ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ী ছন

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ৮ জুন ২০১৯

 আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ী ছন

আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ী ছন এখন বিলুপ্তির পথে। মাত্র ১৫-১৬ বছর আগেও দেশের গ্রামাঞ্চল কিংবা পাহাড়ী অঞ্চল প্রায় সবখানেই ঘরের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার হতো ছন। তীব্র গরমের সময় ছনের ঘর ছিল খুবই আরামদায়ক। গ্রামের প্রায় প্রত্যেকটি ঘরেই দেখা যেত ছনের ছাউনি। তখন ছন আহরণ ও বিক্রি করে সংসার চালাত অনেক দরিদ্র পরিবার। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই ঘরের পুরনো ছনের ছাউনি ফেলে দিয়ে নতুন ছন লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করত সমাজের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষরা। বিশেষ করে মাটি ও বেড়ার ঘরে ব্যবহার হতো পাহাড়ী ছন। বর্তমানে ২-১ জন অসচ্ছল মানুষই কেবল ছনের ব্যবহার ধরে রেখেছেন। ছন কি? বর্তমান প্রজন্মের কাছে এখন অপরিচিত একটি বস্তু। ফটিকছড়ি উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের কোথাও এখন ছনের ছাউনি তেমন চোখে পড়ে না। টিনসহ ঘর তৈরির অপরাপর জিনিসপত্র সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ সেদিকে ঝুঁকে পড়ায় ইতিহাসে স্থান হতে যাচ্ছে পাহাড়ী ছন। ফলে হাজার বছরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরম বন্ধু ছনের অস্তিত্ব এখন বিলীন হতে বসেছে। এক সময় ফটিকছড়ি উপজেলার পাহাড়ী অঞ্চল জঙ্গল খিরাম, জঙ্গল শোভনছড়ি, সত্তা, মানিকপুর, বাগান বাজার, দাঁতমারা লট উদালিয়াসহ গহীন অরণ্যে প্রচুর ছন চাষ হতো। তখন দলে দলে লোকজন ছন খোলায় ছন কাটতে যেত। বাংলা বছরের আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ছন আহরণ করা হয়ে থাকে। আহরণের পর পর্যাপ্ত রোদে ১৫-১৬ দিন শুকিয়ে নিয়ে তা বিক্রির উপযুক্ত করা হতো। এর পরই তা ব্যবহার উপযোগী হয়। বর্তমানে ছনের ব্যবহার কম হওয়ায় ধীরে ধীরে এর চাহিদা কমে যাচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় আগের মতো ছন চাষ করা হচ্ছে না। অথচ ঐতিহ্যগত এবং পরিবেশগত কারণে ছনের চাষ বৃদ্ধি করা উচিত বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। উপজেলার শোভনছড়ির আবু তাহের জানান, ১০-১২ বছর আগেও এলাকায় প্রচুর ছনের ছাউনির ঘর দেখা যেত। তিনি আরও বলেন, ছনের ছাউনির ঘর হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ হলো অগ্নি ঝুঁকি। এক সময় ছনের ঘরে প্রচুর অগ্নিকান্ড হতো। তা ছাড়া ছন পচনশীল হওয়ায় প্রতিবছরই ঘরের চালায় নতুন ছন লাগাতে হয়। ফলে মানুষ আস্তে আস্তে সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে টিনের ছাউনির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তাছাড়া বর্তমানে টিন অতীব সহজলভ্য পণ্য হয়ে উঠেছে। ফলে টিনের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় বিভিন্ন এলাকার লোকজন এ উপজেলার নাজিরহাট ও বিবিরহাটে এসে ছন ক্রয় করত। তবে এখনও অল্প-বিস্তর ছন বিক্রি হয় উপজেলা সদরে। বর্তমানে প্রতি ভার ছন প্রকার ভেদে ৭শ’ থেকে, ৮শ’ টাকায় বিক্রি হয়। চাষীদের মতে, ঢেউটিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ে ছনের উৎপাদন কমে গেছে, ব্যবহারও কমে গেছে। ছন এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। তার পরও প্রামবাংলার অনেক সাধারণ মানুষ এখনও ছনের চালা সংবলিত ঘর ব্যবহার করে পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। ইউনুস মিয়া, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম থেকে
×