ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা দক্ষিণে আরও ছয়টি নতুন কমিউনিটি সেন্টার হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ৯ জুন ২০১৯

 ঢাকা দক্ষিণে আরও ছয়টি নতুন কমিউনিটি সেন্টার হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আরও ছয়টি নতুন কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করতে চায় ঢাকা দক্ষিণের সিটি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে পুরনো আরও চারটি কমিউনিটি সেন্টারকে সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা হবে। পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙ্গে প্রতিটি ভবনকে নতুন করে ১০ তলার কমিউনিটি সেন্টার ভবন করে গড়ে তোলা হবে। নতুন করে নির্মাণ ও সংস্কারসহ মোট দশটি ভবনের কাজ করতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮৫ কোটি টাকা। এসব ভবনের কোন কোনটিতে কমিউনিটি সেন্টার ছাড়াও কমিশনারের কার্যালয়সহ নাগরিক সুবিধার্থে নানা সুযোগ-সুবিধা থাকবে। মূলত স্বল্প ব্যয়ে সামাজিক অনুষ্ঠান পালনে নাগরিক চাহিদা মেটাতে ও নাগরিকদের নানা সুবিধা একইস্থান থেকে দিতেই এসব কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। নাগরিক চাহিদা বিবেচনায় বেসরকারী আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন কমিউনিটি সেন্টারের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে এসব সেন্টারের সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এসব ভবন নির্মাণের জন্য ডিএসসিসি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নাগরিক জীবনমান উন্নয়নের সার্বিক দিক বিবেচনা করতে এসব ভবন অতিদ্রুত নির্মাণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। ডিএসসিসির প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, নতুন যেসব কমিউনিটি সেন্টার নির্মিত হবে সেগুলো হচ্ছে ১৬ নং ওয়ার্ডের ভূতের গলির ধানমন্ডি কমিউনিটি সেন্টার, ৬ নং ওয়ার্ডের মুগদাপাড়া আফির উদ্দীন কমিউনিটি সেন্টার, ৩৯ নং ওয়ার্ডে রাজধানী সুপার মার্কেটের সঙ্গে কাবলী তলায় মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ কমিউনিটি সেন্টার, ৫৪ নং ওয়ার্ডে একতা মার্কেটে ৫৪ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার, ৪৯ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার কাম আঞ্চলিক কার্যালয় (৫নং জোন), ১৮ নং ওয়ার্ডে নিউমার্কেট থানাধীন শহীদ লেফটেন্যান্ট কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন কমিউনিটি সেন্টার ও কমপ্লেক্স। এছাড়া ২০ নং ওয়ার্ডের সেগুনবাগিচা কমিউনিটি সেন্টার, ২৯ নং ওয়ার্ডের ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের জামাল সরদার কমিউনিটি সেন্টার, ৪৯ নং ওয়ার্ডের গোলাপবাগ মাঠ লাগোয়া ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার, ৫০ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী চন্দনকোঠার যাত্রাবাড়ী কমিউনিটি সেন্টারসহ মোট চারটি কমিউনিটি সেন্টারের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ লিফট, গ্যাস সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ডিএসসিসির প্রকৌশল শাখা সূত্র মতে, প্রতিটি ভবনকেই নাগরিকদের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দশ তলা করে নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে কার পার্কিং সুবিধা সংযোজন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস স্থাপন, ব্যাঙ্কুুয়েট হল, থিয়েটার হল, কমিউনিটি হেলথ ফেসিলিটিজ তথা নারী-পুরুষের আলাদা ব্যায়ামাগার, কমিউনিটি সার্ভিস বা ইনফরমেশন সার্ভিস, লাইব্রেরী, জিমনেসিয়াম, ইনডোর গেম ব্যবস্থা সংযোজন, কিডস সেন্টার, চাকুরে মায়েদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপনসহ নাগরিকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে আধুনিক সুবিধা সংযোজন করা হবে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে ভূতের গলির ধানম-ি কমিউনিটি সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়। দোতলা এ ভবনে দোতলা থানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিচতলায় কাউন্সিলরের