ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-হেলসিঙ্কি

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৮ জুন ২০১৯

 জলবায়ু ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা-হেলসিঙ্কি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিস্তোর মধ্যে বৈঠকে বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ড মঙ্গলবার জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা লেখক (সচিব) মোঃ নজরুল ইসলাম ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সরকারী বাসভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে যাবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি মোকাবেলায় তার সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নিজের সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্স ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করেছেন। শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূল বরাবর সবুজ বেষ্টনী নির্মাণ এবং স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রভাবগুলো মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবগত করেন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ঘটলে বাংলাদেশ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাস থেকে ক্ষতি হ্রাস করার জন্য বৈশ্বিক সতর্কবাণী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন। রোহিঙ্গা বিষয়ে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং রোহিঙ্গা জনগণের বিপুলসংখ্যক লোককে আশ্রয় প্রদান করা খুব কঠিন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, মিয়ানমার চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরও রোহিঙ্গা জনগণকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নির্বাসনের পরেও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়নি। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- বাংলাদেশ বন্ধুত্বের এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক বজায় রাখে। প্রধানমন্ত্রী এই বছর ৮.১৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সূচক বর্ণনা করেছেন এবং ফিনল্যান্ডের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তার সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ফিনল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা যদি চান তবে তাদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকতে পারে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরপরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তিনি ফিনল্যান্ডের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফিনল্যান্ড দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও পরে বাংলাদেশে যে পরিমাণ সহায়তা ও সহযোগিতা করেছিল, তা আমরা সবসময় মূল্যবান বলে মনে করি।’ প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে তার কারাবাসের বর্ণনা দেন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের সঙ্গে জাতির পিতার হত্যার পর নিজের সংগ্রাম করার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে তিনি জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং দেশের জনগণই তাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চারবার ভোট দিয়েছেন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করার জন্য ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানান এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হককে আইওএমের মহাপরিচালক নির্বাচিত করার জন্য ফিনল্যান্ডের সমর্থন কামনা করেন। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট তার বাসভবনে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান।প্রধানমন্ত্রী সেখানে সফরকারীদের বইয়ে স্বাক্ষর করেন। সোমবার বিকেলে পাঁচদিনের সরকারী সফরে শেখ হাসিনা ফিনল্যান্ডে পৌঁছেছেন।
×