপুর ভাড়া চাচ্ছে ৫শ’ টাকা। সিএনজি অটোরিক্সাওয়ালারা মিটারে যাবে না আবার মিটার কিছু বাড়িয়ে দিতে চাইলেও যাচ্ছে না। অনেকটা জিম্মি করে ভাড়া নিচ্ছে। সিএনজি অটোচালক জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা সারাবছরই গাড়ি চালাই। অনেক সময় আমরা মিটারে যাই না, এটা ঠিক- তবে বেশি ভাড়া চাই না, যা ভাড়া তাই চাচ্ছি। আরেক অটোরিক্সা ড্রাইভার বলেন, আমাদের সংসার আছে, সিএনজির মালিককে জমা খরচ দিতে হয় তাই ভাড়াও একটু বেশি। সরকারী কর্মকমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা ভবনের মতো কার্যালয়গুলোতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী এখনও কাজে যোগই দেননি। সরকারী কর্ম কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, অফিস খুলেছে তবুও অনেকটাই ফাঁকা। সোম-মঙ্গলবারই ছুটির রেশ কেটে যাবে। এদিকে, এদিনও রাজধানীর অন্যতম বিনোদন স্পট হাতিরঝিল, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেশ ভিড় ছিল। বিশেষ করে রাতের হাতিরঝিল যেন মানুষের হাট। মানুষ আর মানুষ রাস্তায় ওপরে বসে নিচে নৌকায় ঘুরে উপভোগ করছেন নানা দৃশ্য। এদিন কেউ কেউ পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানা ঘুরতে যান। এদিকে, ঈদের ছুটি শেষে সবাই ঢাকায় ফিরতে শুরু করলেও অনেককেই আবার ছুটি কাটাতে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। যারা ঈদে ছুটি পাননি, তারা ঈদের পঞ্চম দিন ছুটি নিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়জনের কাছে। কমলাপুর ও গাবতলীতে এমন অনেককেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মহাখালী বাস টার্মিনালে সবুজ নামের এক যাত্রী বলেন, আমি শেরপুর যাব। ঈদের সময় বাড়ি যাওয়া হয়নি। প্রাইভেট হাসপাতালে ডিউটি ছিল। যারা ছুটি নিয়েছিলেন তারা ফিরেছে আমরা যারা ছিলাম এখন যাচ্ছি। অনেক ইমার্জেন্সি সার্ভিসের ক্ষেত্রেই এমন ছিল। ফলে যারা ঈদের সময় দায়িত্ব পালন করেছেন তারা এখন ছুটছেন প্রিয় সানিধ্যে। ছুটে চলা বা ফিরে আসার এই চলা এই সপ্তাহেই চলবে। ঈদের আনন্দ আর প্রিয়জনদের স্মৃতি নিয়ে নতুন উদ্যমে জেগে উঠবে কর্মচঞ্চল শহর ঢাকা।
×