ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া হলেন তৃতীয় লিঙ্গের অ্যানি

প্রকাশিত: ২৩:৫০, ৫ জুন ২০১৯

এবার মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া হলেন তৃতীয় লিঙ্গের অ্যানি

অনলাইন ডেস্ক ॥ বুকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরার খেতাব জিততে। জিতলেনও। স্বপ্ন যেমন ছিল। আত্মবিশ্বাসও ছিল ভরপুর। মেধার দোসর ছিল পরিবারের ভালোবাসা আর লড়াই করার প্রেরণা। অনীক থেকে অ্যানি হওয়ার জার্নিটা যতটা কঠিন ছিল, তার থেকেও বেশি বিশ্বাস রেখেছিলেন নিজের ওপর। ‘মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯’ প্রতিযোগিতায় ভারতসেরার মুকুট পড়ে এই কথাই বলেছেন জলপাইগুড়ির নয়াবস্তির অ্যানি দত্ত চক্রবর্তী। এলিনা প্রেজেন্টস মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া ২০১৯-এর শেষ বারোতে পৌঁছে অ্যানি বলেছিলেন, 'আমার বিশ্বাস আছে। ভারত সেরার দৌঁড়ে আমি সফল হবোই। এরপরে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করব।' অ্যানির সাফল্যের খবর পৌঁছতেই জলপাইগুড়ির নয়াবস্তিতে খুশির হাওয়া। সদ্যই বিয়ে হয়েছে অ্যানির। কাজেই নতুন বৌমার সাফল্যে আবেগ ধরে রাখতে পারছেন না অ্যানির শাশুড়ি মৌসুমি চক্রবর্তী। গর্বিত স্বামী সাগ্নিকও। অন্যানি জানিয়েছেন, ট্রান্স ইন্ডিয়ার সবকটি স্তরেই বিচারকদের মন জয় করতে পেরেছিলেন তিনি। বিকিনি রাউন্ডেই চূড়ান্ত নির্ণয় হয়ে যায়। ওই রাউন্ডে তাঁকে বিচারকরা প্রশ্ন করেন সুন্দরী প্রতিযোগিতার মুকুট জিতলে ভবিষ্যতে কী করতে চান অ্যানি। বরাবর সমাজ, পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করা অ্যানির সাফ জবাব ছিল, 'আমি যদি ভবিষ্যতে প্রচুর টাকার মালিক হই, তাহলে বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুল খুলব যেখানে আমার মতো তৃতীয় লিঙ্গের পাশাপাশি সাধারণ বাচ্চাদেরও বিনামূল্য পড়াশোনার ব্যবস্থা থাকবে। সমাজের সঙ্গে লড়াইটা যাতে তাদের কাছে সহজ হয় সেটাই চেষ্টা থাকবে আমার।' শরীরে ছেলে হয়ে জন্মালেও মনে তিনি ছিলেন আদ্যোপান্ত নারী। শরীর-মনের এই দ্বন্দ্বে সমাজ ভ্রুকুটি করলেও, সায় দিয়েছিল পরিবার। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের চকভৃগু এলাকার বাসিন্দা অ্যানি। জানিয়েছেন, ছেলে হয়ে জন্মালেও মনের অনুভূতিতে তিনি ছিলেন একজন নারী। ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ যে সহ্য করতে হয়নি, এমনটা নয়। তবে পাশে ছিলেন পরিবারের লোকজন। স্বাধীনভাবে বাঁচার শিক্ষা পেয়েছিলেন মা, বাবার কাছ থেকেই। তাই শেষ পর্যন্ত জয় হয় মনের জোরেই। সার্জারিতে লিঙ্গ পরিবর্তন করে চকভৃগুর অনীক হয়ে ওঠেন অ্যানি। শুরু করেন শিক্ষকতার কাজ। ২০১৬ সালের বর্ষশেষের রাত। সে দিনই সাগ্নিকের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল অ্যানির। জলপাইগুড়ি নয়াবস্তি পাড়ার বাসিন্দা স্বাগ্নিক চক্রবর্তীকে প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন অ্যানি। সম্পর্ক শুরুর আগে নিজের জীবনের রহস্য খুলে দিয়েছিলেন সাগ্নিকের সামনে। সাড়া মিলেছিল সে পক্ষ থেকেও। বছর দুয়েকের প্রেমের পর গত বছর বিয়ে হয় অ্যানি-সাগ্নিকের। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিলেও মডেলিংয়ের প্রতি টান অনুভব করতেন অ্যানি। বলেছেন, 'বিয়ের আগে থেকেই আমি মডেলিং করতাম। পরে স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি মডেলিংও চালিয়ে যাই।' বিয়ের পরে র্যাম্পে হাঁটার তেমন সুযোগ হয়নি। উৎসাহটা প্রথম আসে স্বামীর থেকেই। দিল্লি থেকে জাতীয় স্তরে ‘মিস ট্রান্স ২০১৯’ প্রতিযোগিতায় ডাক পেয়ে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যানিকে। অ্যানির সাফল্যে আজ বাঁধভাঙা খুশির ঢল গোটা জলপাইগুড়িতেই। তবে এখনই আবেগতাড়িত হতে চান না অ্যানি। তাঁর সামনে এখন ভবিষ্যতের হাতছানি। বলেছেন, 'ভারতের গর্ব জিতে এবার লক্ষ্য সুইডেন। সেখানে ভারতের হয়ে সেরার মুকুট জিতব আমিই।' মিস ট্রান্স ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান পাওয়ায় আমি খুব খুশি। সবাই আশীর্বাদ করুন, যাতে আমি আরো এগিয়ে যেতে পারি। জাতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।
×