ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোন এক সময় জনগণ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেবে

প্রকাশিত: ১০:০৯, ৮ জুন ২০১৯

  কোন এক সময় জনগণ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নির্বাচনে ভরাডুবি হলেও হাল ছাড়েনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মোর্চা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এখনও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন, জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলে আসছেন ফ্রন্টের নেতারা। তারা আশাবাদী কোন এক সময় হলেও জনগণ তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনের জন্য মাঠে নামবে। বৃহস্পতিবার ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত এই জোটের শীর্ষ নেতা ও বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে কোন বিভক্তি নেই দাবি করে এই জোটের কলেবর আরও বাড়িয়ে এ বছরই আন্দোলন জোরদারের কথা বলেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই আহ্বায়ক। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে নেতৃত্বের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে শরিকদের অনেকেই জোট ছাড়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ইতোমধ্যে। এ নিয়ে যখন জোটে নানা প্রশ্ন, কানাঘোসা সে ক্ষেত্রে সবাইকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া অমূলক কিছু নয়। নানা প্রশ্ন আর প্রতিবন্ধকতা থাকলেও স্বপ্ন দেখেন কামাল হোসেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আরও দলকে জোটে ভেড়ানোর পরিকল্পনা জানিয়ে কামাল বলেন, আমাদের লক্ষ্য জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা, আর সব দল যারা সমমনা, তাদের সঙ্গে নেয়া। সেই কাজটা আমাদের অব্যাহত আছে এবং আরও জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই ধরনের একটা স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে জনগণের ঐক্য প্রয়োজন এবং সচেতন রাজনৈতিক দলগুলো যারা আছে, তাদের ঐক্য অপরিহার্য। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি কামালের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি ও গণফোরাম ছাড়াও রয়েছে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও নাগরিক ঐক্য। নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মাত্র আটটি আসন পায় ফ্রন্ট। এর মধ্যে সাতজন সাংসদ শপথ নিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেয়ায় তার আসন শূন্য ঘোষণা করে উপ-নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ওই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর ফের সংসদে যোগ দেয়ায় বিএনপির আগের জোটে যেমন ভাঙন দেখা দিয়েছে, তেমনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যেও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী দেড় মাসের সময় দিয়ে জোট ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন, অসন্তোষ জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না। ঐক্যফ্রন্ট ভাঙছে কি না- এই প্রশ্নে কামাল বলেন, মোটেই না। আমরা আগামী ১২ তারিখে বসছি আবার। আমাদের কথা হলো আমরা বসে পুরো কৌশলটা ঠিক করে মাঠে নেমে যাই, ঐক্য আরও সুসংহত করি। উনি (কাদের সিদ্দিকী) আমাদের ঐক্যের অন্যতম সাথী। তিনি প্রশ্নগুলো করতে পারেন। আমরা খোলামন নিয়ে ঘণ্টা-দুয়েক তার সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা ১২ তারিখ বসে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসতে পারব। গণফোরাম সাধারণ সম্পদকের পদ থেকে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সরিয়ে দেয়ার পর তিনিও অসন্তুষ্ট বলে খবর বেরিয়েছে। তিনিও সংসদে যোগ দেয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। বেইলি রোডে গণফোরাম সভাপতির বাড়িতে এই অনুষ্ঠানের শেষের দিকে মন্টু উপস্থিত হলে কামাল বলেন, ‘আরে আরে মন্টু সাহেব, ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক।’ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর গণফোরামের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া তার আসন ছেড়ে দিয়ে নতুন কমিটির সদস্য মন্টুকে বসতে দেন। গণফোরামের সঙ্গে মন্টুর দূরত্ব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে দলের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, আপনারা মিডিয়া এটা তৈরি করেছেন। মন্টুর সঙ্গে গণফোমের কোন বিরোধী বা দূরত্ব হয়নি। হওয়ার কথাও নয়। আমি একে অপরের সঙ্গে আছি। থাকব। কামাল হোসেন তখন হাসতে হাসতে বলেন, আপনারা তৈরি করেন, এবার এটা থেকে আপনারা মুক্ত করতে পারেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এই দাবি সরকার না মানলে পরবর্তী কর্মকৌশল কি হবে- সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কামাল বলেন, তারা কর্মকৌশল তৈরি করছেন। ঐক্য সুসংহত করে এই বছরেই আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছেন। গণতান্ত্রিক যে ব্যবস্থা হওয়ার কথা, তা থেকে দেশের আজ মানুষ বঞ্চিত। সে জিনিসটাকে যত দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায়, দেশের নিয়ন্ত্রণ জনগণের হাতে নিয়ে আসা যায়, এটাই আমাদের মূল্য লক্ষ্য। কামাল বলেন, আমি মনে করি এই বছরের মধ্যে জনগণের মধ্যে ঐক্যকে আরও সুসংহত করে দেশে আরও প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কাজে আমাদের সবাইকে কাজে নেমে দাবি আদায় করতে হবে। গণফোরামের নেতা আবু সাইয়িদ, মহসিন রশিদ, সিদ্দিকুর রহমান, আহমেদ আমীন আফসারী, লতিফুল বারী হামিম প্রমুখ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×