ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

সঙ্গীতে শান্তি

প্রকাশিত: ০৮:১২, ১০ জুন ২০১৯

 সঙ্গীতে শান্তি

কোন এক ঝুম বৃষ্টির সন্ধ্যা। সামনে পরীক্ষা। কিন্তু পাগল করা হাওয়া, ভেজা বাতাস, মাটির সুঘ্রাণ ইত্যাদি যাবতীয় কাব্যিক উপকরণ হাজির থাকায় পড়ায় মন বসছিল না। ওদিকে চারপাশ থেকে ভেসে আসছিল অঝোর বর্ষণের অপার্থিব সুর। সঙ্গীত বা সুর বলতে আমরা আসলে যা বুঝি তার পুরোটাই মানসিক ব্যাপার। মানসিক অর্থাৎ মন সম্পর্কিত ব্যাপারগুলো আবার মানুষের খুব গর্বের বিষয়। কৈশোরে পড়া অসংখ্য সায়েন্স ফিকশন গল্পের সাধারণ একটা দৃশ্য থাকতো অনেকটা এরকম- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবটেরা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশের জোর দাবি জানাচ্ছে। বিদ্রোহী নায়ক তখন গলার রগ ফুলিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে আর বলবে, ‘ঐ কপোট্রনিক খুলিগুলো আর যা-ই পারুক, কখনও কি পারবে একটা সুর সৃষ্টি করতে? পারবে শেষ বিকেলে সূর্য ডোবার একটা মাস্টারপিস ছবি আঁকতে? বা একটা বৃষ্টির কবিতা লিখতে পারবে কখনো?’ ঐ যে মেয়েটা কানে হেডফোন গুঁজে অবচেতন মনে হেঁটে চলেছে। তার কি ভাবনা সেটা কেউ বলতে পারবে না, তবে এটুকু বলা যায় সে এই মুহূর্তে ভাল আছে। সে হয়ত তার প্রেমিকার কথা ভাবছে অথবা বব ডিলানের সেই How many road শুনে নিজেকে খুঁজে ফিরছে। সঙ্গীতের ওপর মানুষ এ ভালবাসা ঠিক কবে থেকে তার কোন সঠিক ইতিহাস কোন পাতায় লেখা নেই। তবে সঙ্গীত দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বৃষ্টি হোক বা না হোক, অবচেতন মনেই আমরা কিন্তু গুনগুনিয়ে গেয়ে ফেলি ‘আজ ঝর ঝর মুখরও বাদল দিনে’ অথবা ‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন’। মনকে সুস্থ রাখে সঙ্গীত। শুধু সুস্থই না সতেজও রাখে। আপনি সঙ্গীত শুনে যে আনন্দ পান তা হচ্ছে ইহজাগতিক। আমরা কেউ সকালে সঙ্গীত শুনতে পছন্দ করি, কেউ দুপুরে আবার কেউ ঘুমাতে যাই সঙ্গীত শুনতে শুনতে। সঙ্গীতের অন্তর্নিহিত অর্থ আছে। যারা সঙ্গীত স্রষ্টা তাদের ব্যক্তিগত জীবনের দর্শন এবং ধ্যান ধারণাই সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। আবার তাদের মনের অবস্থাও কথা এবং সুরে গান আকারে বেরিয়ে আসে। এ হতে পারে তার প্রেমিকা বিচ্ছেদ বা নতুন প্রণয়, হতে পারে কোন কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যাকে আমরা বলি বিপ্লবী গান। আবার হতে পারে মায়ের জন্য গান, হতে পারে ভাই কিংবা বোনের জন্য গান। হতে পারে তার কোন প্রিয় ব্যক্তির জন্য। আর সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে হরহামেশাই হয়েছে এবং হচ্ছে। গান কথা বলছে মনের। আমরা মানসিকভাবে যে যখন যে অবস্থায় থাকি তখন সেই ধরনের সঙ্গীত বেছে নেই। সঙ্গীতের বেশকিছু ঘরনা আছে যাকে ইংরেজীতে বলে জনরা (Genre) যেমন রক, পপ, ক্লাসিক, জ্যাজ, ব্লুজ, হিপহপ বা র‌্যাপ ইত্যাদি। রক, পপ বা ক্লাসিক ছাড়া আমাদের দেশে সঙ্গীতের সব ঘরনা তেমন বিকশিত হয়নি। তবে আমাদের দেশীও কিছু ঘরনা বহু আগে থেকেই ছিল যেমন বাউল, জারি, সারি, ভাওয়াইয়া কিংবা ভাটিয়ালি। যুগ যুগ ধরে এ ধরনের গান আমাদের পূর্বপুরুষদের খোরাক মেটালেও এখন আর সেই অবস্থায় নেই। আর নতুন কোন জারি বা ভাওয়াইয়া গান এখন সৃষ্টি হচ্ছে না। সঙ্গীতকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট হয়েছে এক ধরনের ব্যবসা। এতে সঙ্গীত রচনা করে গ্রাহক কিংবা প্রচার মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন রেকর্ড কোম্পানি, ব্র্যান্ড এবং ট্রেডমার্ক সহযোগে লেবেল এবং বিক্রেতা। এক হিসাব অনুুযায়ী ২০০০ সালের পর থেকে গানের শ্রোতার সংখ্যা অসম্ভব আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রোতারা ডিজিটাল মিউজিক ফাইলগুলোকে এমপি-থ্রি প্লেয়ার, আইপড, কম্পিউটার এবং অন্য বহনযোগ্য আধুনিক যন্ত্রে সংরক্ষণ করছেন। গানগুলো ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড কিংবা অনলাইনে ক্রয় করে মনের ক্ষুধা নিবারণ করছেন। ডিজিটাল মাধ্যমে গান সংগ্রহ ও দেয়া নেয়ার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্গীত ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। তবে ইন্টারনেট থেকে অবাধে বিনামূল্যে গান ডাউনলোড করার ফলে সঙ্গীতশিল্প এক ধরনের হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়া পাইরেসি মনের খোরাক মেটানো নির্ভেজাল এই বিনোদন শিল্পকে ঠেলে দিচ্ছে নিকষ আঁধারে।
×