ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তার জালে থাকার ফলে ফাঁকা রাজধানী ছিল অঘটনমুক্ত

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১০ জুন ২০১৯

 নিরাপত্তার জালে থাকার ফলে ফাঁকা রাজধানী ছিল অঘটনমুক্ত

শংকর কুমার দে ॥ এবারের গোটা রমজান মাস ও ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিক দেখানোর দাবি করেছে পুলিশ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আলোচ্য সময়ে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বা গুপ্ত হত্যার ঘটনা, বৈদেশিক মুদ্রাসহ বড় ধরনের চোরাচালান ঘটনা ছিল অনুপস্থিত। বড় ধরনের ছিনতাই বা ডাকাতি কিংবা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি নিয়ে সহিংসতা হয়নি। ইউনিফর্ম পুলিশ, র‌্যাব, ডিবির সোয়াত বাহিনী, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্য, মহিলা পুলিশ দলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দশ সহস্রাধিক সদস্যের নিরাপত্তার জাল তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে রাজধানী ঢাকা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোটা রমজান মাসে ও ঈদ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসহ বিশেষ বিশেষ জায়গায় ব্যবস্থা করা হয় তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তা। যে কোন ধরনের আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়। জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীদের তৎপরতা রয়েছে এমন এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বেশি। বিশেষ নজরদারির মধ্যে রাখা হয় যুদ্ধাপরাধীদের দোসর ও জামায়াত-শিবিরের মদদপুষ্ট জঙ্গী গোষ্ঠী। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দান এবং আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণস্থান ও গেটগুলোতে বসানো হয় আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, উচ্চ আদালতসহ আশপাশের বসানো হয়েছে বিপুল পরিমাণ গোপন মুভি ক্যামেরা। পাশাপাশি রাখা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুলিশের বম্ব ডিজপোজাল ইউনিট দফায় দফায় তল্লাশি চালায়। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াডও ছিল তৎপর। সারাদেশের কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কড়া নির্দেশ ও নয়া কৌশল নিয়ে তদারকি করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, পুলিশের আন্তরিকতা, প্রচেষ্টা ও দায়িত্ব পালনের কারণে নগরীর প্রায় দুই কোটি লোক উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদ্যাপন করতে পেরেছেন। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কমিশনার বলেছেন, ঈদযাত্রা ও নিরাপত্তায় আমাদের আন্তরিকতার কম ছিল না। যারা ঢাকা থেকে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে নিজ গ্রামে গিয়েছেন, তাদের যাত্রা এবার অনেক ভাল ও আরামদায়ক ছিল। ঈদ করে যারা ফিরবেন তাদের যাত্রাও ভাল এবং আরামদায়ক হবে। ঈদের মধ্যে খালি বাসা-বাড়ি, মার্কেট বিশেষ করে স্বর্ণ মার্কেটের নিরাপত্তা বিধান আমাদের কাছে অত্যন্ত জরুরী ছিল। আমাদের কঠোর নিরাপত্তার কারণে এ আল্লাহর রহমতে বড় কোন ধরনের চুরি, ডাকাতি এই সময়ে হয়নি। আমাদের ক্রাইম বিভাগ, ডিবি, সিটিটিসি, ট্রাফিক বিভাগসহ সবার নিরাপত্তা বিধানে কাজ করেছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকায়, মহল্লায় মহল্লায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করেও অপরাধীদের অবাধ চলাচলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছু মিলে ভাল ছিল। আপনারা ঈদে অনেক কষ্ট করেছেন। ট্রাফিক অনেক কষ্ট করে যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে রেখেছে। আজ থেকে আমাদের আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে হবে। রবিবার সকালে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। এ সময় ডিএমপির অন্যান্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেছেন, এবারের ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করায় মানুষ নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নে আনন্দ বিনোদনের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রমজান ও ঈদের ছুটিতেও ছুটি না কাটিয়ে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কাজ করেছেন। প্রায দুই কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত মেগাসিটি অভিহিত রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেই নতুন রেকর্ড স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। পবিত্র রমজান মাস ও রমজান মাস শেষে ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজধানী ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ম্যাজিক দেখিয়েছে বলে আমরা দাবি করতে পারি। রাজধানীসহ দেশবাসীর কাছে এবারের রমজান মাস ও রমজান মাস শেষে ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের এক অভূতপূর্ব উন্নয়নে জনমনে বয়ে এনেছে ঈদ আনন্দ স্বস্তির নিশ্বাস।
×