ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কালের সাক্ষী খুলনার জোড়া শিব মন্দির

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ৮ জুন ২০১৯

কালের সাক্ষী খুলনার জোড়া শিব মন্দির

তিনশ’ বছরের অধিক পুরনো খুলনার জোড়া শিব মন্দির। রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ভৈরব নদের পাড়ে এই মন্দির অবস্থিত। নানা কারণে দীর্ঘকাল এই মন্দির পরিত্যাক্ত ছিল। ১৯৯৯ সালে শ্রী শ্যামা পূজা (কালী পূজা) অনুষ্ঠানের মাধমে মন্দিরের পনঃসংস্কার ও মন্দিরের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে এখানে নিয়মিত পূজা অর্চনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শিবরাত্রি ঊৎসবে এখানে মানুষের ঢল নামে। কালের সাক্ষী হয়ে অছে খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এই জোড়া শিব মন্দির। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৭০৪ সালে দিওয়ান কৃষ্ণ রাম বসু কর্তৃক এই জোড়া শিব মন্দির তৈরি করে দুটি শিব বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। মন্দিরের পশ্চিম দিকে ঘাট বাঁধানো বিরাট পুকুরসহ সুন্দর বাগান ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ সালে যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হলে মন্দিরের অনেক জায়গা রেলওয়ে নিয়ে নেয়। এতে পরিসর ছোট হয়ে যায় এবং এলকার সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এই সময়কালে মন্দিরের বিগ্রহ দুটি কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। এর অনেক বছর পর রেলওয়ের তৎকালীন এক কর্মকর্তার স্ত্রী কাশি থেকে একটি এবং স্বর্গীয় গোলাপচাঁন্দ মুন্ধরা একটি মূর্তি আনেন। ভক্তরা প্রদান করেন তিনটি মূর্তি। এভাবে পাঁচটি বিগ্রহ দ্বারা মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। রেলওয়ের তরফ থেকে মন্দিরের চারদিকে দেয়াল ও একটি নাঁমন্দির তৈরি করে দেয়া হয়। এখানে শিবরাত্রি উৎসবের সময় বিরাঁ মেলা বসতো। এ উপলক্ষ্যে অষ্টপ্রহরব্যাপী নামসংকীর্ত্তন বা পদাবলী কীর্ত্তনের আয়োজন করা হতো। যাত্রা গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকতো। এক পর্যায়ে এই মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব এস্টেট অব শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দিরের কাছে ন্যস্ত করা হয়। ১৯৬৪ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় মন্দিরটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর পর দীর্ঘকাল মন্দিরটি পরিত্যক্ত এবং সমাজ বিরোধীদের দখলে ছিল। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আনোয়ারুল ইকবালের নেতৃত্বে কুখ্যাত নরঘাতক এরশাদ শিকদার ও সহযোগী সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হওয়ার পর ১৯৯৯ সালে জোড়া শিব মন্দিরসহ সংলগ্ন এলাকা অপরাধী চক্রের কবল থেকে মুক্ত হয়। ওই বছরের ৭ নবেম্বর শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মন্দিরের পুনঃ সংস্কার কাজ কমিটির মাধ্যমে শুরু হয়। খুলনার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সিটি কর্পোরেশন, সরকার, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টসহ সেবাইতদের আর্থিক সহায়তায় মন্দির সংস্কার করা হয়। শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দিরের সেবাইত শ্রী শিউকৃষ্ণ মুন্ধরা এখানে দুটি বিগ্রহ তার স্বর্গীয় পিতা-মাতার স্মরণে প্রদান করেন। বর্তমানে একটি কমিটির মাধ্যমে মন্দিরের কার্য়ক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মন্দিরটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। মন্দির পরিদর্শনের বিভিন্ন সময়ে পর্যটক, ভক্তরা এখানে আসছেন। মন্দিরের পুরোহিত বিশ্বজিৎ কাঞ্জিলাল ভোলা জানান, এখানে বার্ষিক কালী পূজা, সরস্বতী পূজা, প্রতিদিন শিব পূজা ও মনষা পূজা করা হয়। শিবরাত্রি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী উৎসব, চৈত্র সংক্রান্তি উৎসবসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। মন্দির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি দেবী প্রষাদ ঘোষ বলেন, এখানে মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে শিবরাত্রি উৎসব ও চৈত্র মাসের শেষ সোমবার শিব বিগ্রহে জলদান অনুষ্ঠান। কয়েক বছর স্টেট অব শ্রী সত্যনারায়ণ মন্দিরের পক্ষ থেকে এই মন্দিরের পূজা-অর্চনার খরচের জন্য মাসিক অনুদান দেয়া হয়েছে। এর পর থেকে ভক্ত ও শুভার্থীদের অর্থে মন্দিরের যাবতীয় কাজ পরিচালিত হচ্ছে। অমল সাহা, খুলনা অফিস থেকে
×