অফিস। ডিএসসিসির স্বপ্ন মতে, ৬ দশমিক ৩৬ একর জমির ওপর নির্মিত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ভেঙ্গে ১০ তলা আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রায় ১৬ দশমিক ২৬ কাঠা জমির ওপর ’৮৭ সালে মুগদাপাড়া আফির উদ্দীন কমিউনিটি সেন্টারটি চারতলার। এর নিচতলায় কমিউনিটি সেন্টার থাকলেও সামনে মুগদা থানার জব্দ করা গাড়ি রাখার স্থান ছিল, এখন আর সেটি কেউ ব্যবহার করে না। এছাড়া দোতলা, তিন তলায় মুগদা থানার কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। চতুর্থ তলায় কাউন্সিলরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রায় ৬৬ দশমিক ৯৫ কাঠা জমির ওপর রাজধানী সুপার মার্কেটের সঙ্গে কাবলী তলায় ২০০১ সালের নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ কমিউনিটি সেন্টারটি মূলত র‌্যাব অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য দুটি হলরুম, নিচতলায় কার পার্কিং, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিস সবই ঝুঁকিপূর্ণ। অপরদিকে একতা মার্কেটে সম্পূর্ণ নতুন করে ৫৪ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার কাম কমপ্লেক্স হিসেবে ব্যবহারের জন্য ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রায় ২০ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ৪৯ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার কাম ৫ নং জোনের আঞ্চলিক কার্যালয়টি বর্তমানে একটি টিনশেড ও একটি দোতলা ভবন, যা বর্তমানে ওয়ার্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া নিউমার্কেট থানাধীন শহীদ লেফটেন্যান্ট কমোডর মোয়াজ্জেম হোসেন কমিউনিটি সেন্টার ও কমপ্লেক্সটি ১২ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হবে। ঢাকার ডিসির খাস জমি হিসেবে থাকা এই জমিটি বর্তমানে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ ১০ তলার কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। অপরদিকে সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত সেগুনবাগিচা কমিউনিটি সেন্টার পাঁচ তলা। এতে লিফট ও গ্যাস লাইন সংযোগ ও আনুষঙ্গিক মেরামত করা হবে। এছাড়া বাকি তিনটির সৌন্দর্যবর্ধনসহ সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করা হবে। এসব কমিউনিটি সেন্টার নির্মিত হলে বেসরকারী কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, স্বল্প ব্যয়ে অধিক সুবিধার মাধ্যমে সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধিকল্পে ও সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনায় আমরা পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ সেন্টারগুলো ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করতে চাই। মূলত যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাগরিক সুবিধা দিতেই এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানের কমিউনিটি সেন্টারগুলো অতি পুরনো, কয়েকটি ব্যবহারের অযোগ্য হওয়ায় বর্তমানে বন্ধ। একই সঙ্গে এসব কমিউনিটি সেন্টার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এলাকাবাসী এগুলো ব্যবহারে আগ্রহ দেখায় না। আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ঢাকা দক্ষিণে নতুন করে ৬ টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের ও আরও ৪ টি কমিউনিটি সেন্টারকে আধুনিক সুবিধা সংবলিত প্রস্তাব প্রেরণ করেছি। বর্তমানে তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণ ও সংস্কারে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৮৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত প্রতিটি ভবনকে দশ তলার আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভবন হিসেবে নির্মাণ করা হবে। এসব ভবনে একই সঙ্গে কাউন্সিলরের কার্যালয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুব্যবস্থা, তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিতে ব্যবস্থা থাকবে। ফলে একই স্থানে মিলবে নানা নাগরিক সুবিধা। এর মাধ্যমে কমিউনিটি সেন্টার কাম কমপ্লেক্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
×