ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাইলটের দায়িত্বহীনতা

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ১০ জুন ২০১৯

পাইলটের দায়িত্বহীনতা

বাংলাদেশ বিমানের একজন সিনিয়র পাইলট এবার চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিলেন। ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ ৫ জুন একটি ফ্লাইট নিয়ে কাতারে যান। দুর্ভাগ্যজনক হলো, তার সঙ্গে আদৌ কোন পাসপোর্ট ছিল না। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী একটি বিমানের পাইলট হয়ে পাসপোর্ট দেশে ফেলে রেখে তিনি কিভাবে বিদেশে পাড়ি জমালেন তা বোধগম্য নয় কিছুতেই। আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি বলেছেন, ভুলবশত তিনি পাসপোর্ট সঙ্গে নেননি। এহেন ভুল ও ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয় কোন অবস্থাতেই। তদুপরি পাসপোর্ট না দেখিয়ে তিনি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনইবা পার হলেন কিভাবে? এখানেও কর্তব্যে অবহেলা ধরা পড়ে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের। ফলে পাসপোর্ট ব্যতিরেকে ক্যাপ্টেন মাহমুদকে কাতার বিমানবন্দরে আটকে থাকতে হয় অন্তত ২৪ ঘণ্টা। ঘটনার শেষ নয় এখানেই। ফিনল্যান্ডে অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে আনার জন্য ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এই ক্যাপ্টেন। স্বভাবতই এরকম ন্যক্কারজনক ঘটনার পর তাকে সেই ফ্লাইট পরিচালনা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পাসপোর্টবিহীন পাইলটের বিমানে ভ্রমণ এবং শাহজালাল বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার তদন্তে গঠন করা হয়েছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তদন্তে যে বা যারাই দোষী সাব্যস্ত হোক না কেন দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশ্ন হলো, বারবার কেন প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটকে ঘিরেই এরকম ঘটনা ঘটবে? যেখানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও দেশের ভাবমূর্তির বিষয়টি জড়িত, সেখানে বারবার কেন এত অবহেলা? রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আদৌ কোন প্রশাসন আছে কিংবা কাজ করছে বলে মনে হয় না। ইতোপূর্বে নোজ হুইল বা নাকের ডগার চাকা ফেটে যাওয়ায় মাসকট থেকে আসা একটি বিমান চট্টগ্রামে না নেমে ঢাকায় জরুরী অবতরণে বাধ্য হয়। এতে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কমপক্ষে দু’ঘণ্টা সব ধরনের ফ্লাইটের ওঠানামা বন্ধ রাখতে হয়। ফলে ক্ষয়ক্ষতি এবং ব্যাপক যাত্রী দুর্ভোগের বিষয়টি সহজেই অনুমান করা যেতে পারে। ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর আগে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি বোয়িং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জরুরী অবতরণে বাধ্য হয় তুর্কমেনিস্তানে। প্রাথমিক তদন্তে ওই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাঙ্কের একটি নাট ঢিলা থাকায় এই বিপত্তি ঘটে। সম্প্রতি শাহজালালের নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে একাধিক ব্যক্তির আগ্নেয়াস্ত্র বহনসহ বিমান হাইজ্যাক চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে। উপর্যুপরি এসব ঘটনায় সহজেই প্রতীয়মান হয়, যে বা যারা বাংলাদেশ বিমানের প্রশাসন, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা ও উড্ডয়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের সবাই না হোক অন্তত অধিকাংশ অযোগ্য, অদক্ষ, অমনোযোগী, সর্বোপরি দায়িত্বজ্ঞানহীন। অবশ্য সর্বাধিক আলোচিত ঘটনা হাঙ্গেরিগামী প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের মারাত্মক ত্রুটি। প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন ভিভিআইপি নন, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা। সর্বোপরি তাঁর জীবনাশঙ্কা প্রবল। এর আগে তাঁকে বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ। সে অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ত্রুটি চিহ্নিত করাসহ দায়ীদের চিহ্নিত করতে গঠন করা হয় একাধিক তদন্ত কমিটি। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত এর তদন্ত ভার দেয়া হয়েছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে। ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে নেয়া হয়েছে রিমান্ডে। দুঃখজনক হলো, সেই তদন্ত রিপোর্টের অগ্রগতি সম্পর্কে জনগণ আদৌ কিছু জানে না। বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ বিমানের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করে একে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সেই কাজটি কে বা কারা দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে সম্পাদন করবেন তা সুস্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়।
×