ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হতাশার দিন শেষ, জাগুক বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১০ জুন ২০১৯

  হতাশার দিন শেষ, জাগুক বাংলাদেশ

যখন আমরা বাংলাদেশ ছেড়ে আসি তখন আর এখনকার বাংলাদেশে তফাৎ একটাই। এখন আপনি বাংলাদেশ বললে কেউ আঁতকে ওঠে না। এমন চোখে তাকায় না যার নাম বাঁকা চাহনি। একটা সময় ছিল বাংলাদেশ বলে চেনানোও ছিল মুশকিলের ব্যাপার। সবাই এক বাক্যে বলতেন; ইন্ডিয়া? খুবজোর নেক্সট টু ইন্ডিয়া। সে অপমান ঘুছিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশ শাসনে আসার পর থেকে বিজয় আমাদের একদিনের জন্যও ছেড়ে যায়নি। একের পর এক সাফল্য আর জয়ের ধারায় অনেকে মনে করতেন এসব সরকারী প্রচার। যেমনটা আগের জেনারেলদের আমলে ছিল হরহামেশার বিষয়। তারা কোনদেশে বেড়াতে গেলে ফেরার আগেই রটে যেত সাফল্যের বানোয়াট যত কেচ্ছা। সম্পর্কের নতুন দিগন্ত নামের উদ্ভট এক অনুষ্ঠানে এমন সব হাস্যকর খবর আর ছবি দেখানো হতো যাতে সত্যের লেশমাত্র ছিল না। এদের পতনের পর মানুষ জানত কতটা বানোয়াট আর ভুয়া ছিল সেসব গল্প। শেখ হাসিনার আগে খালেদা জিয়ার সরকারের কিছু অর্জন ছিল না এমন না। কিন্তু তার সবটাই খেয়ে ফেলেছিল তার সুযোগ্য বড়পুত্র। এমনই হাল, হেরেমের মতো দুর্গও আবিষ্কার হয়ে গেল পতনের পর। মানুষ সেসব বোঝার পরও আজ কেন দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগে তারও একটা হিসাব আছে বৈকি। একা শেখ হাসিনা তরী বেয়ে দেশকে যতটা এগিয়ে নিয়ে গেছেন বাকি মাঝি মাল্লারা পারেননি। তাদের কারও গায়ে বদনাম কারও শরীরে নিন্দার পোশাক। এর জন্য দায়ী তারাই। সুযোগ মানুষ দিয়েছে। পরিবর্তনের পালে হাওয়া লেগে বদলে যাওয়া স্বদেশ দেশে-বিদেশে বাংলাদেশীদের অহংকার। নাম উল্লেখ না করেই বলি এত এত অর্জন আর অগ্রগতি আমরা আগে দেখিনি। কিন্তু এরসঙ্গে জুটেছে অনেক উটকো ঝামেলা। এমন না যে আমাদের দেশে মানুষ কেবল একটি দল আর একমুখী রাজনীতি চায়। গণতন্ত্রের মূল কথাই হলো বহু দল বহুমতের সমন্বয়। আমরা কোনকালেই কোন গণতান্ত্রিক দেশ ছিলাম না। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ থেকে বুদ্ধিজীবী কারও মাথায় মূলত গণতন্ত্র খেলে না। ইতিহাস দেখুন এর উত্তর পেয়ে যাবেন। পাকিস্তান কোন কালে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করত? আজও তাদের জীবনে একনায়ক আর সামরিক নায়কদের দৌরাত্ম্য। সেদিক থেকে আমরা অনেক ভাল আছি। দেশে থাকি না বলে মাঝে মাঝে কিছু মানুষ আমাদের গালমন্দ করেন। কারও মতে দেশের বাইরে থেকে এমন লেখালেখি না কি নাজায়েজ। তারা ভুলে যায় অর্থনীতি আর রাজনীতিতে এখন নিজের দেশ কোন ভৌগোলিক সীমানায় আবদ্ধ কিছু না। দেশ সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটা বিস্তৃৃত তা বোঝার মতো মন বা অভিজ্ঞতা যাদের নেই তারাই এমন বলেন। মূলত আজকের দুনিয়ায় যে কোন দেশের প্রবাসী জনগোষ্ঠী এখন তাদের বড় শক্তি। বাংলাদেশের বেলায় এটা একদিকে যেমন শক্তি আরেক দিকে ভরসার প্রতীক। বাংলাদেশকে দেশের বাইরে প্রিয় আর বড় করার জন্য আমরা চাই সত্যিকার একটি সুশাসনের সমাজ। চাই এমন নেতা যিনি দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আলোয় ইতিহাসের অতীত গর্ব ভর করে আধুনিক করে তুলবেন। ভোটের আগে কোন দলের হয়ে ওকালতি করা অনুচিত। সেটা না করেও বলি, কে পারবেন এমন নেতৃত্ব দিতে? প্রজ্ঞা আর মেধা কি একদিনে তৈরি হয়? বঙ্গবন্ধুর পরিবার মানেই রাজনীতি। সে রাজনীতি পাকিস্তান নামের এক লৌহ শাসনের বিরুদ্ধে আজীবন প্রতিবাদের রাজনীতি। জেল জুলুম থেকে ত্যাগ সব মিলিয়ে এক অসাধারণ ইতিহাস। সে পরিবার