ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সড়কে প্রাণ গেল ৩৪ জনের

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ৮ জুন ২০১৯

সড়কে প্রাণ গেল ৩৪ জনের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের ছুটিতে গত চারদিনে দেশের বিভিন্নস্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে সিরাজগঞ্জে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নয়জন ও মাগুরা তিনজন এবং ফরিদপুরে পাঁচজন রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জেলায় দুই ভাই, কলেজছাত্র এবং নারীসহ ১৭ জন নিহত হয়। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা এক শ’র কাছাকাছি। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদ দাতাদের। জানা গেছে, ঈদের ছুটির তিনদিনে সিরাজগঞ্জের বিভিন্নস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৯ জন নিহত হয়েছেন। জেলার উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে হরিণচড়া বাজার এলাকায় ৬ জুন বৃহস্পতিবার সকালে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালকসহ এক ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার কলেন সরদিয়া গ্রামের অগ্রণী ব্যাংকের এজিএম এমারত হোসেন (৪২) এবং প্রাইভেটকার চালক রুবেল (৪৫)। ব্যাংক কর্মকর্তা এমারত হোসেন বেলকুচি উপজেলার শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রাইভেটকারে করে ফরিদপুরের দিকে যাচ্ছিলেন। তারা হরিণচড়া এলাকায় পৌঁছলে গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে প্রাইভেটকারটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই এমারত মারা যায়। আহত চালক রুবেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়। ৫ জুন বুধবার রায়গঞ্জ উপজেলায় পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও হেলপারসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কের ভুইয়াগাঁতী, তবারিপাড়া ও ষোল মাইল এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে-নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা ফারুক (৪০) ও চন্দনের (৩৮) নাম জানা গেছে। বাকি হতাহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। ৪ জুন সোমবার গভীররাতে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের রায়গঞ্জ উপজেলার ষোলমাইল নামকস্থানে একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ৪ নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছে। বাসটি গাজীপুরের কোনাবাড়ি থেকে যাত্রী নিয়ে রংপুর যাচ্ছিল। পথে ঘটনাস্থলে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে উল্টে যায়। এতে চারজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়। নিহত চার নির্মাণ শ্রমিক হলেন- গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কুটিপাড়া গ্রামের হামিদুল ইসলাম (৩৪), একই উপজেলার তালুক সর্বানন্দ গ্রামের শাহজাহান আলী (৩৫), কিছমত-হালুদিয়া গ্রামের ফজলুল হক (৩৫) এবং রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার কিমাতপুর-মহুরীপাড়ার আতাউর রহমান (৩২)। ফরিদপুর ॥ ঈদের দিন সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় ফরিদপুরে প্রাণ হারালেন পাঁচজন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ২২ জন। বুধবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে ফরিদপুর সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদী রেল গেট এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী এ কে ট্রাভেলস এর একটি বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে একটি গাছে গিয়ে আঘাত করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পাঁচজনের মধ্যে চারজনেরই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয়। তারা হলেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুরাইচ ইউনিয়নের কোনাগ্রামের শাহাবুদ্দীন মৃধা (৩৫), একই জেলার বোয়ালমারী উপজেলার গুনবাহা ইউনিয়নের ফেলানগর গ্রামের নয়ন শেখ (২২), একই জেলার মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মাঝকান্দি গ্রামের সুরমান মোল্লা (৩২), মাগুরা জেলার শালিকা উপজেলার পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের মালেক মাঝী (৪৮)। এছাড়া আহতদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলঝরা গ্রামের শাহরীয়ার আসাদকে (২৫) মৃত বলে ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় আহত বাকি ২২ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে। ফরিদপুর দমকল বাহিনীর জ্যেষ্ঠ স্টেশর কর্মকর্তা নূরুল আলম দুলাল জানান, ঢাকা থেকে এ কে ট্রাভেলস এর ওই বাসটি খুলনা যাচ্ছিল। বাসটি ফরিদপুরের ধুলদী এলাকায় ধুলদী রেলগেট পার হওয়ার সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাসটি মহাসড়কের পূর্বপাশে একটি গাছে সজোড়ে আঘাত করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এর ফলে বাসটি সড়কের মাঝামাঝি ঘুরে যায়। কানাইপুর হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে নিহত যাত্রীদের লাশ তাদের ফাঁড়িতে নিয়ে রাখেন। অপরদিকে দমকল বাহিনীর সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। দুর্ঘটনার ফলে দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি সড়কের মাঝে আড়াআড়িভাবে পড়ে থাকায় ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় পুলিশ বাসটি সরিয়ে দিয়ে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। বরিশাল ॥ ঈদ-উল-ফিতরের দিন দুপুর দুইটার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র তাওহিদুল ইসলাম (২২) নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও দুইজন। