ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোলার প্যানেল বসালেও তার অধিকাংশ নষ্ট পাওয়া যাচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:৩১, ৯ জুন ২০১৯

 সোলার প্যানেল বসালেও  তার অধিকাংশ  নষ্ট পাওয়া যাচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ গ্রাহকের আঙ্গিনায় গেলেই সোলার প্যানেল স্থাপনে অনিয়ম ধরা পড়ছে। দুই কিলোওয়াটের বেশি বিদ্যুত সংযোগের জন্য নির্দিষ্ট হারে সোলার প্যানেল স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গ্রাহক আগে সংযোগ পেতে সোলার প্যানেল ভাড়া নিয়ে বিদ্যুত সংযোগের পর তা ফেরত দিয়ে দিত। এখন প্যানেলটি ছাদে থাকলেও তা থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করে ব্যবহারের দিকে খুব একটা মনোযোগ নেই কারও। বিদ্যুত বিভাগ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে তাদের গ্রাহকের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দিতে বলে। এরমধ্যে দুটি বিতরণ কোম্পানি তাদের কিছু গ্রাহকের আঙ্গিনা পরিদর্শন করেছে যেখানে সোলার প্যানেল স্থাপনে অনিয়ম পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্যানেল থাকলেও তা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয় না। বিদ্যুত সংযোগের নীতিমালায় বলা হয়েছে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে দুই কিলোওয়াট এর অধিক লোড বরাদ্দের ক্ষেত্রে গ্রাহককে মোট চাহিদার ৩ ভাগ লোডের জন্য সোলার প্যানেল বসাতে হবে। শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত লোড বরাদ্দ প্রাপ্ত গ্রাহকদের শুধুমাত্র লাইট ও ফ্যান লোডের ৭ ভাগ, ৫০ কিলোওয়াটের উর্ধে লোড বরাদ্দ পাওয়া গ্রাহকদের লাইট ও ফ্যান লোডের ১০ ভাগ এবং পোশাক শিল্পের জন্য লাইট ও ফ্যান লোডের ৫ ভাগ এর জন্য সোলার প্যানেল বসাতে হবে। বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এই নীতিমালা অনুসরণ করেই সংযোগ দেয়া হয়। গ্রাহক সংযোগ পাওয়ার জন্য ঠিকই ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করে থাকে। কিন্তু সেই সোলার প্যানেলে বিদ্যুত উৎপাদনের খবর রাখেন না অনেকে। দক্ষিণ পশ্চিমের ২১ জেলায় বিদ্যুত বিতরণকারী কোম্পানি ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) তাদের সোলার প্যানেল লাগানো এক হাজার ৬৬০টি গ্রাহকের আঙ্গিনা পরিদর্শন করে ৩০৭ জনেরই ব্যাটারি নষ্ট পেয়ে তাদের ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছে। উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বলছে মোট ৭৩৬টি গ্রাহকের সোলার প্যানেল পরিদর্শন করে ১২৭টি অনিয়ম পাওয়া যায়। ২১২৭টি ব্যাটারি নষ্ট পেয়েছে তারা। যা পরিবর্তনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এর আগে গ্রাহকের আঙ্গিনায় সেলার প্যানেল নষ্ট পেলে ওই গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিল বিদ্যুত বিভাগ। তবে গ্রাহকের আঙ্গিনায় সোলার প্যানেল স্থাপনে অনিয়ম পেলেও কোন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই। সাধারণত এই পন্থায় গ্রাহকের আঙ্গিনায় স্থাপন করা সোলার প্যানেলের বিদ্যুত ব্যাটারিতে সঞ্চিত থাকে। সেই বিদ্যুত রাতে ব্যবহার করে গ্রাহক। তবে এই পদ্ধতিতে গ্রাহক যে পরিমাণ বিদ্যুত পান তা থেকে ব্যাটারির দাম বাদ দিলে খুব বেশি লাভ হয় না গ্রাহকের। এছাড়া তিন থেকে চার বছর পরপর গ্রাহককে ব্যাটারি বদল করতে হয়। এতে করে গ্রাহক আগ্রহ হারায়। সরকার সম্প্রতি ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের জন্য নেট মিটারিং পদ্ধতি চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে একজন গ্রাহক নিজের সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবহার অতিরিক্ত বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করে। অতিরিক্ত বিদ্যুত এনার্জি ব্যাংকে জমা থাকে রাতে ওই বিদ্যুত আবার গ্রিড থেকে ফেরত দিয়ে দেয়া হয়। এতে করে ওইসব গ্রাহকের বিদ্যুত বিল অন্তত ৪৫ ভাগ পর্যন্ত কম আসছে। এখানে ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে গ্রাহকের ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ছোট বিদ্যুত গ্রাহককে এই পদ্ধতি সংযুক্ত করা হচ্ছে না। দেশে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুত নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ৮৩১ জন। এমন গ্রাহক সব থেকে বেশি রয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি)।
×