থেকে বড় হয়ে ওঠা কেউ দেশ শাসনে থাকলে আমরা পারিবারিক রাজনীতি বলতেই পারি, কিন্তু অস্বীকার করতে পারি না এমন নেতার বিকল্প নেই। আমি বিস্মিত হয়ে দেখি আমাদের কথিত লেখাপড়া জানা বহু মানুষই শেখ হাসিনার ঘোর বিরোধী। তাদের পছন্দের খালেদা জিয়া। এ নিয়ে তর্ক করা বৃথা। যার যার পছন্দ তার তার। কিন্তু মুশকিল হলো তারা কোনভাবেই প্রমাণ করতে পারে না কি কারণে তারা এই সমর্থনে অন্ধ। ভারত বিদ্বেষ বা সংখ্যালঘু বিদ্বেষের পুরনো কাহিনী এখন অচল তারপরও এরা সে কূপ থেকে বেরুতে পারেনি। দেশ কিভাবে এগুবে কারা এগিয়ে নেবে বা কি তাদের আদর্শ কিংবা উদ্দেশ্য তার কোন ব্যাখ্যা ছাড়া এদের বর্তমান বুলি জাতি পরিবর্তন চায়। দেখুন, ঐ যে বদলে যাও বদলে দাও মিডিয়া তার সঙ্গে কেমন যোগসাজশ। বদলে দেবার নামে এদেশের তরুণ-তরুণীদের মাথা নষ্ট করার প্রজেক্ট কাজে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধ আর অতীতের অনিবার্য দু’একটা বিষয় সামনে রেখে বাকি সব বদলে দেয়ার নাম জাতিকে আধুনিক করা? বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন কিংবা চারজাতীয় নেতার সবাইকে আড়ালে আবডালে নিয়ে মেজরের রাজনীতিকে বেগবান করার কুমতলবকারীরাই আজ পরিবর্তনের পেছনে নেপথ্যে কাজ করছে। এদের জানা আছে কি হতে পারে। কি হবে। তারা নিরাপদ বলে বাকি কোন কিছুর কেয়ার করে না। তারা নিশ্চিত জানে সমাজে এক অদ্ভুত আঁধার নেমে আসবে। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। জামায়াত ও বিএনপি ছাড় দেবে না কাউকে। তারপরও এরা পরিবর্তনের নামে দেশকে আবার বিপদে ফেলার চক্রান্ত করছে। শুরুতেই বলেছি রাজনীতিতে গণতন্ত্র আর সব জায়গায় শেখ হাসিনার দোষ খুঁজে বেড়ানো মানুষগুলোর জীবনের কোথাও গণতন্ত্র কিংবা প্রগতির লেশমাত্র নেই। তারা এদেশকে পাকিস্তানী কায়দায় চালাতে চায়। যার পেছনে আছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র। সে কারণেই আমরা শঙ্কিত। আমরা অচলায়তন চাই না। এককেন্দ্রিক সবকিছু ভাল নয়। সেটাও চাই না আমরা। আমরা এবারের জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প দেখছি না। তার অবর্তমানে এখনও কোন নেতা বা নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি। এবার তরী বৈতরণী পার হলে সে জায়গায় হাত দেয়ার জন্য জাতি কাজ করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু পরিবর্তনের নামে নতুন কোন সর্বনাশের ফাঁদে পা দেয়ার আগে ভাল করে ভাবতে হবে জাতিকে। বিশেষত তারুণ্যের কাছে চাওয়া তারা যেন ভুল না করে। এমন কোন ভুল আমরা কোন সঙ্কটকালে করিনি বলেই আজকের বাংলাদেশ এমন এক অবস্থানে আসতে পেরেছে। এটা যেন ভুলে না যাই আমরা। সাধারণ নির্বাচন একাদশ জাতীয় নির্বাচন সুন্দর শান্তিময় হবে পজেটিভ একটা ফলাফল নিয়ে আসবে- এই হোক সত্য। বিএনপি থাকুক। আগামী দিনের সুষ্ঠু রাজনীতি আর গঠনমূলক বিরোধী দল হিসেবে তাদের বিকল্প নেই। নেতা নেতৃত্ব আর দলের আদর্শ ঠিক করে এগুলে তাদের মঙ্গল হবে। বাম বা ডান দল নামে পরিচিতদের ওপর মানুষের ভরসা নেই। তারা নামসর্বস্ব। তারা যদি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে জাতির দুশ্চিন্তা লাঘব হতো। সেটা হবার সম্ভাবনা কম। অথচ আমরা যৌবনে এদের ওপর আস্থা রেখেই বড় হয়েছিলাম। দুনিয়া থেকে বাম আদর্শ লোপাট না হলেও তার ভবিষ্যত নড়বড়ে। তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত রাজনীতিতে এবারের নির্বাচনের প্রভাব অনেক বেশি। তারা কাকে বেছে নেবে কাকে বিরোধীর দায়িত্ব দেবে তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের আগামী। আমরা এখন সবাই দর্শক মাত্র। [email protected]
×