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি গ্রামে। নিহত তাওহিদুল ইসলাম ওই গ্রামের আব্দুস ছালাম মৃধার পুত্র ও ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঈদের ছুটিতে সে বাড়িতে এসেছিল। বাগেরহাট ॥ মোরেলগঞ্জে দ্রুতগামী দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে স্বপন সাহা (২৫) ও সাওন খান ( ২৮) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ২ জন। বুধবার রাতে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের মোরেলগঞ্জের মহিশপুরা ফাঁড়ির কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে নিহত স্বপন সাহা পিরোজপুর পৌরসভার কুমারখালী এলাকার মহাদেব সাহার ছেলে এবং সাওন খান একই এলাকার আবজাল খানের ছেলে। আহত অপর ২ জনকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি ডিসকভার মোটরসাইকেল আটক করেছে পুলিশ। বগুড়া ॥ ঈদের পরের দিন বৃহস্পতিবার বগুড়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। নিহতরা হলো- বাস চালক শহিদুল(৩৫) ও মোটরসাইকেল চালক আইনুল ম-ল(২২)। আহতদের বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, বেলা ১১টার দিকে বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দশমাইল এলাকায় বগুড়া শহরের দিকে আসা করতোয়া গেটলক পরিবহনের সঙ্গে ঢাকাগামী অপু ক্লাসিক নামে একটি কোচের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে করতোয়া গেটলক বাস রাস্তার পার্শ্বে উল্টে যায়। দুর্ঘটনায় ১৯ জন আহত হয়। এদের মধ্যে বাসচালক শহিদুল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অপরদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের নওদাপাড়া এলাকায় শহরের দিকে আসা একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে মাহস্থানের দিকে যাওয়া একটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ভোলা ॥ বোরহানউদ্দিনে ঈদের দাওয়াত খেয়ে মোটরসাইকেলে যোগে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ইকবাল (২৬) ও সোহাগ (২০) নামে দুই ভাই নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভোলা- চরফ্যাসন সড়কের বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বাস ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র জানান, দাওয়াত খেয়ে ইকবাল ও সোহাগ নামে ২ ভাই মোটরসাইকেল যোগে বোরহানউদ্দিন থেকে দৌলতখান যাচ্ছিল। রূপগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে মুখোমুখি সংঘর্ষে নারীসহ ৪ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আরও ৬ জন আহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে উপজেলার তারাব পৌরসভার কর্নগোপ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার সম্বুরপুর এলাকার আমিন মিয়ার স্ত্রী রিনা খাতুন (৩৯) ও পিরোজপুর এলাকার মিজান মিয়ার স্ত্রী আছমা বেগম। বাকি দু’জনের নাম পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউবাগান স্পটে ভাড়াটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চালক সুজন ওরফে ইউনুচ (১৯) নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পর্যটক হৃদয় খান। শুক্রবার সকাল ছয়টায় সৈকতে ভ্রমণকালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। হৃদয়কে শঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত ইউনুচের বাড়ি কুয়াকাটা পৌরসভায়। আহত হৃদয়ের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। ঝিনাইদহ ॥ মহেশপুর উপজেলার খোর্দ্দ খালিশপুরে ঈদের দিন সকালে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রানা (২৫) ও বিপুল (২৬) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছে। সে সময় আহত হয়েছে ফিরোজ নামে আরও এক যুবক। নিহত রানার বাড়ি জীবননগর উপজেলার বাড়ান্দি গ্রামে ও বিপুলের বাড়ি কোটচাঁদপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। গফরগাঁও, ময়মনসিংহ ॥ গফরগাঁওয়ে পিকআপ-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে নবী হোসেন(৪০) নামে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেলে উপজেলার গয়েশপুর-কান্দিপাড়া সড়কে। স্থানীয় লোকজন পিকআপ চালককে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন। লক্ষ্মীপুর ॥ কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কের উত্তর চর লরেঞ্চ এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী মোঃ আবুল বাশার (৩০) নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও দু’জন। নিহত আবুল বাশার কমলনগর উপজেলার চর মার্টিন গ্রামের সুলতান আহমেদের ছেলে এবং মুন্সিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী। পাবনা, ঈশ্বরদী ॥ শুক্রবার বিকেলে দাশুড়িয়া -পাকশী বিশ্ব রোডের জয়নগরের তামান্না ফিলিং স্টেশনের কাছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারিয়া(২২) নামের এক গৃহবধূ নিহত এবং ওয়াহেদ (২৮) আহাদ(৬ মাস) সাকিল(২০) সোহেল (২২) আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ওয়াহেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মাগুরা ॥ মাগুরায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পিতা-পুত্রসহ তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো মাগুরা সদর উপজেলার লক্ষ্মীকান্দর গ্রামের বলরাম বসাকের পুত্র কেষ্ট বসাক (৩২), শাম্য বসাক (৫) এবং অপর মোটরসাইকেল আরোহী সোহাগ মোল্লা (৩৫)। নিহত সোহাগ মোল্লা জেলার শালিখার সানি আড়পাড়া গ্রামের ওহাব মোল্লার পুত্র। কেষ্ট বসাক ও শাম্য বসাক সম্পর্কে পিতা-পুত্র।
×