ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কার্ডিফ আর ইংল্যান্ড বলেই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ৮ জুন ২০১৯

কার্ডিফ আর ইংল্যান্ড বলেই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপ জয়ের দাবিদার এবার ইংল্যান্ড এবং সবচেয়ে ফেবারিট দলও! নিজ দেশে খেলা। আবার শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে অন্যতম দলও তারা। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করছেন এবার কোন না কোনভাবে বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ জিতে যেতে পারে! কিন্তু এটাও সবার জানা, ফেবারিট বলতে যা বোঝায়, সেই তকমা গায়ে জড়িয়ে নেই বাংলাদেশের। তাতেই বোঝা যাচ্ছে ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশ দলের মধ্যে পার্থক্য আছে। কিন্তু ম্যাচটি যখন কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে আর বিশ্বকাপের খেলা, সেই খেলা আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, সেখানে কোন পার্থক্যই যেন বাংলাদেশের সামনে বড় হয়ে দাঁড় হতে পারছে না। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে আজ তাই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসীও বাংলাদেশ। কার্ডিফ সবসময়ই বাংলাদেশকে দু’হাত ভরে শুধু দিয়েছে। এ মাঠে বাংলাদেশের সাফল্য শতভাগ। দুই ম্যাচের দুটিতেই জয় মিলেছে। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের স্মৃতি মিলেছে। সেই জয় দিয়ে বিশ্ব কাঁপিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়টি পেয়ে কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ সাফল্যে ভেসেছেন টাইগাররা। সেমিফাইনালে খেলেছে। দুই জয়ের স্মৃতিই বাংলাদেশকে সবসময়ই কার্ডিফে উজ্জীবনী শক্তি দিয়ে যায়। কার্ডিফে সুখ স্মৃতির সঙ্গে আজ দুপুর সাড়ে তিনটায় যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে খেলতে নামবে বাংলাদেশ তখন টাইগারদের সঙ্গে চাঙ্গা মানসিকতা এবং আত্মবিশ্বাসও থাকবে। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়ে ২১ রানে জিতেছে। আবার স্কোরবোর্ডে কম রান যোগ করেও নিউজিল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ২৪৪ রান করেও নিউজিল্যান্ডকে জিততে ৪৭.১ ওভার খেলতে হয়েছে। আবার ৮ উইকেটও শেষ হয়ে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডকে চাপে রেখেছে বাংলাদেশ। লড়াই করে হেরেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই লড়াকু মানসিকতা টাইগারদের উজ্জীবিত করছে। ম্যাচটি যেহেতু বিশ্বকাপের আর প্রতিপক্ষ দলটি যেহেতু ইংল্যান্ড, এখানেও ফেবারিট তকমার উর্ধে যেন বাংলাদেশকে রাখছে সবাই! ইংল্যান্ডকে যে টানা দুই বিশ্বকাপে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দেশের মাটিতে ও ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবারও যদি বাংলাদেশ জিতে তাহলে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক জয় হবে। টানা দুই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে কুপোকাত করাতেই আজকের ম্যাচটিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকছে না। ওয়ানডেতে গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হারের পর থেকেই ইংল্যান্ড দলটি খোলস ছেড়ে বের হয়েছে। এতটাই তারা হতাশ হয়েছিল যে আধুনিক ক্রিকেটের সঙ্গে পুরোপুরি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এখন ৩০০ রানের বেশি করা যেন ইংল্যান্ডের কাছে দুধভাত! এবার বিশ্বকাপে যেমন নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১১ রান করে জিতেছে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে। তবে সেই ম্যাচেও ৩৪৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৩৩৪ রান করে ফেলে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, এবার বিশ্বকাপের রানের খনির দল হতে চলেছে ইংল্যান্ডই। বাংলাদেশও কী কম! ৩৫০ রানের যে গোলকধাঁধা তাতে মিশে যেতে পারবে কিনা বাংলাদেশ, তাই নিয়ে সংশয় ছিল। প্রথম ম্যাচে ৩৩০ রান করে বুঝিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশও খুব সহজেই পারে। দ্বিতীয় ম্যাচে যদিও ২৪৪ রানের বেশি করা যায়নি। তবে সেই ম্যাচেও মুশফিকুর রহীমের রানআউট, তামিম ইকবালের অহেতুক ক্যাচ আউটগুলো যদি না হতো তাহলে বড় স্কোরই হয়তো দেখা যেত। বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা যে এখন ওয়ানডেতে মুহূর্তেই সেরাদিন এনে ফেলতে পারেন, তা প্রতিটি প্রতিপক্ষেরই জানা হয়ে গেছে। ইংল্যান্ড দলটিতো আরও বেশি করে জানে। তারাই যে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী! তাইতো অভিজ্ঞ পেসার লিয়াম প্লানকেট বলেই দিয়েছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে বাংলাদেশ কিভাবে জিতেছে, আমরা তা দেখেছি। এটা কোন চমক, অঘটন ছিল না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘বাংলাদেশ এখন শক্তিশালী দল। তারা (বাংলাদেশ) যেদিন ফর্মে থাকে সেদিন যে কোন দলকে হারিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখে। আর বিশ্বকাপে এখন আর অঘটন বলে কিছু নেই। আমার মনে পড়ে সেই ২০১০ সালে ইংল্যান্ডকে (ব্রিস্টলে) একবার হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই জয়টাকে অঘটন বলা যায়। কিন্তু এখন আর না।’ প্লাঙ্কেটের এমন কথাতেই স্পষ্ট প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রত্যাশা অনুযায়ীই জিতেছে এবং বাংলাদেশকে নিয়ে তারাও ভাবনায় আছে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগানতো একটি ম্যাচ হেরে ভালই হয়েছে মনে করছেন। তাতে দোষত্রুটিগুলো ধরা পড়েছে। তা নিয়ে কাজও করা গেছে। যা বাংলাদেশের ম্যাচে কাজেও লাগাতে চান। তিনি বলেছেনও, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে যা হয়েছে, ভালই হয়েছে। কার্ডিফে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ইতিবাচকই হয়েছে।’ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে ইংল্যান্ডও। আবার বাংলাদেশের মতোই প্রথম ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় ম্যাচ হেরেছে। দুই দলই এখন সমান অবস্থানেই আছে। প্রথমটিতে জয়, দ্বিতীয়টিতে হার হয়েছে। আজ যে দল জিতবে তারাই এগিয়ে যাবে। কিন্তু জয় কী বাংলাদেশই দেখতে পাচ্ছে না? কার্ডিফে খেলা আর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দলটি প্রতিপক্ষ মানেই যে বাংলাদেশ প্রেরণার জায়গা খুঁজে পায়। মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার ভিত পেয়ে যায়। কার্ডিফের সুখস্মৃতি বাংলাদেশের সঙ্গে আছে। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে এর আগে টানা দুইবার হারানোর স্মৃতিও তরতাজা। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করার মানসিক ভিতও আছে। ইংল্যান্ড ফেবারিট, খেলা ইংল্যান্ডের মাটিতে, ইংল্যান্ড শক্তিশালী দল। ইংল্যান্ডের এই মজবুত ভিতগুলো এখন মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা নাড়িয়ে দিতে পারলেই হলো। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেনও, ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যেতে চাই। আশা করছি কার্ডিফে ফিরে (জয়ের ধারাবাহিকতায়) আসতে পারব।’ নিউজিল্যান্ডের লড়াকু ম্যাচের স্মৃতি তুলে ধরে মাশরাফি জানান, ‘আমাদের নিজেদের একটা প্রতিজ্ঞা ছিল যে আমরা ২৩০ করি বা ২৪০, লড়াই করবই। শুধু এই ম্যাচ নয়, পরের ম্যাচে আরও খারাপ হতে পারে। সব দলেরই খারাপ দিন আসছে টুর্নামেন্টে। আমরা যে স্কোরই গড়ি, ডিফেন্ড করার চেষ্টা করব। শরীরী ভাষা যেন ঠিক থাকে, যেটা অনেক সময় আমাদের ঘাটতি থাকে।’ এই লড়াই করার মানসিকতা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ কার্ডিফে খেলবে। যেটি বাংলাদেশের সৌভাগ্যের মাঠ ধরা হয়। আবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা মানেই জয় ভাবনায় আসে। কার্ডিফে খেলা এবং বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড প্রতিপক্ষ মানেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসও থাকে তুঙ্গে। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে এখন জয় তুলে নেয়া গেলেই হলো।
×